২৮ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নামা তাইজুল ইসলামের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গেল দুইশর নিচে। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় ছন্দে থাকা লিটন দাস ফিফটি তুলে নিলেও গুদাকেশ মোতি চাপে ফেললেন বাংলাদেশকে। তবে কঠিন পরিস্থিতি সামলে জয় আদায় করে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করল তামিম ইকবালের দল। গতপরশু রাতে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। আগেই তিন ম্যাচের সিরিজ নিজেদের করে নেওয়া টাইগাররা ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে ক্যারিবিয়ানদের। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৮.৪ ওভারে মাত্র ১৭৮ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর ৯ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে ১৭৯ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে সফরকারী বাংলাদেশ।
তিনে নেমে ৫০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন ডানহাতি লিটন। ৬৫ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ৫ চার ও ১ ছক্কা। তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৫২ বলে ৩৪ রান। শেষদিকে ৩৮ বলে ৩২ রানের অপরাজিত গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান। মন্থর উইকেটে সাদামাটা লক্ষ্য তাড়া করতেও ৪৯তম ওভার পর্যন্ত ব্যাট করতে হয় বাংলাদেশকে। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১০ উইকেটের ৮ উইকেটই নেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ২৮ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন তাইজুল। সিরিজের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার গেছে তামিমের ঝুলিতে।
ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে এই নিয়ে টানা ১১ ওয়ানডে জিতল বাংলাদেশ। পাশাপাশি টানা দ্বিতীয় ও সবমিলিয়ে তৃতীয় সিরিজে তাদের হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা। নেতৃত্ব দিয়ে দলকে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জেতানোর কৃতিত্ব দেখালেন তারকা বাঁহাতি ওপেনার তামিম। তার অধিনায়কত্বে সাতটি ওয়ানডে সিরিজ খেলে ছয়টিতেই জেতার স্বাদ নিল বাংলাদেশ। রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যদের কাজটা কঠিন করে তুলেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার মোতি। ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। তার ঘূর্ণি বোলিংয়ে এক সময় ১১৬ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেই চাপ দূর করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন সোহান।
ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার উচ্ছ্বাসের আবহের মধ্যেই অন্য এক সংস্করণে বেজে উঠল ওয়ানডে অধিনায়কের বিদায়ের রাগিনী। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন তামিম। গায়ানায় খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি সামাজিক মাধ্যমে টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায়ের কথা জানান ছোট্ট করে, ‘আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আজকে থেকে আমাকে অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে বিবেচনা করুন। ধন্যবাদ সবাইকে।’
তামিমের এই ঘোষণা অবশ্য খুব বড় বিস্ময় হয়ে আসেনি। বরং গত কিছুদিনে এটিকেই অবধারিত বলে মনে হচ্ছিল। ২০২০ সালের মার্চের পর এই সংস্করণে তামিমকে আর দেখা যায়নি। চোটের কারণে কিছুদিন তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ফিট হলেও গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি নিজের ম্যাচ অনুশীলনের ঘাটতি ও তরুণদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
বিশ্বকাপে দল ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে দলে ফেরানোর কথা ওঠে বেশ কয়েকবারই। স্বয়ং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও তার সঙ্গে কথা বলেন কয়েক দফায়। তবে তিনি ফেরেননি। বরং গত ২৭ জানুয়ারি বিপিএল চলার সময় তিনি জানান, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে ৬ মাসের বিরতি নিচ্ছেন। সেই ৬ মাস শেষ হওয়ার দিন দশেক আগে ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান এটিকে রূপ দিলেন স্থায়ী বিদায়ে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭৮ টি-টোয়েন্টিতে ২৪.০৮ গড়ে ও ১১৬.৯৬ স্ট্রাইক রেটে ১ হাজার ৭৫৮ রান করে তামিম শেষ করলেন তার ক্যারিয়ার। তবে দেশের হয়ে তার ম্যাচ ৭৪টি। চারটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি বিশ্ব একাদশের হয়ে।
টি-টোয়েন্টিতে একসময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনি। এখনও তিনি আছেন রান স্কোরারের তালিকায় তিনে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানও তিনিই। ২০১৬ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। ওই বিশ্বকাপে শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দল মিলিয়েই সর্বোচ্চ রান ছিল তার। দেশের হয়ে সবশেষ তিন টি-টোয়েন্টিতে তার রান ৩৯, ৬৫ ও ৪১। তবে কোভিড বিরতির পর আর এই সংস্করণে তিনি ফেরেননি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ সময়টায় তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠছিল। যদিও তার অনুপস্থিতিতে বিকল্প কোনো ওপেনার এখনও থিতু হতে পারেননি দলে। এবার তার আনুষ্ঠানিক বিদায়ে নিশ্চিত হলো, উপযুক্ত ওপেনার খোঁজার সেই চ্যালেঞ্জ সামনেও থাকবে দলের জন্য।
বিদায়ের ঘোষণায় তামিম শুধু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির কথাই উল্লেখ করেছেন। তাই ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে খেলে যাবেন বলেই ধরে নেওয়া যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন