দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষের স্বপ্নের পাদ্মা সেতু চালু হবার পরে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের যাত্রীবাহী নৌযানের ব্যাবসা এখন আশা নিরাশার দোলাচলে। ২৫ জুন উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত এ সেতুটি চালু হবার দিন থেকেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্বম বরিশাল নদী বন্দর সহ পটুয়াখালী ও ভোলা বন্দর ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলা সদর সহ প্রায় ২০টি স্টেশন থেকে রাজধানীমুখি নৌযানগুলোতে ভ্রমনে যাত্রীদের আগ্রহে কিছুটা ভাটা লক্ষ করা যাচ্ছে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী বন্দরে এখন যাত্রীর অপেক্ষায় নৌযানগুলো তির্থের কাকের মত অপেক্ষা করছে। ফলে নৌযান মালিকগন ইতোমধ্যে ডেক থেকে প্রথম শ্রেণী ও ভিআইপি কক্ষগুলোর ভাড়া কমিয়ে যাত্রীদের আগ্রহ বাড়াতে চেষ্টা করেছেন। পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষনে রেখে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছেন নৌযান মালিকগন।
পদ্মা সেতু হয়ে সড়ক পথে বিভাগীয় সদর বরিশালের দুরত্ব ১৬০ কিলোমিটার হলেও নৌপথের দুরত্বও ১৬৫ কিলোমিটারের মত। স্বপ্নের সেতু হয়ে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি ইতোমধ্যে বরিশালÑঢাকা সড়ক পথে ৫শ টাকায় বাতানুকুল বাস সার্ভিস চালু করেছে। বেসরকারী গ্রীন লাইন সাড়ে ৭শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে।
তবে বেসরকারী নৌযান মালিকগন সড়ক পথ থেকে নৌপথে যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে ডেক শ্রেণীর ভাড়া সরকারী নির্ধারিত হারের প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ২শ টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। প্রথম শ্রেণীর একক শয্যার কক্ষের ভাড়া ১৪শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় এবং দ্বৈত শয্যার কক্ষের ভাড়া আড়াই হাজার থেকে দু হাজার টাকায় হ্রাস করা হয়েছে। ভিআইপি শ্রেণীতেও ভাড়া ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত হ্রাস করা হয়েছে।
শুধু বরিশালÑঢাকাÑবরিশাল নৌপথেই প্রায় ২৫টি যাত্রীবাহী নৌযানের রুট পারমিট রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীর সাথে চলাচলকারী নৌযানের সংখ্যা প্রায় ৭০টি। পদ্মা সেতু চালু হবার আগে পর্যন্ত বরিশালÑঢাকা রুটে প্রতিদিন ১৮টি নৌযান নিয়মিত চলাচল করলেও গত সপ্তাহখানেক ধরে উভয়প্রান্ত থেকে গড়ে ৪টি করে ৮টির বেশী নৌযান চলছে না। নৌযান মালিকদের হিসেবে ৩ তলা বিশিষ্ট একটি নৌযানের বরিশালÑঢাকাÑবরিশাল রুটে প্রতি ফিরতি ট্রিপে পরিচালন ব্যায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত ধারন ক্ষমতার ৭৫% যাত্রী না হলে পরিচালন ব্যায়ও উঠবে না। কিন্তু যাত্রীর অভাবে গত ৮ দিন ধরে ইতোপূর্বে নিয়মিত চলাচলকারী প্রায় অর্ধেক নৌযান বন্ধ রাখা হচ্ছে।
তবে বেসরকারী নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন (যাত্রী চলাচল) সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বরিশালের সুন্দরবন নেভিগেশন লিমিটেড-এর সত্বাধিকারী সাঈদুর রহমান রিন্টু জানিয়েছেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছি। প্রথম দিকে সাধারন মানুষের পদ্মা সেতুর মত বৃহত এ স্থাপনা দেখার আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে। নৌপথে সময় একটু বেশী লাগলেও রাতে ঘুমিয়ে সকালে ঢাকায় পৌছে কাজ সেরে আবার রাতে বরিশালেন ফিরতি নৌযানে আসতে পারছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে ভাড়াও অনেক কম। তাই অদরু ভবিষ্যতেই যাত্রীরা সড়ক পথের মত আগের মতই নৌপথও ব্যবহার করতে শুরু করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে ৭ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত বিশেষ সার্ভিস চালাবে বেসরকারী নৌযান মালিকগন। এরপরেই সব বেসরকারী নৌযান মালিকগন বৈঠক করে পরবর্তি কর্ম পরিকল্পনা স্থির করবেন বলে জানা গেছে।
তবে বেশীরভাগ নৌযান মালিকগন এখনো সম্পূর্ণ হতাশ না হলেও আগের মত নৌপথে রমরমা ব্যাবসা আসবে না বলেই মনে করছেন। পরিস্থিতি ধীরে অনুকুলে আসবে বলেই এখনো সম্পূর্ণ নিরাশ হতেও রাজি নন দীর্ঘদিনের পরিক্ষিতি এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকগন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন