যে দিনই কোর্টে ডেট থাকে, কমপক্ষে ৪০/৫০ টাকার বাদাম খাওয়া হয়ে যায় রোজিনার। আর ভ্যানচালক বাবার কত টাকা গত চার বছরে খরচা গেছে এই একটা মামলার পিছনে তার খবর কেউ রাখেনি। গ্রামের মেম্বার থেকে শুরু করে থানার লোক; উকিল, মুহরি, পেশকার। পিছনে পিছনে ঘোরার জন্যও আজকাল মানুষকে টাকা দিতে হয়!
আজ সন্ধ্যায় কোর্ট থেকে বাড়ি ফিরেই ঘুমিয়ে পড়েছে রোজিনা। সারাদিনের ক্লান্তির ভারে কখন রাত দুপুর হয়েছে বুঝতে পারেনি। হঠাৎ ক্ষুধার চোটে ঘুম ভাঙে তার। সাথে সাথে ঘুম ভাঙে তার ছোট্ট ছেলেটারও। ছেলেকে ঘুমাতে বলে মাকে ডাকে রোজিনা:
মা, মা! ওঠো তো, ভোক লাইগছে।
এলানি ভাত খাবু?
তোর জমির চাচা আসছিলো, তাকে ভাত খাওয়াইছি।
অগত্যা পানি খায় আর বিড়বিড় করে রোজিনা: মুই তো কইছি, ঐ হারামজাদারে জেলে না পঁচায়া বিয়ে-থোয়া করিম না আর।
এ কথা কানে পড়ে তার বাবার। শান্ত কণ্ঠে স্ত্রীকে বলে ওঠে: উকিল সাইব আইজও কইছে ‘এগারোর ক; যাবৎ জীবন জেল হবে আসামির। চিন্তা করেন না। আর কয়টা দিন ধৈর্য ধরো।’
বুঝলাম। কিন্তু মেয়েটাকে ব্যাচে থাকা লাগবে না? আর কদ্দিন ঘরোত রাখমো এমন করি! বলে ওঠে রোজিনার মা।
হইবে, হইবে, তোকেও ধৈর্য ধরা লাগবে। বিয়ে তো আইজএ দেওয়া যায়। কিন্তু ট্যাহা?
বড় ব্যাটার শ্বশুরে যেটা দিছে? প্রশ্ন করে রোজিনার মা। তাদের বড় ছেলের বিয়েতে যৌতুক পেয়েছিল তিন লাখ টাকা। সে ট্যাহার অর্ধেক তো এই মামলার পিছতে শ্যাষ হইছে!
তাহলে, সামনের কুরবানির ঈদে গরুটা ব্যাচে দ্যাও। মুই গ্রামীণ ব্যাংক থাকি লোন নিবো ৫০ হাজার। হয়া যাইবে। তবু উয়াকে ব্যাচে খাও। আর মোর ভালো নাগে না! জবাব নাই রোজিনার বাবার। মন কাঁদে মেয়ের জন্য। এক জামাই যৌতুকের জন্য প্রচণ্ড মারধর করত। শেষমেশ মেয়ের ডান হাতটা মেরে ভেঙেই ফেলেছে। নতুন ঘরে গিয়ে আবারও যদি কিছু হয় মেয়ের! আশঙ্কা ঘিরে ধরে আঁধারের মতো। তার উপর মায়া জাগে ছোট্ট নাতিটার জন্য। মনের হাল বুঝতে পারে স্ত্রী। সান্ত্বনা দেয়। আমরাই মানুষ করিমো উয়্যাক। তবু মেয়েকে আর ঘরে থোয়া যাবে না। চিল খালি ঘুর ঘুর করে! আল্লাহ না করুক, ফির কখন কী হয়!
স্ত্রীর উদ্বেগ বুঝতে পারে স্বামী। এলাকায় বখাটে ছেলেদের সাংঘাতিক উপদ্রব। শঙ্কায়, লজ্জায় ভারী হয়ে যায় বাবার বুক। মুখে কোনো কথা সরে না। সরে শুধু দীর্ঘশ্বাস!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন