সিলেটের ওসমানীনগরে এক পরিবারের পাঁচ প্রবাসীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হচ্ছেন- উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের ধিরারাই গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম (৫০) ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলাম (১৬)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনারা বেগম, ছেলে সাদিকুল ইসলাম এবং মেয়ে সামিরা ইসলামকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তাজপুর স্কুল রোডস্থ ভাড়া বাসা থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে স্ব-পরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন রফিকুল ইসলাম। অসুস্থ ছেলে সাদিকুল ইসলামকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য গত ১২ জুলাই স্বপরিবারে দেশে ফিরে, এক সপ্তাহ ঢাকায় থাকেন। চিকিৎসা শেষে গত ১৮ জুলাই উপজেলার তাজপুর স্কুল রোড এলাকার তাজপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান অরুনোধয় পাল ঝলকের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় বাসা ভাড়া নেন। গত সোমবার রাতের খাবার শেষে প্রবাসী রফিক মিয়া তার স্ত্রী সন্তানসহ একটি কক্ষে এবং রফিকুল ইসলামের শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন, শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগম ও মেয়ে সাবিলা বেগম অন্যান্য রুমে ঘুমিয়ে পড়েন।
গতকাল সকালে বাসার লোকজন ডাকাডাকি করে প্রবাসী রফিকুল ইসলামসহ তার স্ত্রী-সন্তানরা ঘরের দরজা না খোলায় ৯৯৯ নম্বরে কল করেন। খবর পেয়ে সকাল ১১টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রুমের দরজা ভেঙে রফিকুল ইসলামসহ তার স্ত্রী হুছনারা বেগম, ছেলে মাইকুল ইসলাম, সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিয়া ইসলামকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এসময় কর্তব্যরত ডাক্তার রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করে এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকি তিনজনকে আইসিইউতে প্রেরণ করে। বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে ডাক্তারের বরাৎ দিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত রফিক মিয়ার শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী শোভা বেগমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন, ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা। এছাড়া পিবিআই ও সিআইডির দুটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
সরজমিনে দেখা যায়, যে বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে সেই বাসায় ৩টি শয়ন কক্ষ, ১টি রান্নাঘর, ১টি খাবার কক্ষ রয়েছে। যে কক্ষে প্রবাসী পরিবারের ৫ জন ঘুমিয়েছিলেন কক্ষটির আসববাপত্র এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে।
প্রবাসী হুছনারা বেগমের চাচাতো ভাই গোলাম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা এসেছি। কে বা কারা কিভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা জানি না। আমার বোনের পরিবারের সাথে কারো শত্রুতা নেই।
সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেন, বিষক্রিয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কিভাতে বিষক্রিয়া ঘটেছে তা তদন্তের আগে বলা সম্ভব নয়। যে সকল নিকটাত্মীয় বাসায় ছিলেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন