বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

এবার ভাগ্য বদলাবে রোনালদোর!

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

দুই মৌসুমের মাঝের সময়টাতেও নেই দম ফেলার ফুরসত। ফুটবলারদের জাতীয় দলের ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্লাবগুলোও ব্যস্ত থাকে দল গোছানো ও পরবর্তী মৌসুমের প্রস্তুতিসহ নানান কর্মযজ্ঞে। দল বদলের জানালা সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে। তবে তার আগে সেলহার্স্ট পার্কে আজ রাত ১টায় ক্রিস্টাল প্যালেস ও আর্সেনালের ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ২০২২/২৩ মৌসুমের খেলা। তার আগে কোন দলের কি অবস্থা সে দিকে একটু চোখ বুলানো যাক। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসি ব্যতীত বাকি ৪টি বড় ক্লাবই কম-বেশি গুছিয়ে নিয়েছে তাদের দল। লিগের বাকি ১৪ দলও পিছিয়ে নেই সেই দৌড়ে। যদিও তারা দল বদলের শেষ সময়ে বেশ ব্যস্ত থাকবে এই কাজে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবার এরিক টেন হ্যাগের অধীনে বেশ বড় পরিবর্তন নিয়েই আসছে। জুন মাস থেকে গণমাধ্যম মেতে ছিল রোনালদোর প্রস্থানের গল্প বুনতে। কিন্তু পর্তুগীজ তারকা আভাস দিয়েছেন এবারের মৌসুমে লাল জার্সিতেই খেলার। তবে লিনগার্ড, কাভানি, পগবা, ম্যাটিচ ও মাতা ফ্রি এজেন্টে দল ছেড়েছেন। তাতে আথিক ক্ষতির সঙ্গে ফুটবলীয় ক্ষতিও হয়েছে ম্যানইউর। ক্ষতিটা মধ্যমাঠের। বার্সালোনার ফ্যাঙ্কি ডি ইয়ং কে দিয়ে সে অভাব পূরণ করতে চাইলেও ডাচ প্লেয়ার আসতে নারাজ। এখন পর্যন্ত ডাচ মেলাসিওকে ও আয়াক্স থেকে চড়া মূল্যে (৫৮ মিলিয়ন ইউরো) আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার লিসেন্দ্রো মার্টিনেজকে দলে টানতে পেরেছে রেড ডেভিলরা। আর মধ্যমাঠের জন্য ফ্রি এজেন্টের ডেনিশ মিডফিল্ডার এরিকসনকে সাইন করিয়েছেন। এভারটনে লোনে থাকা ভেন ভিক ফিরে আসায় পুরোনো শীষ্যকে পাচ্ছেন দলটির ডাচ ম্যানেজার। তবে দলের ভারসাম্য রক্ষার্থে একজন স্ট্রাইকার ও সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার কেনাটা জরুরী টেন হাগের জন্য। এই সিজনে ম্যানইউর প্রাথমিক লক্ষ্য সেরা চারে থেকে মৌসুম শেষ করা, চোখটা অবশ্যই পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা। আর গোলের জন্য এবারও চেয়ে থাকতে হবে সেই পুরানো ত্রানকর্তা রোনালদোর দিকেই।
ম্যানচেস্টার সিটি ডিফেন্ডিং লিগ চ্যাম্পিয়ন। কোচ গার্দিওলা দলটির ধনকুবের মালিক শেখ মনসুরের আর্থিক নিশ্চয়তা পেয়ে গেল ৬ বছরে সিটির বেঞ্চ ও একাডেমিকে করেছেন অসম্ভব শক্তিশালী। এর মাঝে ৪ বার লিগ জিতেছে ক্লাবটি। সত্য বলতে এই দলের কমতি ছিল কেবল একজন স্ট্রাইকারের। এই মুহূর্তের সেরা উঠতি স্ট্রাইকার নরোয়েজিয়ান আর্লিং হালান্ডকে বরুশিয়া থেকে ৬০ মিলিয়ন ইউরোর মাধ্যমে দলে ভিড়িয়ে সেই অভাব পূরণ করেছেন গার্দিওলা। রিভার প্লেটের ফরোয়ার্ড হুয়ান আলভারেজও যোগ দিয়েছেন গার্দিওয়ালার তাবুতে। তাছাড়া গুন্দোগান ও রড্রিকে পরিপূর্ণ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য লিডসের ইংলিশ ডিফেন্সিভ মিড কেলভিন ফিলিপসকে আনতে গুণেছেন ৫৮ মিলিয়ন ইউরো। সামনে বিশ্বকাপ থাকায় প্লেয়াররা নিয়মিত খেলতে চায়, সেই নিশচয়তা পেতেই দল ছেড়েছেন স্টার্লিং, জেসুস ও জেনসেঙ্কোকে। এই তিনজনকে বিক্রি করে সিটির উপার্জন ১৪৩ মিলিয়ন ইউরো। আসছে মৌসুমের জন্যও সিটিই লিগ শিরোপার বড় দাবিদার। বড় কোন অঘটন না হলে এই দলকে টপকে শিরোপা জেতা কঠিন।
সাদিও মানে, নেকো উইলিয়ামস, তাকুমি মিনামিও, মার্কো গ্রুজিক, ডেভিড ওর্গি সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারকে বিক্রি করে দিয়েছে মার্সিসাইড দল লিভারপুল। গত মোয়সুমে ১ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে রানার্স আপ হওয়া দলটি এবার রেকর্ড ৭৫ মিলিয়ন ইউরোতে বেনফিকা থেকে কিনেছে উরুগুয়ান স্ট্রাইকার দারউইন নুনেজকে। তাছাড়া ফুলহ্যামের উঠতি পর্তুগীজ উইঙ্গার কার্ভালহোকেও দলে টেনেছে ইয়ুর্গেন ক্লপ। তবে এখনো কোন ডিফেন্ডার না কেনায় সামনের মৌসুমের জন্য বিশাল একটা ঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে ক্লপের। ইংলিশ লিগ মূলত ডিফেন্ডাররাই জেতান, এটা স্যার ফার্গির চিরন্তন এক বাণী। মানের প্রস্থানে জোটা নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। আর সালাহকে ক্লান্তি মুক্ত রাখতেই কার্ভালহোকে আনা। নুনেজ থাকায় বাকি ফরোয়ার্ডদের উপর প্রেসিং ফুটবল খেলার চাপ কিছুটা কম পড়বে।
আর্সেনাল বস মিকেল আর্তেতা ইতিমধ্যেই খরচ করেছেন ১৩২ মিলিয়ন পাউন্ড। গ্যাব্রায়িল জেসুসের জন্য পকেট থেকে গিয়েছে ৫২ মিলিয়ন ইউরো। লেফট-ব্যাক পজিশনের জন্য ৩৫ মিলিয়ন ইউরোতে এনেছেন জেনসেঙ্কোকে, তাইতো নুনো তাভারেজকে লোনে পাঠিয়েছে গানার্সরা। পর্তুগীজ উঠতি মিডফিল্ডার ফ্যাবিও ভিয়েরাকে পোর্তো থেকে এনেছে তারা। কাপ্তান ওদেগার্ড ও ভিয়েরা জুটি এবার ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডারদের কঠিন পরীক্ষায় নিবেন। এদিকে উইলিয়াম সেলিবা লোন থেকে আর্সেনালে ফিরে আসায় রক্ষণের ধারও শানিত হয়েছে লন্ডনের দলটির। সবমিলিয়ে আসছে মৌসুমের সেরা চারের লড়াইয়ে ভালো টেক্কা দিবে অসাধারন ভাবে দল পুনঃর্গঠন করা আর্সেনাল।
ক্রিশ্চিয়ানসেন ও রুডিগার চুক্তির মেয়াদ না বাড়িয়ে ফ্রি এজেন্টে দল ছাড়ায় দারুণ বিপদে আছে ট্মাস টুখেলের চেলসি। একে-তো উত্থানের নায়ক ও পূর্বের মালিক আব্রাহামভিচ রাজনীতির প্যাচে পড়ে বাধ্য হয়ে দল বেচেছেন। সেই সাথে ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর সহ অনেক কর্মকর্তা বিদায় নিয়েছেন। বহু প্লেয়ার আর চুক্তি বাড়ায় নি। এমনকি রাফিনহা ও কুন্দেকে দলে টানতে চাইলেও তারা বার্সায় নাম লিখিয়েছেন। রাহিম স্টার্লিংকে ৫৬ মিলিয়ন ইউরোতে কিনে রাফিনহার অভাব করলেও, লক্ষ্য থেকে ফসকে যাওয়া কুন্দের বিকল্প এখনও খুঁজে পাননি টুখেল। যদিও নাপোলি থেকে কুলিবালিকে ৩৮ মিলিয়ন ইউরোতে দলে ভিড়িয়েছেন তবে ডিফেন্সের অভাব পূরন হয়নি। তরুণ মিডফিল্ডার চুকুয়েমেকাকে দলে টানায় মধ্যমাঠ নিয়ে নির্ভার থাকবেন টুখেল। অন্যদিকে দলটির রেকর্ড সাইনিং লুকাকু গত মৌসুমে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে ধারে ইন্টারে পাঠিয়েছেন। সব মিলিয়ে দলটির অবস্থা গত মৌসুমের অপেক্ষা নরবড়ে। এবারের লিগ দৌড়ে তাই সিটি বা লিভারপুলের সাথে পেরে উঠার সম্ভাবনা কম।
ইংলিশ লিগে এবারের সবচেয়ে বড় চমক হয়ে আসতে পারে কন্তের টোটেনহ্যাম হটস্পার। দল বদলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা ক্লাবটি এবার সবার আগে দল গুছিয়েছে। ইতালিয়ান কোচ কন্তে স্পার্স সভাপতি লেভিকে বাধ্য করেছেন ১৫০ মিলিউন ইউরোর নিশ্চয়তা দিতে। সেটা পেয়েই একে একে দলে টেনেছেন ইভান প্যারিসিচ রিচার্লিসন, বিসোমা, স্পেন্স ও লেংলেটের মতন প্লেয়ারদের। কন্তে দলে টেনেছেন সব তার চাহিদা ও দর্শনের সাথে যায় এমন প্লেয়ার। ক্রিয়েটিভিটের চেয়ে ডিসিপ্লিনে মনোযগী কন্তে যদি লিগ জিততে পারে, তবে ৬১ বছরের লিগ শিরোপার ক্ষরা কাটবে নর্থ লন্ডনের দলটির।
তবে কাগজ-কলমের সব হিসেব উল্টে দিতে পারে মাঠের ফুটবল। যা হরহামেশাই ইপিএলে ঘটে থাকে। তাইতো বিলিয়ন পাউন্ডের ক্লাবগুলোকে পিছনে ফেলে লেস্টারের মত ক্লাবও চ্যাম্পিয়ন বনে যায় পৃথীবির সেরা লিগটিতে!

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন