জিততে হলে গড়তে হতো রেকর্ড, ক্যারিবিয়ানে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। গড়তে হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। তবে এসবের কিছুই যেন ছুঁলো না বাংলাদেশকে। উল্টো বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আরেকটি দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের পসরা মেলে অসহায় আত্মসমর্পনই করল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। গতপরশু রাতে বাংলাদেশের হারটি ৩৫ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৬ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৫৮ তুলতে পারে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। পাঁচ বছর পর ডমিনিকায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার ম্যাচ ১৩ ওভার হয়েই ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। পরের ম্যাচে ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ জেতার পর দিল ল্যাপ অব অনার।
জিততে হলে করতে হবে দুইশর কাছাকাছি রান। অথচ ইনিংসের মাঝপথে টানা ৪৫ বলে নেই কোনো বাউন্ডারি! বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র পরিষ্কার এতেই। লক্ষ্য কঠিন ছিল বটে, কিš‘ চেষ্টা তো করতে হবে। সেই তাড়নাই দেখা গেল না। ব্যাটিং দেখে মনে হলো যেন সম্মানজনক পরাজয়ের জন্য খেলছে দল। শেষ পর্যন্ত সেটিও খুব পারা গেল না, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতল অনায়াসেই।
বছর পাঁচেক আগে ডমিনিকা নামের অনিন্দ্য সুন্দর দ্বীপটিকে বিধ্বস্ত করেছিল হারিকেন ‘মারিয়া।’ ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়েছিল এই স্টেডিয়ামও। সেই আঙিনায় হারিকেন বয়ে যায় আবার। তবে এবার তা আসে দ্বীপবাসীর জন্য বিনোদন নিয়ে, গ্যালারির উৎসবে তা চড়ায় বাড়তি রঙ। হারিকেনের নাম যে ‘রভম্যান পাওয়েল!’ এই বছর দারুণ ফর্মে থাকা এই ব্যাটসম্যান খেলেন ৬ ছক্কায় ২৮ বলে ৬১ রানের ইনিংস। ফিফটি উপহার দেন ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং। আগের দিন যে উইকেটে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ, সেখানেই এ দিন ২০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান।
রান তাড়ায় বাংলাদেশ ধুঁকতে থাকে শুরু থেকে। দীর্ঘসময় ধরে উইকেটে মিইয়ে থাকা সাকিব আল হাসান শেষ দিকে কিছু বড় শট খেলে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমান। বাংলাদেশ ২০ ওভারে করতে পারে ৬ উইকেটে ১৫৮ রান। ম্যাচের ভাগ্য আসলে নির্ধারিত হয়ে যায় অনেক আগেই। বাংলাদেশ পারেনি কোনোরকম চ্যালেঞ্জ জানাতেই। ৫২ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব। তবে সপ্তদশ ওভারেও তার রান ছিল ৩৭ বলে ৩৫। সব আশা শেষ হয়ে যাওয়ার পর দ্রুত কিছু রান তোলেন তিনি।
লক্ষ্য তাড়ায় মাঝপথে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ৭৭ রান। জয়ের জন্য সেসময় চাই ৬০ বলে আরও ১১৭ রান। হাতে জমা ৭ উইকেট। থিতু হয়ে ক্রিজে থাকা সাকিব ও আফিফের পর উইকেটে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন নুরুল হাসান সোহান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও শেখ মেহেদী হাসান।
বলের সঙ্গে রানের চাহিদার পার্থক্য বিস্তর হলেও সংস্করণটা টি-টোয়েন্টি বলে আশাবাদী হওয়ার প্রয়াস থাকে। এমন অব¯’া থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় তুলে নেওয়ার আছে বহু নজির। কিš‘ বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আদৌ কোনো ইতিবাচক ভাবনা তখন দোলা দিয়েছিল কি? প্রশ্নটিতে সম্ভবত ‘না’ উত্তর মিলেছে। ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণ টেস্টের মতোক্ষুদ্রতম সংস্করণ টি-টোয়েন্টির ঘরানার সঙ্গেও যে এখনও মানিয়ে নেওয়া হয়নি টাইগারদের!
ওই ৬০ বলে বাংলাদেশ আরও ৩ উইকেট খুইয়ে যোগ করতে পারে আর ৮১ রান। অর্থাৎ পরিকল্পনাহীন ব্যাটিংয়ে অব¯’ার খুব বেশি হেরফের হয়নি। রানের চাকায় লাগেনি দম। ফলে রোববার ডমিনিকার উইন্ডসর পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৩৫ রানে হেরেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
শুরুটা বাংলাদেশের ছিল বিপর্যয়ে। মেরে খেলার চেষ্টায় দুই ওপেনার ফেরেন দ্রুত, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও থামেন এক ছয়, এক চার মেরে। ২৩ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর আফিফ হোসেনের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েন সাকিব। কিš‘ জুটিতে ৫৫ রান আনতে তারা লাগিয়ে ফেলেন ৪৪ বল। আফিফ তবু থিতু হয়ে চেষ্টার চালাচ্ছিলেন, সাকিবের মাঝে ছিল না তেমন কিছু, ২৭ বলে ৩৪ করে আফিফ থামার পর প্রান্ত আগলে রেখেই খেলে গেছেন সাকিব। মাঝের ওভারে ৪৫ বলেও কোন বাউন্ডারি আসেনি বাংলাদেশের ইনিংসে। এক পর্যায়ে সাকিবের রান ছিল ৩৭ বলে ৩৫! ৪৫ বলে তিনি ফিফটি করার পর হাতখুলে মেরেছেন। ততক্ষণে ম্যাচ উইন্ডিজের পকেটে।
তবে ম্যাচ শেষে এমন ব্যাটিংকেও বাহবা দিলেন মাহমুদউল্লাহ, ‘সাকিব মাশাল্লাহ খুবই ভাল ব্যাট করেছে, কিন্তু‘ বোলিংয়ে আমরা সম্ভবত কয়েকটা ওভারে খুব বেশি রান দিয়ে দিয়েছি। ওইটাতে কোন সমস্যা নাই, টি-টোয়েন্টিতে হতেই পারে। কিন্তু‘ জায়গায় বল করতে চেয়েছি, ওইখানে আমরা বল করতে পারিনি। আফিফ আর সাকিবের জুটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, মোমেন্টাম পেয়েছিল। শেষে সাকিব কয়েকটা ওভার বাউন্ডারি মারল, মোসাদ্দেক আসল। কিছুটা তো হয়তবা। উইকেট খুব ভাল ছিল। বোলিং ভাগে আরেকটু রান কম রাখলে, লক্ষ্য ছোট হলে ভাল হত।’
বাংলাদেশে পেস বোলাররা ছিলেন বেশ খরুচে। শরিফুল ইসলাম স্লগ ওভারে ভাল করলেও বাকি দুজন ছিলেন মলিন। সাকিবও শেষ দিকে এসে ২৩ রান দেন এক ওভারে। তবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এরকমটা হয়ে যায়, যখন রভম্যান পাওয়েলের মতো কেউ ক্রিজে থাকেন (২৮ বলে ৬১)। ক্যারিবিয়ানরা দুশোর কাছে যাওয়ার পরই কি তবে আশা ছেড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ? মাহমুদউল্লাহ বোঝালেন শুরুতে ৩ উইকেট পড়ার পর তাদের হিসাব-নিকাশ আসলেই বদলে গিয়েছিল, ‘ছিটকে যাইনি। ১৯০ রান যখন তাড়া করবেন তখন শুরু থেকে। ভালো একটা শুরু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুরুতে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলি।’
তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ পিছিয়ে ১-০ ব্যবধানে। তবে ড্র করার সুযোগটি আগামী ৭ জুলাই, গায়ানায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন