বিদায় বার্মিংহাম, দেখা হবে ভিক্টোরিয়ায়। বিদায়ের করুণ সুরে ভাঙলো বার্মিংহা কমনওয়েলথ গেমসের মিলন মেলা। কমনওয়েলথভুক্ত ৭২ দেশের অংশগ্রহণে বার্মিহামের আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে সাড়ে ৩ ঘন্টার জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে গত ২৮ জুলাই পর্দা উঠেছিল ১২ দিন ব্যাপী এবারের গেমসের। উদ্বোধনী ভেন্যুতেই গতকাল (সোমবা) স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টায় (বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টা) দেড়ঘন্টার সমাপণী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ অনুষ্ঠানেই ২০২৬ কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজক অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া কতৃপক্ষের হাতে গেমসের পতাকা ও ব্যাটন তুলে দিয়ে বার্মিংহাম গেমসকে বিদায় জানান আয়োজকরা। উদ্বোধনীর মতই সমাপণী অনুষ্ঠানের পুরোটা জুড়েই ছিল স্থানীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের উপর বিশেষ আয়োজন। যেখানে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। বিদায় বেলায় চোখ জুড়ানো আতশবাজির আলোকরশ্মির খেলাতে মন ভরে যায় দর্শকদের। যা দেখে আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো দর্শক দিশেহারা হয়ে পড়েন।
সমাপনীর আগে পদকের লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়াকে দারুণ চ্যালেঞ্জ জানিয়েও সেরা হতে পারেনি স্বাগতিক ইংল্যান্ড। বরাবরের মতো কমনওলেথ গেমসের ২২তম আসরেও অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য। ৬৭টি স্বর্ণ, ৫৭ রৌপ্য ও ৫৪টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৭৮টি পদক জিতে সেরা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পদক তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্বাগতিক ইংল্যান্ড জিতেছে ৫৬ স্বর্ণ, ৬৪ রৌপ্য ও ৫৩ ব্রোঞ্জসহ মোট ১৭৩টি পদক।
বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসকে ভুলে যেতে চাইবেন বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। কারণ এ আসর থেকে তাদের প্রাপ্তি শুধুই ব্যর্থতা। গেমসের সাঁতার, অ্যাথলেটিক্স, জিমন্যাস্টিক্স, বক্সিং, ভারোত্তোলন ও কুস্তি- এই সাতটি ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়ে কোনোটারই বাছাইয়ের গন্ডি পার হতে পারেননি বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। অ্যাথলেটিক্স ও জিমন্যাস্টিক্সে লাল-সবুজের প্রবাসী দুই খেলোয়াড় যথাক্রমে ইমরানুর রহমান ও আলী কাদেরকে ঘিরে স্বপ্ন থাকলেও তারাও হতাশ করেছে জাতিকে। লন্ডন প্রবাসী অ্যাথলেট ইমরানুর ১০০ মিটার স্প্রিন্টের হিট থেকে বাদ পড়লে, নিউজিল্যান্ড প্রবাসী জিমন্যাস্ট আলী কাদেরেও অবস্থা একই। যৎসামান্য সাফল্য এসেছে টেবিল টেনিস থেকে। এই ডিসিপ্লিনে পুরুষ দলগত ইভেন্টে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়া দলটিকে নিয়েই গল্প বলতে পেরেছেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কর্মকর্তারা।
এবারের কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান যেমন স্বর্ণ জিতেছে, তেমনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে থাকা শ্রীলঙ্কাও পেয়েছে রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জপদক। সাফল্যের দিক দিয়ে তারা বার্মিংহামকে স্মরণীয় করে রাখলেও বাংলাদেশের জন্য গেমসটি ছিল ব্যর্থতার গল্পে ঠাসা। নিজেদের ঘরে গেমস বলে ইংলিশদের উন্মাদনাও বার্মিংহামে ছিল বেশি। প্রতিটি ভেন্যুতে দর্শক-সমথর্কদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কমনওয়েলথের এই প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে এবার দারুণ লড়াই হয়েছে ইংলিশদের। এক সময় মনে হয়েছে এ বুঝি অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য শেষ করে উত্থান ঘটবে ইংল্যান্ডের। বিশেষ করে জিমন্যাস্টিক্সে সাফল্যের দিক দিয়ে ইংল্যান্ড ছাড়িয়ে গেছে অতীতকে। আর্টিস্টিক্স এবং রিদমিক মিলিয়ে এবার ১১টি সোনা জিতেছেন স্বাগতিক জিমন্যাস্টরা। তবে সাঁতারে বরাবরের মতো ধরা ছোয়ার বাইরে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান সাঁতারুরা। তাদের জেতা ২৫ স্বর্ণের বিপরীতে ইংল্যান্ড জিতেছে ৮ স্বর্ণপদক।
অ্যাথলেটিক্সেও ছিল অস্ট্রেলিয়ানদের জয়জয়কার। ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাথলেটরা জিতেছেন ১০ সোনা। তবে নারী অ্যাথলেটিক্সে দর্শক-সমর্থকদেও মন জয় করেছেন জ্যামাইকান স্প্রিন্টের রানী এলিয়েন থম্পসন হেরাথ। তিনি ১০০ স্প্রিন্টে সোনা জিতে দ্রুততম মানবীর খেতাব জিতলেও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে নতুন রেকর্ড গড়ে স্বর্ণ জিতেছেন। তাই বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস তার জন্য থাকছে স্বরণীয় হয়েই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন