সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ছিলেন একজন বাঙালি লেখক ও কবি। তিনি ১৯ ও ২০ শতকে বাঙালি মুসলিম পুনর্জাগরণের প্রবক্তাদের একজন। তিনি মুসলিমদের জন্যে বিজ্ঞানসাধনা, মাতৃভাষাচর্চা, নারীদের শিক্ষা এসবের পক্ষে লেখালেখি করেন। তার অনল-প্রবাহ কাব্যগ্রন্থটি ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে এবং স্বাধীনতার জন্য লিখে উপমহাদেশের প্রথম কবি হিসেবে কারাবন্দী হন। বছর দুই কারাভোগ করেন।
সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের মুসলমান লেখকদের অন্যতম। তার রাজনৈতিক আদর্শ সাহিত্যকর্মেও দৃশ্যমান। তার রচনাসমূহকে ইসলামি সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। কারণ তিনি ধর্মশাস্ত্রের ভাবধারা কবিতা অঙ্কিত করেছেন।
সিরাজী তথাকথিত পর্দাপ্রথাবিরোধী ছিলেন এবং মুসলিম নারী জাগরণে অত্যুৎসাহী ছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম সিরাজীর ভাবধারার অনুসারী ছিলেন। সিরাজী ইসলামকে নারীর মুক্তিদাতা হিসাবে দেখেছেন এবং সে জন্যেই মুসলিম নারীদের শিক্ষার জন্য বক্তৃতা দিয়েছেন ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তারই উত্তরাধিকার কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছেন আমি একটি গল্প লিখে সিরাজীর কাছ থেকে দশটি টাকা উপহার পেয়েছিলাম। আর এই দশটি টাকাই আমাকে সাহিত্যের দিকে টেনে নেয়।
সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে প্রগতি ও আধুনিকতার জন্য মানসিক নির্যাতন এমনকি শারিরীক নির্যাতনও সইতে হয়েছে। তবে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আর আত্মমর্যাদাবোধ তার চলার পথকে করেছিল আরো সাহসী ও গতিশীল। অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বজ্রের মত কঠিন আর ন্যায় ও সত্যের প্রতি কুসুমকোমল।
তিনি ‘তারা-বাঈ’, ‘রায়নন্দিনী’, ‘জাহানারা’সহ বেশ কয়েকটি উপন্যাসও রচনা করেছেন। তার দুইটি সঙ্গীতগ্রন্থ হলো, ‘সঙ্গীত সঞ্জীবণী’ এবং ‘প্রেমাঞ্জলি’। এ ছাড়াও ‘স্বজাতি প্রেম’, ‘আদব কায়দা শিক্ষা’, ‘স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা’, ‘সুচিন্তা’, ‘তুর্কী নারী জীবন’ শিরোনামে কয়েকটি প্রবন্ধগ্রন্থও রচনা করেছেন। ‘অনলপ্রবাহ’, ‘উছ্বাস’, ‘উদ্বোধন’, ‘মহাশিক্ষা’ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। তার একমাত্র ভ্রমণ কাহিনী ‘তুরস্ক ভ্রমণ’ প্রকাশিত হয় ১৯১০ সালে।
সিরাজী বাঙালি জাতি তথা মুসলিম বাংলার জাগরণের দূত হিসেবে পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ শাসন ও তৎকালীন শোষকগোষ্ঠীর সকল বাধা অতিক্রম করতে চেয়েছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি। বাংলা গদ্য সাহিত্যে মুসলিম লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১৮৮০ সালের ১৩ জুলাই বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা সৈয়দ আবদুল করিম (খন্দকার) ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। সে যুগের অন্যতম বিদূষী মহিলানূরজাহান বেগম ছিলেন তার মা। আরবি, ফার্সি, বাংলা ভাষায় তার দখল ছিলো ঈর্ষণীয়। প্রবল দেশপ্রেমেরঅধিকারী ছিলেন এই মহীয়সী নারী। মায়ের সমস্ত গুণই ইসমাইল হোসেন সিরাজীর মাঝেপ্রস্ফুটিত হয়েছিলো। ১৯৭২ সালের ১৭ জুলাই নারী জাগরণের অগ্রদূত সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী মৃত্যুবরণ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন