ব্যালন ডি’অর আর লিওনেল মেসির রসায়নটা ছিল ১৫ বছরের পুরাতন। সেই যে ২০০৫ সালে প্রথম এই পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় আর্জেন্টাইন জাদুকরের নাম উঠে, তারপর গত বছর পর্যন্ত সে ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের পুরষ্কারের জন্য মনোনীত ৩০ জনের তালিকায়ই নেই মেসির নাম। তবে প্রত্যাশিতভাবেই তালিকাতে আছেন করিম বেনজেমার নাম ও রবার্ট লেভানদোভস্কির। সঙ্গে আছে ৫ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম। শুক্রবার মধ্যরাতে ৬ ধাপে মোট ৩০ জন ফুটবলারের নাম প্রকাশ করে ফ্রান্স ফুটবল।
রিয়ালকে গত মৌসুমে লা লিগা ও ইউরোপের সেরা বানানোতে করিম বেনজেমার ছিল অসামান্য অবদান। গোটা মৌসুমে করেছেন ৪৪ গোল ও ১৫ এসিস্ট। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৫ গোল করে হয়েছিলেন মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে নক আউটে তার ১০ গোলের সুবাদে রিয়াল কাটিয়েছিল পিএসজি, চেলসি ওম্যানসিটিকে তারা যথাক্রমে হারায় সেকেন্ড রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমি ফাইনালে। এটাতো গেল ক্লাবের হিসেব। ফ্রান্স জাতীয় দলকে ন্যাশন্স লিগ জয়ী করার পথে সেমি এবং ফাইনালে করেছেন গোল। সব মিলিয়ে এবারের পুরষ্কারের জন্য অন্যদের থেকে বহু এগিয়ে এই ফ্রেঞ্চ পোচার। একই দিনে ঘোষণা আসা উয়েফার সেরা প্লেয়ারের জন্য মনোনীত ৩ জনের মধ্যে আছেন বেনজেমার। বাকি দুইজন হচ্ছেন তার ক্লাব সতীর্থ থিবো কর্তোয়া ও ম্যান সিটির বেলজিয়ান মিডফিলদার কেভিন ডি ব্রুইনা।
এদিকে মেসির মত তার বন্ধু ও সতীর্থ নেইমারও নেই এই পুরষ্কারের তালিকাতে। তবে পিএসজির আরেক তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন সেরা ৩০ জনের মধ্যে। এই ২৩ বছর বয়সী উইঙ্গার অবশ্য পুরষ্কার অনেক আগেই তার জাতীয় দলের সতীর্থকে সেরা মেনে নিয়েছে, ‘করিম ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুম পার করেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জইয়ী সে, আর এই শিরোপাইতো ব্যালন ডি’অর জয়ে মূল পার্থক্য গড়ে। তার হাতে এবার যদি এই পুরষ্কার না উঠে তাহলে ব্যাল ডি’অরের প্রতি সারাজীবনের জন্য আমার বিশ্বাস উঠে যাবে।’ এদিকে পোলিশ স্ট্রাইকার লেভান্দোভস্কিও দারুণ এক মৌসুম কাটিয়েছিলনে সদ্যই তার জন্য অতীত হওয়া ক্লাব বায়ার্নে। চ্যাম্পিয়ন লিগে ১৩ গোলের পাশাপাশি গোটা সিজনে পেয়েছেন মোট ৫০ গোলের দেখা। ক্লাবকে জিতিয়েছিলেন বুন্দেসলিগার শিরোপা। এবারের ব্যালন ডি’অরে বেনজেমার মূল প্রতিযোগিও তিনি।
এদিকে রেকর্ড ৭ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি না থাকলেও রোনালদোর নাম আছে ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকাতে। ম্যানইউর হয়ে দলগত সফলতা না থাকলেও গোটা মৌসুমে কঠিন সময়ের মাঝে করেছেন ২৪ গোল ও ৩ এসিস্ট। ১৮ গোল করে ইপিএলের দ্বিতীয় সেরা গোলতার তালিকায় ছিলেন। এবারের পুরস্কারের জন্য গোটা এক বছরকে বিবেচনায় না নিয়ে ইউরোপের ফুটবলের মৌসুমকে (আগস্ট-জুলাই) নতুন মানদণ্ড হিসেবে নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর প্যারিসে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজইয়ীর হাতে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হবে।
‘ফ্রান্স ফুটবল’ ম্যাগাজিন ১৯৬৪ সাল থেকে দিয়ে আসছে এই নপুরষ্কার। কিন্তু ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কেবল ইউরোপের ফুটবলারদের এই পুরষ্কারের জন্য বিবেচনা করা হত। তারপর ইউরোপিয়ান লিগে খেলা সকল প্লেয়ারদের জন্যই উন্মুক্ত করা হয় ব্যালন। ২০০৭ সাল থেকে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন পুরষ্কারটির জন্য বিশ্বের সকল প্লেয়ারদের বিবেচনায় আনে। আর ২০১০ থেকে ফিফার সাথে একত্রিত হয়ে ফিফা ব্যালন ডি’অর নামকরণে এই সম্মানানা প্রদান শুরু হয়। এটি অব্যহেত থাকে ২০১৫ পর্যন্ত। এরপর সাংবাদিকদের ভোটে আবারো ব্যালন ডি’অর নামে পুরস্কারটি দিয়ে আসছে ফ্রান্সের ম্যাগাজিনটি।
২০২২ ব্যালন ডি’অরের ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা :
থিবো কোর্তোয়া (রিয়াল মাদ্রিদ), রাফায়েল লেয়াও (এসি মিলান), ক্রিস্তোফা এনকুনকু (লাইপজিগ), মোহামেদ সালাহ (লিভারপুল), জসুয়া কিমিখ (বায়ার্ন মিউনিখ), ট্রেন্ট অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড (লিভারপুল), ভিনিসিউস জুনিয়র (রিয়াল মাদ্রিদ), বের্নার্দো সিলভা (ম্যানচেস্টার সিটি), লুইস দিয়াস (লিভারপুল), রবের্ত লেভানদোভস্কি (বায়ার্ন মিউনিখ), রিয়াদ মাহরেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), কাসেমিরো (রিয়াল মাদ্রিদ), সন হিউং মিন (টটেনহ্যাম হটস্পার), ফাবিনিয়ো (লিভারপুল), করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ), মাইক মিয়াঁ (এসি মিলান), হ্যারি কেইন (টটেনহ্যাম হটস্পার), দারউইন নুনেস (বেনফিকা), ফিল ফোডেন (ম্যানচেস্টার সিটি) সাদিও মানে (লিভারপুল), সেবাস্তিয়ান হলার (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), আন্টোনিও রুডিগার (চেলসি), কেভিন ডে ব্রুইনে (ম্যানচেস্টার সিটি), লুকা মদ্রিচ (রিয়াল মাদ্রিদ), আর্লিং হলান্ড (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), দুসান ভ্লাহোভিচ (জুভেন্টাস), জোয়াও কানসেলো (ম্যানচেস্টার সিটি), কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি), ভার্জিল ভন ডাইক (লিভারপুল)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন