বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক জনপ্রিয়ও নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ (১৯৪৮--২০১২)।তিনি একাধারে অধ্যাপক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার,গীতিকার, চলচ্চিত্রকার,চিত্র নাট্যকার, প্রবন্ধকার,নাট্যকারও বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখকদের পথিকৃত।বাংলা সাহিত্যে তিনি সংলাপ প্রধান নতুন শৈলীর জনক।তিনি ১৩ নভেম্বর১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।তার পিতৃপ্রদত্ত জন্ম নাম সামসূর রহমানও ডাক নাম কাজল।পরে পিতা তাঁর নাম পরিবর্তন করে রাখেন হুমায়ুন আহমেদ। তিনি সিলেটের কিশোরীমোহন পাঠশালা, বগুড়া জিলা স্কুল, ঢাকা কলেজও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক( সম্মান)ও স্নাতকতোর সম্পন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে পিএইচডি করেন। ওনার বাবা সাবেক এসডিপিও জনাব ফয়েজ আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের সময় বরিশালে কর্মরত থাকা অবস্থায় পাকি সেনাদের হাতে শহীদ হন।সেনাবাহিনী হুমায়ুন আহমেদকেও ধরে নিয়ে যান এবং নির্মম নির্যাতন করেন।একপর্যায়ে হত্যার উদ্দেশে গুলি করলেও সৌভাগ্যবশত তিনি বেঁচে যান।
তাঁর প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে› প্রকাশ হয়১৯৭২ সালে। তাঁর রচিত অন্যতম উপন্যাস শঙ্খনীল কারাগার›,অচিনপুর›, মধ্যাহ্ন, জোছনাও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া›, লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার, দেয়াল, হোটেল গ্রেভার ইন› ইত্যাদি। শেষোক্ত উপন্যাসটি অনেকটা আত্মজীবনীও ভ্রমণ কাহিনির মতো।এতে তিনি মার্কিন মুল্লুকে তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা যেমন তাঁর নাম সঠিকভাবে ডাকতেবা উচ্চারণ করতে না পারা।মার্কিন শিক্ষা,সাহিত্য, শিল্প সংস্কৃতির বর্ণনার পাশাপাশি স্থান পেয়েছে তার পরীক্ষাও নব পরিণীতা স্ত্রী গুলতেকিনের সাথে তাঁর প্রেমও তাকে লেখা তাঁর জীবনের লেখা সেরা চিঠির কথা যে চিঠি পেয়ে গুলতেকিন তার পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে এক টিকিটে আমেরিকায় ছুটে যান।উঠে এসেছে তাঁদের জীবন সংগ্রামের কথাও।গুলতেকিনের সেখানে বেবি সিটারের কাজ নেওয়া পরের বাচ্চা দেখভাল করে বেশকিছু ডলার বাড়তি ইনকামও তাঁদের গাড়ি কেনার কথাও বাদ যায়নি। তাঁর শেষ লেখা অসমাপ্ত সিরাত গ্রন্থনবীজী ( বাংলাদেশও মিসির আলীও হিমু চরিত্র দুটি তাঁর অন্যতমও অসাধারণ সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যে যা বিরল।
বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস শাখার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি লেখক শিবির পুরুষ্কার,শিশু একাডেমি পুরুষ্কার,বাংলা একাডেমি পুরুষ্কারও একুশে পদক(১৯৯৪),মাইকেল মধুসূদন পদক,হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরুষ্কারও জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক লাভ করেন।
অসময়, অযাত্রা, বিবাহ, এসো নীপবনে, একদিন হটাৎ, অন্য ভুবন, নিমফুল, খেলা, অচিন বৃক্ষ, খাদক, প্রভৃতি একক এবং এইসব দিন রাত্রি, বহব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, বাকের ভাই তাঁর জনপ্রিয় ধারাবাহিক টেলিভিশন নাটক।
আগুনের পরশমণি (১৯৯৪), শ্রাবণ মেঘের দিন, ন্দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, (২০০৪) ঘেটপুত্র কমলা (২০১২) তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনি বাচসাস পুরুষ্কারও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯ জুলাই ২০১২তারিখে তিনি নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।তাঁকে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়।
প্রতি বছর পাঠক প্রিয় এই লেখকের জন্মও মৃত্যু বার্ষিকীতে তাঁর নিজ হাতে গড়া নুহাশ পল্লীতে লাখো ভক্তরা শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্মরণ করেন তাঁদের প্রিয় এই লেখককে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন