ট্রেনের ছাদে যাত্রী বহন নিষিদ্ধ : যদি ছাদে ভ্রমণ করে তাহলে পরিণতি কি হবে সেটা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারছেন না
অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিগ্রস্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের তিন কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেছেন, রেলে এত অব্যবস্থাপনা কেন থাকবে? কেন টিকিটে কালোবাজারি হবে? কেন মানুষ ট্রেনের ছাদে যাবে? আপনারা কি রেলকে গ্রাস করতে চাইছেন? এ অবস্থা চলতে পারে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। এর আগে গত বুধবার রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে খোঁজ নিতে সরকারপক্ষের আইনজীবীদের বলেছিলেন হাইকোর্ট।
এ প্রেক্ষিতে গতকাল হাইকোর্টে হাজির হন তিন কর্মকর্তা। তারা হলেন, যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন) এএম সালাহউদ্দীন, পরিচালক ট্রাফিক (বাণিজ্য) মো. নাহিদ হাসান খান এবং সহজ ডটকমের কর্মকর্তা যুবায়ের হোসেন। গতকাল শুনানির শুরুতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক আদালতকে বলেন, হাইকোর্টকে সম্মান দেখিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মহিউদ্দিন রনির স্মারকলিপিতে থাকা দাবিগুলো তদন্তে কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রেলওয়ের কর্মকর্তারাও হাইকোর্টে হাজির হয়েছেন। এ পর্যায়ে রেলওয়ের দুই কর্মকর্তা যুগ্ম-মহাপরিচালক (অপারেশন) এএম সালাহউদ্দীন ও পরিচালক ট্রাফিক (বাণিজ্য) মো. নাহিদ হাসান খান এবং সহজ ডটকমের কর্মকর্তা যুবায়ের হোসেন এজলাসে ডায়াসের সামনে আসেন।
তাদের উদ্দেশ করে আদালত বলেন, রেলে এত অব্যবস্থাপনা কেন থাকবে? কেন টিকিটে কালোবাজারি হবে? কেন মানুষ ট্রেনের ছাদে যাবে? আপনারা কি রেলকে গ্রাস করতে চাইছেন? এ অবস্থা চলতে পারে না।
আদালত বলেন, রেল আমাদের জাতীয় সম্পদ। সেই সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের দেয়া হয়েছে। কিন্তু আপনারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ওঠে। ট্রেন থেকে পড়ে তো দুর্ঘটনাও হতে পারে। আর আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমান। এটা হতে পারে না। আপনারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন।
হাইকোর্ট বলেন, আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও রেল কর্মকর্তারা ট্রেনের ছাদে যাত্রী বহনের অনুমতি দেন। এই যাত্রীরা তো আর বিনা পয়সায় ভ্রমণ করে না। যাত্রীদের এই অর্থের ভাগ রেল কর্মকর্তারা পান বলেই ট্রেনের ছাদে যাত্রী ভ্রমণ করেন। আজ থেকে রেলের ছাদে যাত্রী ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হলো। যদি যাত্রী ভ্রমণ করে তাহলে এর পরিণতি কি হবে সেটা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারছেন না।
পরে আদালত বলেন, ট্রেনের ছাদে যাত্রী নেয়া বন্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ও টিকিট কালোবাজারি বন্ধে নেয়া পদক্ষেপ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জানাতে হবে। ওইদিন পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে বলেও জানান আদালত।
রেলখাতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে কমলাপুর রেলস্টেশনে টানা দুই সপ্তাহ ধরে অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে রনি। রেলখাত নিয়ে তার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য জানাতেই গতকাল হাইকোর্টে হাজির হন রেলের তিন সদস্যের প্রতিনিধদল। এ সময় আদালত রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ট্রেনের ছাদে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধের নির্দেশ দেন।
এর আগে রেলের দুর্নীতি, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে গত ১৯ জুলাই রেলের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারকে ৬ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দেন গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান নেয়া ঢাবির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। এর আগে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে দু’টি অভিযোগও করেন তিনি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত বুধবার এক শুনানিতে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার। জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ ভুক্তভোগী রনিকে দিতে বলা হয়েছে।
রনির অভিযোগ, গত ১৩ জুন রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন নিবন্ধনের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা সংস্থা বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে তার পিন কোড ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়। কিন্তু ট্রেনের কোনো আসন পাননি। এমনকি কেন টাকা নেয়া হলো, তার কোনো রশিদও দেয়া হয়নি।
চলতি বছর স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২৬ মার্চ থেকে দেশে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু করে টিকেটিং প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকম। তবে শুরু থেকেই এ সেবা নিয়ে হয়রানির অভিযোগ তোলেন যাত্রীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন