মহামারি করোনার প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। আয় কমেছে সিংহভাগ মানুষের। কাজ হারিয়েছেন অনেকে। তার ওপর বাজার সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া! লাফিয়ে বেড়েছে ও বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। সংসার চালাতে গিয়ে মানুষের যেন ত্রাহি অবস্থা। এই ধারাবাহিকতায় বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ডিম ও মুরগির দাম কমেছে। ডিম ডজনে ১০ টাকা এবং মুরগির দাম কেজিপ্রতি কমেছে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত। একইসঙ্গে কমেছে বেশকিছু সবজির দামও।
গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক ডজন ডিম বিক্রি করছেন ১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আর মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে কোনো কোনো মুদি দোকানে এক পিস ডিম ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
ডিমের দামের বিষয়ে কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, ঈদের আগে ও পরে ডিমের দাম বেশ বেড়ে যায়। গত সপ্তাহে এক ডজন ডিম ১৩০ টাকা বিক্রি করেছি। সেই ডিমের ডজন এখন ১২০ টাকা। বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমেছে। তিনি বলেন, সামনে ডিমের দাম আরও কমতে পারে। কারণ, গরমের কারণে এখন ডিমের চাহিদা কিছুটা কমেছে।
সেগুনবাগিচা কাচাঁ বাজারে ব্যবসায়ী মো. অবু হোসেন বলেন, গরমের কারণে একদিকে ডিমের চাহিদা কিছুটা কমেছে, অন্যদিকে বাজারে ডিমের সরবরাহ বেড়েছে। সবকিছু মিলেই দাম কমছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ডিম ডজনে ১০ টাকা কমেছে।
মুরগির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। আর পাকিস্তানী কক বা সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী হাসান বলেন, এখনো অনেকের বাসায় ঈদের গোশত রয়েছে। এ কারণে কিছুটা হলেও মুরগির চাহিদা কম। অন্যদিকে ঈদের পর বাজারে মুরগির সরবরাহ কম থাকলেও এখন বেড়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা কমেছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন নতুন সবজি শিম। এক কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। শিমের দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, বাজারে নতুন আসার কারণে এখন শিমের দাম একটু বেশি। দাম বেশি হলেও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আমাদের ধারণা আরও কদিন শিম বাড়তি দামে বিক্রি হবে।
এদিকে গত সপ্তাহে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম কিছুটা কমেছে। এখন এক কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। একইসঙ্গে কমেছে টমেটোর দামও। গত সপ্তাহে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া টমেটো এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকায় নেমেছে।
গাজর ও টমেটোর পাশাপাশি কমেছে বরবটির দাম। গত সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটি এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে কমেছে শসার দাম। গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসা এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারে বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা আর পটল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় আরও রয়েছে করলা, কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কাঁচ কলা। বাজারে করলা, কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা এ সবজিগুলো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচ কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে ঢ্যাঁড়সের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢ্যাঁড়স এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ঈদকেন্দ্রিক চাহিদা বাড়ায় গাজর, টমেটো ও শসার দাম অনেক বেড়ে যায়। এখন এসব সবজির চাহিদা কিছুটা কমেছে। ফলে দামও কমেছে। তিনি বলেন, বাজারে নতুন সবজি আসতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে শিম চলে এসেছে। পটলের সরবরাহ অনেক বেড়েছে। যে কারণে পটলের দাম বেশ কম। আমাদের ধারণা কিছুদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি সবজির দাম কমতে পারে।
এদিকে ঈদের পর থেকেই বাড়তি মাছের দাম। অন্যদিকে গোশতের দোকানে ক্রেতা কম থাকলেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির গোশত। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর মাছের চাহিদা বেড়েছে। তাই দামও কিছুটা বেশি। অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, ভালো মাছের পাশাপাশি কম দামের মাছগুলোর এখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের বড় কই মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, তেলাপিয়া বড় সাইজের ২২০ টাকা কেজি, রুই ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ টাকা, পাবদা আকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, শোল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ছোট সাইজের ইলিশ ৮৫০ টাকা কেজিতে আর মাঝারি সাইজের ইলিশ ১০০০ থেকে ১২০০ এবং দেড় কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে গরু, খাসির গোশতের দোকানগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর থেকে এখনও সেভাবে গোশত বিক্রি শুরু হয়নি। ক্রেতারা এখন কম গোশত কিনছেন। বাজারে গরুর গোশত প্রতি কেজি ৭০০ টাকা আর খাসির গোশত ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচা বাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মুন্না মিয়া বলেন, ঈদের পর যখন মানুষ গোশত খাওয়া ছেড়ে মাছের প্রতি বেশি আগ্রহী হলো তখন থেকেই মূলত মাছের দাম বেড়েছে। ঈদের পর থেকে যে মাছের দাম বাড়ল এখনও তা কমেনি। পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, চাষের কই এ গুলো সাধারণত কম দামে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন সেগুলোও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারের মাছ বিক্রেতা জাবেদ বলেন, পাইকারি বাজারেই সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। আমাদের কেনা পড়ছে আগের চেয়ে বেশি দামে, তাই খুচরা বাজারে আমাদেরও বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কেনা দাম কম পড়তে শুরু করলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব। আসলে মাছের দাম ঈদের পর বৃদ্ধি পেয়েছে, এরপর আর কমেনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন