বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড প্রবাসী জিমন্যাস্ট আলী কাদের হকের স্বপ্ন দেশের হয়ে অলিম্পিক গেমসে খেলা। কমনওয়েলথ গেমসের ২২তম আসরের জিমন্যাস্টিক্স ডিসিপ্লিনে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করতে এখন বার্মিংহামে আছেন আলী কাদের। নিজ ইভেন্টে খেলতে আজ জিমনেসিয়ামে নামবেন বালাদেশের এই প্রবাসী জিমন্যাস্ট। তার আগে গতকাল ইংল্যান্ড সময় দুপুরে বার্মিংহাম অ্যারেনার ট্রেনিং সেন্টারে শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি সারলেন কাদের। তিনি অনুশীলনে মগ্ন থাকলেও ‘আই অ্যাম বাংলাদেশি’ কথাটি শুনতেই হাত মেলাতে ছুটে এলেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জন্মগ্রহণকারী আলী কাদের নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে বসবাস করলেও তার পুরো হৃদয় জুড়েই যে বাংলাদেশ রয়েছে তা তার অভিব্যক্তিতেই ফুটে ওঠে। কিন্তু প্রশ্ন করার সঙ্গেই চুপসে গেলেন। কিছুটা লাজুক স্বভাবের কাদের ছবি তুলতেও যেন লজ্জা পাচ্ছিলেন। ঢাকার খিলগাঁওয়ের স্থায়ী বাসিন্দা বাবা আলী হকের মাধ্যমে ২০১৮ সালের মাঝমাঝিতে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্সে তার পদচারণা শুরু। মাত্র ৬ বছর বয়সে অনেকটা মজার খেলা ভেবে জিমন্যাস্টিক্সকে বেছে নেন কাদের। জুনিয়র পর্যায়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসেই লাল-সবুজের জার্সিতে সিনিয়র পর্যায়ে তার প্রথম অংশগ্রহণ। পোল ভল্ট এবং ফ্লোর এক্সারসাইজ ইভেন্টে পারদর্শী কাদের বড় প্রতিযোগিতায় নামতে মুখিয়ে আছেন।
শুধু কমনওয়েলথ নয়, বাংলাদেশের জার্সি গায়ে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার স্বপ্নও তার। সেই স্বপ্নের কথা ছাড়াও কাল ইনকিলাবের সঙ্গে আলাপচরিতায় নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি জিমন্যাস্ট আলী কাদের নিজের এবং বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্সের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবার সিনিয়র পর্যায়ের বড় কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। অনুভূতিটা কেমন লাগছে? এ প্রসঙ্গে আলী কাদের বলেন,‘এর আগে আমি বাংলাদেশের হয়ে জুনিয়র পর্যায়ে খেলেছি। তবে কমনওয়েলথ গেমস তো অনেক বড় আসর। এখানে বিশ^মানের অ্যাথলেটরা অংশ নেন। প্রস্তুতি যতটুকু নিয়েছি, তাতে চেষ্টা করবো ভাল কিছু করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আসলে এটা এমন একটা খেলা যেখানে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। আমি খেলাটা উপভোগ করতে চাই। আমার টার্গেট হলো সেরাটা দেয়া।’
অনেক জনপ্রিয় খেলা থাকতে কেন জিমন্যাস্টিক্সকে বেছে নিলেন? এর উত্তরে কাদের বলন,‘এটা আসলে মজাদার একটা খেলা। আমি ছোটবেলা থেকে টিভি এবং ইউটিউবে দেখে আসছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা খেলার চেয়েও বড় বিনোদন। তাই মজার খেলা হিসেবে জিমন্যাস্টিক্স শুরু করি। যখন বয়স ৬, তখন থেকেই জিমন্যাস্টিক্সে আছি। এখন আমার বয়স উনিশ, অর্থাৎ ১৩ বছর ধরে খেলাটির সঙ্গে যুক্ত আমি। ভালো লাগা থেকে শুরু হলেও এখন তো জিমন্যাস্টিক্সের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলে দেশকে পরিচিত করার সুযোগ পেয়েছি। এটা গর্বের ব্যাপার।’ ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। সিঙ্গাপুর ওপেন খেলার পূর্বে বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন আলী কাদের। দেশে যাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে কাদের বলেন,‘ অনুভূতি কি ছিল তা ভাষায় বলে বোঝাতে পারবো না। কারণ বাবার দেশ মানে তো আমার দেশ। আর আমি তো এখন লাল-সবুজের পতাকা ধারন কওে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি। তাই যখনই সুযোগ পাব, তখনেই বাংলাদেশে যাব।’
জার্সিতে বাংলাদেশের পতাকা; যা দেশের প্রতিটি অ্যাথলেট আন্তর্জাতিক আসরে বুকে ধারন করে বিদেশের মাটিতে খেলে থাকেন। দেশের পতাকা ধারন করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশ নিতে কেমন লাগে? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রবাসী এই জিমন্যাস্ট বলেন, ‘এটা আমার (বুকের পাশে বাংলাদেশের পতাকার ছবি দেখিয়ে) বাবার দেশ। আমি খুবই গর্বিত যে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি। বাবার মুখ থেকে বাংলাদেশ সর্ম্পকে অনেক শুনেছি। আর এখন তো লাল সবুজের জার্সি আমি নিজেই গায়ে জড়াচ্ছি। সত্যিই অন্যরকম লাগছে। দেশের হয়ে খেলতে পারার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। এই জন্য আমার বাবার অবদান অনেক বেশি। খেলার পর স্বপ্নের পরিধিও বেড়ে গেছে। আমি জানি না পারব কিনা, তবে আমার স্বপ্নজুড়েই অলিম্পিক। বিশ^ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতায় আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই। আমি চাই দেশের হয়ে অনেক দিন খেলে যেতে।’ নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পেতে চান আলী কাদের, ‘বাংলাদেশ থেকে কে কিভাবে অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পেয়েছে তা আমি সেভাবে জানি না। তবে একজন অ্যাথলেটের চাওয়া অলিম্পিকের মতো বড় আসরে খেলা। সেই স্বপ্নটা আমি পারফর্ম করে নিজ যোগ্যতায় পূরণ করতে চাই।’
সবশেষে দেশকে ভালোবাসার আরেকটি প্রমাণ দিলেন আলী কাদের। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যন্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে দুস্কৃতিকারীদের হামলার সময় সেখানে অবস্থান করছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বিশ্ব মিডিয়ায় খবরটি তোলপাড় করেছিল। একজন প্রবাসী হিসেবে তখন নিজ দেশের ক্রিকেটারদের বিপদের কথা শুনে মনটা শুধু খারাপই হয়নি, ভয়ও লেগেছিল আলী কাদেরের, ‘আমি যখন শুনতে পাই, মসজিদে হামলা হয়েছে এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তার পাশেই ছিল, তখন একটা ভয় কাজ করেছিল। ওই হামলায় কারো কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা। শেষ পর্যন্ত আমাদের ক্রিকেটারদের বড় কোনো ক্ষতি না হওয়ায় আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করেছিলাম।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন