‘বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতেও জেতা সম্ভব’- হারারেতে পরশু ম্যাচের আগে একথা জোর গলায় বলতে যেন ভুলে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে দল। সর্বশেষ ম্যাচেরটির পূর্বে, ২০১৩ সালের ৮ মে বুলাওয়েতে বাংলাদেশের সাথে জয়ের স্বাদ পেয়েছিল তারা। সেখান থেকে ২০২২ সালের ৫ আগস্ট, হারারে। মাঝে টানা ১৯টি ম্যাচ জেতে টাইগাররা। এই সময়টাতে অনেক পালাবদল হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটে। বাংলাদেশ দল একদিনের ক্রিকেটে বলার মত স্থান অর্জন করেছে বিশ্বাঙ্গনে। যে দলটা ৫০ ওভারের সংষ্করণে কদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে সিরিজ জিতে আসে, ক্যারিবিয়ানদেরকে তাদের মাঠেই ধবলধোলাই করতে পারে, তারাতো ওয়ানডেতে বড় শক্তিগুলোর একটিই। সে বাংলাদেশকে ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে যেভাবে হারাল জিম্বাবুয়ে, তাতে মনে হচ্ছিল এমনটাতো তারা হর হামেশাই খেলে। ১০ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে এই জয়ের রূপকার ছিল সিকান্দার রাজা আর একেবারেই আনকোড়া মাত্র ৪র্থ ম্যাচ খেলতে নামা ইনোসেন্ট কাইয়া। দলটির কোচ ল্যান্স ক্লুজনার খেলোয়াড়ী জীবনে ছিলেন মারাত্মক আক্রমণাত্মক। ঠিক সেই ধাঁচের ক্রিকেটই এই সিরেজে এখন পর্যন্ত খেলে এসেছে তার দল। এই নব উন্মাদনায় উড়তে থাকা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ সিরিজ ও মান বাঁচাতে দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামছে তামিম বাহিনী।
বাংলাদেশ দলের মুশফিক, তামিম ও রিয়াদের পূর্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারার তিক্ত স্বাদ ছিল। বাকি ৮ জনের না। প্রতিপক্ষ দলের কেবল রেগিস চাকাভা ও রাজারই ছিল টাইগারদের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের অভিজ্ঞতা। প্রথম ওয়ানডের আগে বাংলাদেশ দলের আরেক তিক্ত ‘প্রথমের’ অভিজ্ঞতা হয়। তা হচ্ছে জিম্বাবুয়ের কাছে টি-২০ সিরিজ হারের কলঙ্ক গায়ে মাখা। এতো নেতিবাচকতার পরও দলের কেউই ভাবেননি হারারেতে প্রথম ওয়ানডে হারতে পারে তারা। সেই ধরনের চিন্তা আসলে ইনিংসের প্রথমে হয়ত এতো সাবধানী ব্যাটিংয়ের আশ্রয়তলে যেতেন না দুই ওপেনার। এমনকি জিম্বাবুয়ে ইনিংসের সময় কাইয়া-রাজা জুটি জমে যাওয়ার পরও কেউই কল্পনা করেনে এই ম্যাচ স্বাগতিকরা তাদের পকেটে ভড়বে।
তবে কেউ অবশ্য এটাও ভাবতে পারেননি যে, এক ম্যাচে ৩টি সহজ ক্যাচ হাত ফসকাতে পাড়ে টাইগার ফিল্ডারদের। ব্যাটিংয়ের সময় অনাকাক্সিক্ষত চোটের কারণে দুই অভিজ্ঞ কিপার ব্যাটার মুশফিক ও লিটন বোলিংয়ের সময় মাঠে নামতে পারেননি। দল ভীষণভাবে এই দুইজনের ফিল্ডিং সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতার অভাব বোধ করেছে মাঠে। তাসকিনের বলে সিকান্দার রাজার ক্যাচ ছেড়েছিলেন বদলি ফিল্ডার তাইজুল। এই বাঁহাতি স্পিনারের মাঠেই থাকার প্রয়োজন পড়তো না যদি মুশি আর লিটন ফিট থাকতেন। ডিরেক্ট থ্রুতে রান আউট মিসের ঘটনা বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বাভাবিক ঘটনা। গত ম্যাচেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। শেষ দিকে বিজয় স্টাম্পিংও মিস করলেন। এতো সব ভুলের সুযোগ নিয়ে জীবন পাওয়া রাজা পরে আরও ৯২ রান যোগ করলেন। ম্যাচ জেতানো শটে ৬ হাঁকিয়ে যে গগনবিদারী চিৎকার করলেন তা যেন ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাংলাদেশ থেকে যেন শোনা গেল। কাইয়াকে নিয়ে গড়েছেন বাংলদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৯২ রনের জুটি। যাতে পিছনে পড়ে গিয়েছে ১৯৯৭ সালে করা ফ্লাওয়ার ভাইদের পূর্বের ১৬১ রানের জুটি।
এদিকে ম্যাচ হারানোর সাথে লিটনকেও এই সিরিজ থেকে হারালো বাংলাদেশ। এই ওপেনারের এশিয়া কাপ খেলা নিয়ে আছে সংশয়। হাতে চোট আছে মুশিরও। কাইয়ার শট ঠেকাতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পাওয়া শরীফুলের অবশ্য খেলার সম্ভাবনা আছে। তবে আজকের ম্যাচ জয়ের জন্য তামিম নিঃসন্দেহে কামনা করবেন ফিল্ডিং ইউনিটির যথাযথ পারফরম্যান্স।
এদিকে একই মাঠে দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই শেখ নাঈম হাসান ও ইবাদত হোসাইন জিম্বাবুয়েতে দলের সঙ্গে যোগ দিবেন। নুরুল হাসান সোহান ও লিটন দাসের বদলি হিসেবে এদুজনের আফ্রিকা গমন। ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে বিসিবি।
‘ফর্মে ফেরা দরকার? চিন্তার কিছু নেই, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেল।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ ক্রিকটপ্রেমীদের মাঝে এই ধারণা খুবই জনপ্রিয় ছিল। তবে আজকের ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসের সাথে এই কথা লিখার বা বলার মানুষ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন