শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

লঙ্কান খেলাধুলা বাঁচিয়ে রেখেছে ক্রিকেট বোর্ড!

জাহেদ খোকন, বার্মিংহাম (ইংল্যান্ড) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

বিশ্ব ক্রিকেটে এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দলগুলোর একটি শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চললেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে তারা ঠিকই নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ, সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাভায়া রাজাপাকসের দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে চলে যাওয়াসহ রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে লঙ্কান জনগনের আন্দোলন-বিক্ষোভ, প্রতিবাদ আর প্রতিহিংসার কারণে বেশ কিছুদিন উত্তাল ছিল শ্রীলঙ্কা। এসব কিছুর চিত্র গণমাধ্যমের সৌজন্যে দেখেছে বিশ্ববাসী। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার দেশ শ্রীলঙ্কায় জ¦ালানি, খাবার, বিদ্যুৎ, পানির সংকটের খবরও সবার জানা। যে দেশের মানুষ বর্তমানে একটি রুটি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে, যারা জ¦ালানির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে ফিরছে খালি হাতে, সেই দেশের ক্রীড়াঙ্গন কিন্তু সাবলীলভাব চলছে। শত প্রতিকূলতা এবং বাঁধা কোনো কিছুই থামাতে পারেনি লঙ্কান খেলাধুলাকে।
সেদেশের সরকার দেশকে দেউলিয়া ঘোষণা করলেও ক্রিকেট, ফুটবল ও বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসসহ সব ক্রীড়া আসরেই কিন্তু এখন সরব উপস্থিতি লঙ্কানদের। এর পিছনের গল্প হয়তো কেউ জানেন, কেউ জানেননা। কিন্তু আসল সত্য হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও শ্রীলঙ্কার পুরো ক্রীড়াঙ্গনকে বাঁচিয়ে রেখেছে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। ফার্নান্দো রুচির মতো জিমন্যাস্টসহ অনেক অ্যাথলেটের বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে খেলার স্বপ্নপূরণ করেছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। তারা এগিয়ে না এলে চলমান বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে ক্রীড়া দলের বহরই পাঠাতে পারতো না শ্রীলঙ্কার সরকার। জীবনের চাকাই থমকে যেতো লঙ্কান অ্যাথলেট ফার্নান্দোর।
আর্থিক দূরবাস্থার কারণে বার্মিংহামে খেলার স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল তার। পর্যটন এবং রেমিটেন্সের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ জনণের মতো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লঙ্কান ক্রীড়াবিদরাও। কমনওয়েলথ গেমসের ১৪টি ডিসিপ্লিনে অংশ নিতে ১১৪ জন অ্যাথলেটের নাম যখন সরকারের কাছে পাঠানো হয়,তখন কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি শ্রীলঙ্কার ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো। হালই ছেড়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু যাদের রিজার্ভ নেই সেই লঙ্কানদের শেষ ‘সেভিংস’ হয়ে পাশে দাঁড়ায় দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। কমনওয়েলথ গেমস ছাড়াও অন্যান্য খেলাধুলায় ক্রীড়াবিদদের মাঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তারা।
বার্মিংহামে কমনওয়েলথ গেমস কাভার করতে আসা শ্রীলঙ্কান সাংবাদিক কারুপিয়া রামকৃঞ্চ সেদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আসল চিত্রটা গতকাল ফুটিয়ে তোলেন এভাবে, ‘আমি আপনাকে একটা সুন্দর গল্পের কথা বলবো। ক্রিকেট বোর্ড স্পন্সর করছে আমাদের লোকাল অ্যাথলেটদের। কমনওয়েলথ গেমসে যারা খেলতে এসেছেন, তাদের সব খরচ দিচ্ছে আমাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ড। সাধারণত সরকার এসব ক্ষেত্রে অর্থ দিয়ে থাকে। সচরাচর খেলোয়াড়দের আর্থিক সহযোগিতা করার কথা ক্রীড়ামন্ত্রণালয়ের। যা সব দেশের নিয়ম। কিন্তু এই সময়ে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে আমাদের দেশের ক্রীড়া দলের বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেয়াটা অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। সরকার থেকে বলা হয়েছে যে, তারা ব্যয় বহন করতে পারবে না। তখন লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় যে কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণকারী দলকে পুরো সাহায্য করবে তারা।’
দেশটির আরেক সাংবাদিক চাতুকা দিবাসানা জানান, শুধু কমনওয়েলথ গেমসই নয়, পুরো স্পোর্টস চালানোর জন্য প্রায় ৩৫০ হাজার ইউএস ডলার সরকারকে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড। কমনওয়েলথ গেমসের জন্য ৬২ হাজার ৭২০ ডলার এবং দেশটির স্পোর্টস ডেভলাপমেন্ট বাবদ ২৭৮ হাজার ৭৫৬ ইউএস ডলার দিয়েছে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। ফলে বর্তমানে শ্রীলঙ্কার ক্রীড়াঙ্গনের প্রধানই বলা যেতে পারে দেশটির ক্রিকেট বোর্ডকে। কারণ দুই মাসে দেশটিতে তিনজন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। টাকার কারণে ফুটবল কোচের সঙ্গে তারা চুক্তি নবায়ন করতে পারেননি। এরপর এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে নতুন কোচ নিয়োগ দেয় শ্রীলঙ্কা। আর অস্ট্রেলিয়ার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয় করে অর্জিত সব লভ্যাংশ লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড দিয়েছে বাকি খেলাধুলার খরচ চালাতে। তাই বলাই যায়, রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে লঙ্কান ক্রীড়াঙ্গন বাঁচিয়ে রেখেছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন