মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

মরমি কবি বাউল শিল্পী হাসন রাজা

হোসেইন আহমদ চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০৭ এএম

নেশা লাগিলো রে,

বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলো রে
হাসন রাজা পেয়ারির প্রেমে মজিলো রে
বিখ্যাত এই গানটির রচয়িতার সঙ্গে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। তিনি আমাদের মরমি কবি ও বাউল শিল্পী হাসন রাজা।
হাসন রাজার আসল নাম দেওয়ান অহিদুর রেজা চৌধুরী। দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী নামে পরিচিত হলেও হাসন রাজা নামে সমধিক পরিচিত। হাসন রাজার জন্ম ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর। জন্মগ্রহণ করেন সুনামগঞ্জ শহরতলীর ল²ণশ্রী পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও মাতার নাম হুরমত জাহান বিবি। হাসন রাজার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। জনৈক বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব মতান্তরে বাবু রায় চৌধুরী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হাছন রাজার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন অযোধ্যার অধিবাসী। সিলেটে আসার আগে তারা যশোরের কাগদি নামক গ্রামে বসবাস করেন। ষোড়শ শতকের শেষের দিকে হাছন রাজার পূর্বপুরুষ বিজয় সিংহ সিলেটের বিশ্বনাথ থানার কোণাউরা গ্রামে বসতি শুরু করেন। কোনো একসময় বিজয় সিংহ কোণাউরা গ্রাম ত্যাগ করে আরেকটি গ্রামের গোড়াপত্তন করেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষ রামচন্দ্র সিংহদেবের নামানুসারে রামপাশা নামকরণ করেন।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মতে, হাসন রাজা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। অত্যন্ত সহজসরল এবং আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় সহস্রাধিক গান রচনা করেন।
উত্তরাধিকার সূত্রে হাসন রাজা ছিলেন জমিদার। অঢেল সম্পদের মালিক। তাই প্রথম জীবনে ভোগবিলাস এবং সৌখিন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু একটি স্বপ্ন দর্শন তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাঁর মধ্যে বৈরাগ্যভাব চলে আসে। তাঁর বহির্জগত এবং অন্তর্জগতে আমূল পরিবর্তন হয়। তাঁর ধ্যান ধারণা গান হয়ে প্রকাশ পেতে লাগলো। তিনি লিখলেন লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নায় আমার কী ঘর বানাইমু আমি, শূন্যের-ই মাঝার ভালা করি ঘর বানাইয়া, কয় দিন থাকমু আর আয়না দিয়া চাইয়া দেখি পাকনা চুল আমার হাসন রাজা তাঁর ভোগবিলাসী অতীতের কথা স্মরণ করে লিখলেন --ও যৌবন ঘুমেরই স্বপন
সাধন বিনে নারীর সনে হারাইলাম মূলধন। ্র
হাসন রাজা ছিলেন মরমি সাধক কবি। মরমি সাধনার বৈশিষ্ট্য হলো- জাতধর্ম, ভেদবুদ্ধির উপরে উঠে সকল স¤প্রদায়ের ঐতিহ্য আধ্যাত্ম-উপলব্ধির ভেতর দিয়ে আপন করে নেয়া। হাছান রাজার গানে আমরা দেখতে পাই, তিনি একদিকে লিখেছেন -
আমি যাইমুরে যাইমু আল্লার সঙ্গে
হাসন রাজায় আল্লা বিনে কিছু নাহি মাঙ্গে।
আবার পাশাপাশি তাঁর কণ্ঠে শুনতে পাই-
আমার হৃদয়েতে শ্রী হরি আমি কি তোর যমকে ভয় করি শত যমকে তেড়ে দেব, সহায় শিবশঙ্করী। স্পষ্টতই হাসনের সঙ্গীত ও সাধনায় হিন্দু-,মুসলিম উভয় স¤প্রদায়ের পুরাণ এবং ঐতিহ্যের সমন্বয় দেখা যায়। একদিকে লিখেছেন কী হইব মোর হাসরের দিন, রে ভাই মমিন। পাশাপাশি তাঁর আকাঙ্ক্ষার ব্যাকুলতা প্রকাশ পায়- ্র আমি মরিয়া যদি পাই শ্যামের রাঙা চরণ কিংবা দয়াল কানাই, দয়াল কানাই রে, পার করিয়া দেও কাঙ্গালীরে।
হাসন রাজার গানের সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। হাছন উদাস গ্রন্থে তাঁর ২০৬ টি গান সংকলিত হয়েছে।
আরো কিছু গান হাছন রাজার তিনপুরুষ আল ইসলাহ সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পদ্য ছন্দে রচিত ‹ সৌখিন বাহার ‹ নামে হাসন রাজার আরেকটি গ্রন্থ রয়েছে। হাছন বাহার নামে তাঁর আরেকটি গ্রন্থের পাÐুলিপি কিছুদিন আগে আবিস্কৃত হয়েছে। শোনা যায়, তাঁর উত্তরসূরিদের কাছে হাসন রাজার অপ্রকাশিত গানের পাÐুলিপি রয়েছে। এছাড়াও সিলেট সুনামগঞ্জের মানুষের মুখেমুখে হাসন রাজার অনেক গান আছে। কালের নিয়মে কিছু গান বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
১৯২২ সালের ৭ ডিসেম্বর মরমি কবি হাসন রাজা মৃত্যুবরণ করেন। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার গাজীর দরগা নামক পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন