শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মেসি কান্ডে মুগ্ধ ফুটবলও

প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : বার্সা শিবিরকে সুখি পরিবারের একটা উদাহরণ বলা যায়। যেখানে সতীর্থদের নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে বিলিয়ে চলেছেন দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি। পরশু ন্যু ক্যাম্পে লুইস সুয়ারেজের হ্যাটট্রিক, মেসির মহিমান্বিত ফ্রি-কিক থেকে গোল ও সাকুল্যে সেল্টা ডি ভিগোকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দেয়াÑ এসব খবরকে ছাপিয়ে এদিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মেসির পেনাল্টি কিক। যা বন্ধুত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ফুটবল ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার মতই একটি ঘটনা। সেই সাথে ‘এমএসএন’ এয়ীর বন্ধুত্বের দৃঢ়বন্ধন প্রতিপক্ষের জন্য কতটুকু হুমকি তার প্রদর্শন তো আছেই।
ম্যাচের বয়স তখন ৮০ মিনিট। প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির দৃষ্টিনন্দন ফ্রি-কিক ও সুয়ারেজের জোড়া গোলে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে বার্সেলোনা। এসময় ডি বক্সের ভেতর মেসিকে ফাইল করেন সেল্টা ডিফেন্ডার কাস্ত্রো। স্বভাবতই স্পট কিকের জন্য এগিয়ে আসেন মেসি। কিন্তু বন্ধু নেইমারের নামের পাশে যে কোন গোল নেই গত কয়েক ম্যাচ! ওদিকে আরেক বন্ধু সুয়ারেজ দাঁড়িয়ে মৌসুমের তৃতীয় হ্যাটট্রিকের সামনে! তা সত্তে¡ও মেসিই নিলেন পেনাল্টি কিক। কিন্তু গোল বরাবর নয়! আলতো ছোঁয়ায় বলটি বাড়িয়ে দিলেন ডানপ্রান্তে ওঁৎপেতে থাকা দুই বন্ধুর দিকে। বেশি নিকটে থাকায় সুযোগটা নিলেন সুয়ারেজ। হ্যাটট্রিক পূর্ণ করতে কোন ভুল করেননি উরুগুয়ান তারকা। শিষ্যদের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখে বার্সার ডাগ আউটে বসে হেসেছেন লুইস এনরিকে।
এই ঘটনার পর নেইমার সুয়ারেজের ওপর অভিমান করতেই পারেন। মেসির ওই পেনাল্টি এ্যাসিস্ট ছিল মূলত নেইমারের উদ্দেশে। ব্রজিলিয়ান তারকার ভাষ্য সেরকমইÑ ‘এটা (পেনাল্টি এ্যাসিস্ট) আমার উদ্দেশেই ছিল, অনুশীলনে লিও ও আমি এটা প্রাকটিস করেছি কিন্তু লুইস খুব নিকটেই ছিল তাই গোলটা সেই করে।’ কিন্তু আসলেই কি অভিমান করেছিলেন বার্সা নাম্বার নাইন? তাদের কাছে যে বন্ধুত্বটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটা ফুটে উঠল পরের কথাতেইÑ ‘আমাদের বন্ধুত্বটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গোল কে করল এটা ব্যাপার না। আমরা জিতেছি এটাই সব।’ সুর মিলিয়েছেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাওÑ ‘আমি এটা তাদের করতে দেখিনি কিন্তু আলোচনা করতে শুনেছি। যাই হোক এটি নেইমারের উদ্দেশেই ছিল কিন্তু লুইস নিকটে থাকায় সুযোগটা সেই নেয়।’ পরে অবশ্য গোল পেয়েছেন নেইমারও, বাকি গোলটি ইভান রাকিতিচের। পেনাল্টি থেকে সেল্টা ভিগোর হয়ে একটি গোল মোধ দেন গুইদেত্তি। ম্যাচ শেষে মৌসুমে সুয়ারেজের গোল সংখ্যা পৌঁছে ৩৫ ম্যাচে ৩৯টি, ২৩ গোল নিয়ে ফিরেছেন লিগের শীর্ষ গোলদাতার আসনে। বার্সাও পয়েন্ট ব্যবধান বাড়িয়েছে মাদ্রিদের দুই দল রিয়াল ও অ্যাটলেটিকোর সাথে। এক ম্যাচ কম খেলে সিমিওনের দলের চেয়ে ৩ ও জিদানের দলের চেয়ে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে শীর্ষে এনরিকের দল। এদিন অ্যাটলেটিকো একমাত্র গোলে হারায় গেতাফেকে।
তবে এসব কিছুকে ছাড়িয়ে এদিন আলোচনায় মেসির বন্ধুতুল্য আচরণ। যাতে মুগ্ধ ফুটবলের সাবেকরাও। আর মুগ্ধ বার্সার খেলায়। ইংলিশদের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের মালিক গ্যারি লিঙ্কার টুইট বার্তাই লেখেনÑ ‘বার্সার দ্বিতীয়ার্ধের খেলা যদি তুমি মিস করে থাক, তাহলে তোমার জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে।’ ব্যালন ডি’অর জয়ী সাবেক ইংলিশ তারকা মাইকেল ওয়েন লেখেনÑ ‘আমার মনে পড়ে না এমন সুন্দর ফুটবল খেলা আমি কখনো দেখেছি।’ এতকিছু সত্তে¡ও বার্সা কোচ এটাকে একটা ম্যাচ হিসেবেই দেখছেন, যেখানে তারা জয়ী হয়েছে। ‘দর্শকরা কি আজ ঐতিহাসিক কিছুর সাক্ষী হল?’ এমন প্রশ্নের জবাবে এনরিকের উত্তরÑ ‘ঐতিহাসিক? না। ঐতিহাসিক হল ট্রফি জয়। এটা শুধুই একটি মজার জয় মাত্র।’
পেনাল্টি এ্যাসিস্টের উদাহরণ অবশ্য এটি নতুন নয়। ‘ট্যাপ পেনাল্টি’র প্রথম উদাহরণটা ১৯৫৭ সালের। বেলজিয়ামের কোপেনস কিক নিয়েছিলেন পিটারের উদ্দেশে, পিটার সেটা ফেরত পাঠালে কোপেনস নিজে আইসল্যান্ডের জালে বল পাঠিয়ে দেন। এমন ঘটনার সাক্ষী গানাররাও। ২০০৫ সালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে এই কাÐ ঘটিয়েছিলেন আর্সেন ওয়েঙ্গারের আর্সেনাল। কিন্তু গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন রবার্ট পাইরেস ও থিয়েরি হেনরি। সামনে আর্সেনালের বিপক্ষে বার্সার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ। বার্তাটা কি পৌঁছেছে আর্সেন ওয়েঙ্গারের কাছে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন