দেখতে দেখতে দুই দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে ক্রিকেটের কুলীন সংস্করণে এখনও যেন নিজেদের খুঁজে ফিরছে আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুলদের অনুজরা। বাংলাদেশের টেস্ট পারফরম্যান্সের দুর্দশা ভাবাচ্ছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা বিসিবিকেও। নানা সময় নানান পদক্ষেপ নিলেও পারফরম্যান্সে উন্নতি ও দায়বদ্ধতার জায়গায় খুব একটা নড়চড় হয়নি সাকিব-তামিমদের ভাগ্যে। দলের কোচ থেকে শুরু করে সিনিয়রদের মুখেও তাই এখন শোনা যায় ‘টেস্ট সংস্কৃতিই নেই বাংলাদেশে!’ সেই দায় থেকে মুক্তি পেতে টেস্টে ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি বাড়ানো হতে পারে বলে জানালেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান। এছাড়াও অন্যান্য করণীয় ঠিক করতে বিসিবি সভাপতির গড়ে দেওয়া ওয়ার্কিং কমিটি ঈদের পর সভা করবে বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে।
বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২২ বছর পূর্ণ হয়েছে কদিন আগে। কিন্তু এই সংস্করণে তারা এখনও পর্যন্ত প্রত্যাশিত উচ্চতার কাছাকাছিও যেতে পারেনি। সামগ্রিক চিত্র যেমন করুণ, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও ভীষণ নাজুক। গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে অবিস্মরণীয় জয়ের পর টেস্ট ক্রিকেটে দিনবদলের গান একটু হলেও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু সেই জয়ের বিশ্বাস নিয়ে ধারাবাহিক হওয়ার আশা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডে পরের টেস্টে, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টে হেরেছে বাজেভাবে। দেশে ফিরে তুলনামূলক বেশ দুর্বল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি টেস্ট ড্র করতে পারলেও পরের টেস্টে আবার হারতে হয়েছে। এরপর চলতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও জুটেছে দুই টেস্টে হার। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৩৪ টেস্ট খেলে ১০০টিই হেরে টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম হারের সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ২২ বছরে জয় মোটে ১৬টি। এর মধ্যে ৮টি জয়ই আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
বিসিবি নানা সময়ে টেস্ট নিয়ে বিভিন্নরকম আশার কথা বললেও বাস্তবতা এখন উপলব্ধি করতে পারছে বলেই মনে হচ্ছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান গত কয়েক মাসে বেশ কবার সরাসরিই বলেছেন, টেস্টে ভালো দল নয় বাংলাদেশ। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, টেস্টে উন্নতির পথ খুঁজছেন তারা, ‘টেস্টে আমরা সেভাবে পারফর্ম করছি না। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো করতে পারিনি, ওয়েস্ট ইন্ডিজেও পারিনি। এটা নিয়ে আমরা অনেক চিন্তিত। সভাপতি সাহেব ওয়ার্কিং গ্রুপ করেছেন। সবাইকেই এটা নিয়ে ভাবতে হবে। ক্রিকেট অপারেশন্স, গেম ডেভেলপমেন্ট, হাই পারফরম্যান্স, এইজ গ্রুপ কমিটির চেয়ারম্যান, মিলে আমরা মিটিংয়ে বসব। হয়তো ঈদের পরপরই। দীর্ঘমেয়াদী একটা পরিকল্পনা করতে হবে। টেস্টে কীভাবে আরও ভালো করা যায়, টেস্ট খেলোয়াড়দের জন্য কী কী সুবিধা বা ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এদিকে আরও বেশি নজর দিতে চাই, যাতে টেস্টে আগ্রহ আরও বাড়ে। একটা টেস্ট দলে যারা খেলবে তাদের যেন পূর্ণ মনোযোগ এখানে থাকে। অনেকে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বেশি খেলতে চায়। যারা টেস্টে বেশি আগ্রহী, নিবেদিত, এদের জন্য কী করা যায় এগুলো নিয়ে বসতে চাচ্ছি। এটার জন্যই ওয়ার্কিং গ্রুপের কথা বলেছেন।’
সবশেষ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে টেস্টে ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি বাড়িয়েছিল বিসিবি। সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তখন করা হয়েছিল ৬ লাখ টাকা। সেই ফি আরও বাড়ানোর কথা ভাবছে বিসিবি, জানালেন জালাল ইউনুস, ‘ম্যাচ ফি হয়তো বেড়ে যাবে। আরও কী কী করতে পারি, সেই চিন্তাভাবনা চলছে।’
এদিকে, বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বড় শিরোপা মাত্র দুটি। একটি যুব বিশ্বকাপ, ২০২০ সালে এসেছিল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হাত ধরে। অন্যটি প্রমীলা এশিয়া কাপ, নারী দলের হাত ধরে যা এসেছিল ২০১৮ সালে। যুব দলের ক্রিকেটাররা একসময় জাতীয় দলে সুযোগ পান, ফলে সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে টইটম্বুর থাকার সম্ভাবনা তাদের আছে। তবে দেশের নারী ক্রিকেটে এখনও সেভাবে বিনিয়োগ নেই। পুরুষ ক্রিকেটারদের তুলনায় সালমা-রুমানারা যে বেতন-ভাতা পান তা নগন্য।
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি) নিয়েছে অত্যন্ত প্রশংসনীয় এক উদ্যোগ। কিউই বোর্ড নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের সমান পারিশ্রমিক দেবে। বাংলাদেশে সহসা এমন কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না। তবে পুরুষ ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের সাথে নারী ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের তফাৎ কমছে। এমনই আভাস দিলেন জালাল ইউনুস, ‘আমরা আশা করছি মেয়েদের ক্রিকেট আরও উন্নতি করবে। আগে থেকে অনেক ভালো করছে। তারা আরও পেশাদার হচ্ছে। আমরা আশা করি আরও হবে। তাদেরও কার্যক্রম বাড়ানো উচিৎ। যেহেতু এটা নিয়ে চিন্তাভাবনার আলাদা বিভাগ আছে, বোর্ডেও এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আমরা চাইব তাদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর। পারিশ্রমিকের ব্যবধান কমানো উচিৎ।’
মূলত নারী ক্রিকেট নিয়ে কাজ করে উইমেনস উইং। তাদের সাথে বোর্ডের সমন্বয়ে নারী ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জালাল ইউনুস বলেন, ‘এটা বোর্ড সভাপতি অনেকবার বলেছেন। উনি এদিকে লক্ষ্য করেছেন। সমান সমান না হলেও আমরা কাছাকাছি যাতে থাকে বা পার্থক্য কমে সেদিকে লক্ষ্য রাখব। বোর্ডেই এটা আলোচনা হবে। বোর্ডে ইতোমধ্যে ম্যাচ ফি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া আছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন