পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বামী ও আপন ভাইয়ের স্ত্রীর পরকীয়ার বলি বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী শাম্মী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত এজাহারভূক্ত আসামী কে এম লতীফ ইনষ্টিটিউশনের সিনিয়র শিক্ষিকা আয়শা আখতার রোজিকে পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে ঢাকায় সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাকক্ষে জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার (৭ আগষ্ট) দিনগত গভীর রাতে থানাপাড়া ভাড়াটিয়া বাসায় বিউটিপার্লার ব্যাবসায়ী শাম্মী আক্তার (৪০) খুন হন। গত সোমবার (৮ আগষ্ট) দুপুরে পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে দু সন্তানের জননী শাম্মি আক্তারের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে দশম শ্রেনীর ছাত্র সাইম আলম (১৭) বাদী হয়ে সোমবার গভীর রাতে মায়ের দ্বিতীয় স্বামী শেখ সিরাজুস সালেকীন (৩৩) ও আপন মামি শিক্ষিকা আয়শা খানম (৫০)কে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ ওই রাতেই তাদের গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার সকালে দুজনকে আদালতে সোপর্দ করেন।
হত্যায় গ্রেপ্তারকৃত শেখ সিরাজুস সালেকীন নিহত শাম্মির দ্বিতীয় স্বামী ও ল²ীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের শেখ মোহম্মদ আলীর পুত্র এবং আয়শা খানম শহরের কে এম লতীফ ইনস্টিটিউশনের ইংরেজী বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা ও পার্শবর্তী শরণখোলা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা এমাদুল হকের স্ত্রী।
মামলা সূত্রে যানাযায়,দীর্ঘ ১৩ বছর আগে প্রথম স্বামী ফিরোজ আলমের সাথে বিয়ে বিচ্ছেদের পর দু’সন্তান নিয়ে থানা পাড়ার জনৈক মাসুম মিয়ার বাসায় ভাড়ায় থাকত এবং পৌর শহরের কে এম লতীফ সুপার মার্কেটে শাম্মি বিউটি পার্লার নামে একটি ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। গত দু বছর আগে সালেকিনকে দ্বিতীয় বিয়ে করে শাম্মি। শাম্মি ও সালেকিনের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে স্বামী সালেকিন ঘটনার দিন রোববার সকালে ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়া আসেন। বিবাহ বার্ষিকী অনুষ্ঠানের জন্য ওই রোববার (৭ আগস্ট) রাতে অনুষ্ঠান শেষে স্বামী সালেকিন ও ভাবি আয়শা খানম তাদের থানাপড়ার ভাড়াটিয়া বাসায় অবস্থান করছিলেন। রাতের খাবার শেষে শাম্মি স্বামিকে নিয়ে নিজ কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। পাশের আলাদা রুমে ভাবি আয়শা খানম ঘুমান। রাত তিনটের দিকে শাম্মি ঘুম থেকে জেগে স্বামিকে বিছানায় না পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে ভাবির রুমে ঢুকে দুজনকে অনৈতিক কাজে দেখতে পায়। এনিয়ে গালাগাল করলে স্বামি ও ভাবি আয়শা দুজনে মিয়ে শাম্মির মুখ চেপে ধরে। একপর্যায় দুজনে মিলে শাম্মিকে বালিশ দিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে। সোমবার সকালে স্বামী সালেকীন ও আয়শা ননদ শাম্মীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে। এসময় তারা হার্ট এট্যাক করে শাম্মীর মৃত‚্য হয়েছে বলে প্রচারণা চালায়।
এদিকে মামলা দায়েরের একদিন পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই জেন্নাত আলীকে প্রত্যাহার করে পিরোজপুর পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে।
নিহত শাম্মির হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ফাঁসির দাবিতে কে এম লতীফ ইনষ্টিটিউশনের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা গত বুধবার সকালে পৌর শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ নূরুল ইসলাম বাদল সাংবাদিকদের জানান, গ্রেপ্তারকৃত সিরাজুস সালেকীন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং আয়শা আখতারের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত আগামী ১৬ আগষ্ট শুনানির দিন ধায্য করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন