বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মাগুরা খাদ্য অফিসে দূর্নীতি, ২ কর্মকর্তা বরখাস্ত

মাগুরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২২, ১২:৪৪ পিএম

মাগুরা জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের প্রধান সহকারী সৈয়দা সানিয়া আক্তার ও অফিস সহায়ক আলমগীর হোসেন কে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়েছে খুলনা বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা। গত ২৮ জুন তদন্ত কমিটি সরেজমিন মাগুরা খাদ্য অফিস ও গুদাম পরিদর্শন করে দূর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩০ জুন কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে এই শাস্তির আদেশ হয়।
মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছারিতার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। প্রতিটি মৌসূমে ধান, চাল ও গম সংগ্রহের জন্য সরকারী নি্ের্দ্দশনা উপেক্ষা করে একটি প্রভাবশালী চক্রের মাধ্যমে অফিস সহকারী সৈয়দা সানিয়া আক্তারের নেতৃত্বে অধিকাংশ ভূয়া মিল মালিক সাজিয়ে বরাদ্ধ দেওয়া হয়।

মাগুরার শালিখা উপজেলার মজুমদার রাইস মিলের মালিক জগবন্ধু মজুমদার অভিযোগ করেন, মাগুরা খাদ্য কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মাগুরা জেলায় সরকারী অফিসের নথিপত্রে ২০৭ জন ধান, চাল মিল মালিকের তালিকা থাকলেও প্রকৃত পক্ষে জেলায় সর্ব সাকুল্যে মাত্র ৫৭ থেকে ৫৮টি রাইস মিল রয়েছে। অথচ ভূয়া মিল মালিক সাজিয়ে বছরের পর বছর চলছে সরকারী বরাদ্দের অর্থে ক্রয় বিক্রয়। ফলে প্রকৃত মিল মালিক ও প্রান্তিক কৃষকরা বঞ্চিত হয়ে আসছেন।তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ।

দীর্ঘ এক যুগ একটি প্রভাবশালী বলয় তৈরি করে মাগুরা খাদ্য অফিসের দূর্নীতিবাজ অফিস সহকারী সৈয়দা সানিয়া আক্তার একই কর্মস্থলে দীর্ঘ ১২ বছর চাকুরী কালে তার ইচ্ছামতো কর্মকর্তাদের পরিচালনা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মিডিয়া কর্মীরা অফিসে গেলে তার পোষা বাহিনী দিয়ে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নানা অজুহাতে তথ্য দানে বিরত থাকেন।
অফিস সহকারী সৈয়দা সানিয়া আক্তার বলেন, সরকারী চাল সংগ্রহের কেজি প্রতি মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ থাকায় বর্তমান চালের বাজার মূল্য কেজি প্রতি ৪২,৪৩ টাকা থাকায় চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্র ৬ হাজার মেট্রিক টনের বিপরিতে অর্ধেক তিন হাজার মেট্রিক টন অর্জিত হয়েছে মাত্র। তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছারিতার অভিযোগ অ¯ী^কার করেন তিনি।
গত আমন মৌসূমে অভিযুক্তরা যোগসাজসে জনৈক সাব্বির হোসেন নাজমুল কে ৪৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার ভুয়া পে-অর্ডার দেখিয়ে সরকারী খাদ্য গুদামে মজুদ থাকা ১৭০ মেট্রিকটন ধান প্রদান করেন। গত ২১ জুন তারিখে খুলনা বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান ঝটিকা অভিযানে মাগুরা খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করলে গত আমন সংগ্রহের ধান ও চাউলের ষ্টক না মিলায় কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুবির চৌধুরী কে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর চৌধুরী বলেন, ২০২১-২২ আমন সংগ্রহের যে ধান গুদামজাত করা হয়েছিল তার অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ১৭০ মেট্রিক টন ধান চারটি মিল অর্থ্যাৎ ওসমান, রবীন্দ্রনাথ, ভাইভাই ও শহীদ রাইস মিলে বরাদ্দ দেয় মাগুরা খাদ্য অফিস। ঐ ধান থেকে ১১১ মেট্রিক টন চাউল ১৫ দিনের মধ্যে সরকারী গুদামে জমা হওয়ার কথা থাকলেও তিনমাসেও তা সংগ্রহ না হওয়ায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সরেজমিনে ২৮ জুন তদন্ত করার চিঠি দিলে তার আগের দিন দিনরাতে মিলিয়ে মিলারদের সহযোগীতায় ঐ চাল গুদামে মজুদ করে অফিস কর্মকর্তারা। অথচ ভাই ভাই রাইস মিলের মালিক সাব্বির হোসেন নাজমুলসহ অন্যান্য মিলাদের ঐ ধান বরাদ্দের বিপরিতে সরকারী ব্যাংক পে-অডার অফিসে জমা গ্রহন ও প্রদান দেখানো হয়েছে চাল দেওয়ার আগেই। ব্যাংক ও অফিসের খাতাপত্র তদন্ত করে ঐ সকল পে-অডার ভূয়া এবং অনিয়মের মাধ্যমে অফিস সহকারী সৈয়দা সানিয়া আক্তারের ভুমিকার প্রমান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ভূয়া মিল মালিকদের তালিকা অনুসন্ধান করে খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তার নিকট ৩০ জুন তারিখে মাগুরার তিন কর্মকর্তার নানা দূর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছারিতার প্রাথমিক সত্যতা উল্লেখ্য করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
সদ্য যোগদান কৃত মাগুরা জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা মনোতোষ কুমার মজুমদার জানান, ৩০ জুন বৃহস্পতিবার বিকালে মাগুরা জেলা খাদ্য অফিসের প্রধান অফিস সহকারী সৈয়দা সানিয়া আক্তার ও অফিস সহায়ক আলমগীরকে দূর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্থ করা হয়েছে। তবে সাবেক জেলা খাদ্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান প্রথম শ্রেনী পদমর্যদার অফিসার হওয়ায় তার বিরুদ্ধে খাদ্য অধিদপ্তর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি জানান।

দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি এবং অধিকত্বর তদন্ত পূর্বক প্রকৃত মিল মালিকদের লাইসেন্স ও কৃষকদের প্রকৃত তালিকা হাল নাগাদ করে মাগুরা খাদ্য বিভাগের সুষ্ট পরিবেশ ফিরে আসুক -এমনটায় প্রত্যাশা সংশিষ্টদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন