সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

শেখ হাসিনা গণতন্ত্র উন্নয়নের অগ্নিবীণা : তথ্যমন্ত্রী

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২২, ৩:৫৬ পিএম | আপডেট : ৩:৫৮ পিএম, ১৬ জুলাই, ২০২২

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সেনা সমর্থিত তৎকালীন ১/১১ সরকারের সকল অন্যায়, অবিচার এবং দুর্নীতির একমাত্র আপসহীন প্রতিবন্ধক ছিলেন বলেই তাকে বিনা ওয়ারেন্টে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পায়ে শৃঙ্খল পরানো হয়। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর দলের অনেক বড় নেতা বেসুরে কথা বললেও বাংলাদেশের তৃণমূল স্তরের দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে ছিলেন বলেই তীব্র আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে ১১ মাস পর ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনাকে ১/১১ সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, বলা চলে সেদিনই গণতন্ত্র মুক্তি পায়।

জাতি মনে করে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অগ্নিবীণা। শেখ হাসিনার হারাবার ও পাওয়ার আর কিছুই নেই। তাকে ছাড়া বাংলাদেশের উপায় নেই। তাই তাকে আমরা কিছুতেই বঙ্গবন্ধুর মতো হারাতে চাই না। কারণ জাতির ভাগ্য পরিবর্তন ও উন্নয়নের শিখা অনির্বাণ রাখতে শেখ হাসিনাকে বারবার দরকার। এজন্যেই দলীয় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সুদৃঢ় ঐক্য ও সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে ২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন তার বিজয় নিশ্চিত করে আবার জাতির হাল ধরার নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকেই দিতে হবে।

শনিবার শেখ হাসিনার ১৫ তম কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, ২০০১ সাল থেকে এবং ১/১১ সরকারের আগ পর্যন্ত বিএনপি যে সকল অপকর্ম, দুর্নীতি ও দুঃশাসন চালিয়েছে এবং তারেক জিয়া হাওয়া ভবনে সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠা করে যে লুণ্ঠন করেছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে সেই পথ হয়তোবা এবার রুদ্ধ হবে। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদকারী বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনাকেই ১/১১ সরকার বানোয়াট-মিথ্যা এবং হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে বেগম খালেদা জিয়ার আগেই তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের আগের দিন তিনি হাসপাতালে অসুস্থ বরেণ্য শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে দেখতে গিয়েছিলেন, সাথে আমিও ছিলাম। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখতে পান, বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান টুকুর অপরাধে তার অসুস্থ কন্যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এভাবেই সেই সময় স্বামীর অপরাধে স্ত্রীকে এবং পিতার অপরাধে কন্যাকে গ্রেফতার করা হচ্ছিল। শেখ হাসিনা এসবের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন।

কিন্তু বিএনপি বা অন্যরা এমনকি কথিত সুশীল সমাজও কোনো প্রতিবাদ করেননি। আজ বুঝতে কষ্ট হয় না সেদিন কেনো, কোন উদ্দেশ্যে ১/১১ সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেছে। কারণ শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা না হলে ১/১১ সরকারের অসৎ উদ্দেশ্যের নীলনকশা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তিনি এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা যখন সাব-জেলে ছিলেন তখন তিনি যখনই আদালতে আসতেন তখন তাকে কখনো মনমরা বা হতাশ দেখিনি। তিনি সবসময় চাঙ্গা ছিলেন এবং দলকে চাঙ্গা রাখার জন্য আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আরো স্পষ্ট বলতে চাই, তিনি বন্দী অবস্থায় দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে সংগঠিত করার লক্ষে অভাবনীয় ভ‚মিকা পালন করেছিলেন এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে জিল্লুর রহমান সেদিন এক কঠিন দুঃসময়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন এবং শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করেছিলেন বলেই ১১ মাস পর শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে ১/১১ সরকার বাধ্য হয়।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে আজকে যে উন্নয়নের জোয়ার দৃশ্যমান শেখ হাসিনা তা কারাজীবনে সেই উন্নয়নের স্বপ্ন বুনন করেছিলেন। যখনই তার সাথে আমাদের দেখা হয়েছে তখনই তিনি এসব নিয়ে কথা বলতেন। আজ দেখতে পাচ্ছি দেশের বহু উন্নয়নের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ। অথচ এই পদ্মাসেতুর নির্মাণ যখন শুরু হয় তখন গুজব ছড়িয়ে ছেলে ধরা শুরু করানো হয়। করোনা নিরোধক টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হলে গুজব ছড়ানো ও মিথ্যাচার করা হয়েছিল। যারা এসব করেছে তারা অবশ্য চুপি চুপি টিকা নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, পদ্মাসেতুর উদ্বোধন নিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সমগ্র বাংলাদেশ উল্লসিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড, জাপান এমনকি পাকিস্তানসহ সারাবিশ্ব নেতৃবৃন্দ অভিনন্দন জানিয়েছে। যে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুর জন্য ঋণ দিতে অস্বীকার করেছিল সেই বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি যিনি মহিলা তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাঙালি সংস্কৃতির ভ‚ষণ শাড়ী পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে সখ্যতার প্রমাণ করেছিলেন।
অথচ বিএনপি নামক দলটি এতে বেজায় বিমুখ। তাদের নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, হাজারটা পদ্মাসেতু নির্মাণ হলেও কোনো লাভ নেই, কি জঘন্য এ মনোবৃত্তি। এই ঘৃণ্য মনোবৃত্তির পাল্টা জবাব বাঙালিকে অবশ্যই দিতে হবে। তাদের এ কথার শুধু প্রতিবাদ নয় তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য একটি অগ্নি পরীক্ষা। দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের ধ্বস কেউ ঠেকাতে পারবে না।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে যেদিন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন সেদিন লক্ষ জনতার জনসমাবেশে জাতির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন আপনারা যদি আমাকে একবার সুযোগ দেন এবং ব্যালট দিয়ে নির্বাচিত করেন তাহলে আমি স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সুফল বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবো। এই আবেদন নিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সকল জনপদ চষে ঘুরেছেন। দলকে চাঙ্গা করেছেন। মানুষ তাঁর আহŸানে সাড়া দিয়ে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হলে দীর্ঘ ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি তাঁর নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন হয়।

ক্ষমতায় এসেই তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য সোনার বাংলা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ইন্ডেমেনেটি অধ্যাদেশ সহ কালো আইনগুলো বাতিল করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখী করেন এবং ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সূ² কারচুপির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামাত জোট সরকার গঠিত হলে দেশে লুটপাটের রাজত্ব শুরু হয়। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানো হয়, হাওয়া ভবনের নীলনকশা অনুযায়ী গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা চালানো হয়। সেদিন আমরা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মীদের হারিয়েছি। ৫’শ জনের অধিক নেতাকর্মী স্প্রিন্টারবিদ্ধ হন, অনেকে চিরকালের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেন। তিনি আরো বলেন, বিএনপি’র ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল জিয়াউর রহমান তাদের প্রতিষ্ঠাতা, জিয়াউর রহমান একজন প্রতারক। তিনি হত্যা ও ক্র’র প্রতিষ্ঠাতা। সকল অন্যায়-অনাচার এবং মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিদের প্রশ্রয়দাতা। তিনি গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব দিয়ে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। ৭১’র পরাজিত শক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছেন। এ অমোচনীয় কলঙ্কের দায় বিএনপিকে অবশ্যই বহন করতে হবে এবং ইতিহাস তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবে না।

সভাপতির বক্তব্যে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রাজনীতি করতে গেলে জেলে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনীতি জীবনের অর্ধেকটা সময় জেলে কাটিয়েছেন। আমার পিতা এবং আমিও জেলে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জেলে গিয়েছেন। কেননা জেল হচ্ছে রাজনীতিকদের দ্বিতীয় ঘর। তিনি আরো বলেন, বাঙালি জাতি হাজার হাজার বছর ধরে বিদেশী আগ্রাসনী শক্তির হাতে লুণ্ঠিত হয়েছে এবং শাসিত হয়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে বাঙালির ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম বিজয়ী হয়েছে। এই বিজয়ী শক্তি শেখ হাসিনাকে কারামুক্ত করেছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দিন চৌধুরী, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, থানা আওয়ামী লীগের আলহাজ্ব ফিরোজ আহমদ, আলহাজ্ব সুলতান আহমদ চৌধুরী, এ.এস.এম ইসলাম, রেজাউল করিম কায়সার, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মো. ইকবাল হাসান, আবু তৈয়ব সিদ্দিকী, এস.এম. আকবর আলী আকাশ, লুৎফল হক খুশী, সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. সুনীল কুমার সরকার, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মাহমুদ শমসের, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বাবু চন্দন ধর, মোহাম্মদ হোসেন, দিদারুল আলম চৌধুরী, আবদুল আহাদ, আবু তাহের, ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, মো. শহিদুল আলম, নির্বাহী সদস্য মোহব্বত আলী খান, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, অমল মিত্র, এড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. জাবেদ, হাজী বেলাল আহমদ প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন