অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করেছেন দেশের বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকরা। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে গতকাল থেকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারাদেশের ১৬৬ চা-বাগানে ধর্মঘট শুরু হয়। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, চা-শ্রমিকরা মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন শ্রমিকেরা। তবে, দাবি মেনে না নেওয়ায় গত শুক্রবার অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় চা শ্রমিক ইউনিয়ন।
গতকাল সকালে মৌলভীবাজার লোহায়ওনি চা-বাগানে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি আদায়ে বিভিন্ন সেøাাগান দিতে দেখা গেছে। কর্মসূচিতে আসা নারী চা-শ্রমিক সবিতা গড়াইত বলেন, আমাদের দুঃখ কেউ বোঝে না। আমরা ৪ দিন কর্মবিরতি করেছি। কিন্তু কেউ আমাদের এসে আশ্বাস দিলো না। আমরা এত কষ্ট করে কাজ করি, কিন্তু আমাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। চাল, ডাল, তেল সবকিছুর দাম বেড়েছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ আছে। অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হয়। এর মধ্যে প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ছে না।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলছে। দেশের ১৬৬ চা-বাগানে এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। ৩০০ টাকা মজুরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। দেশের বিভিন্ন বাগানের চা-শ্রমিকেরা একত্রিত হয়েছেন। বাগানে বাগানে সমাবেশ হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশি চা-সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনা চলাকালে এভাবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করা বেআইনি। এখন চা-বাগানে ভরা মৌসুম। কাজ বন্ধ রাখলে সবার ক্ষতি। তারাও এই মৌসুমে কাজ করে বাড়তি টাকা পায়।
মালিকপক্ষের সঙ্গে চা-শ্রমিকদের আলোচনা প্রায় ১৯ মাস ধরে চলছে। কিন্তু, শ্রমিকদের নতুন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, জানতে চাইলে গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, ‹আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি যাতে তাদের কাজে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশ টি-বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ১৬৬টি চা-বাগান রয়েছে।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিসিএস) সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান নোমান হায়দার চৌধুরী বলেছেন, চা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে এ ধরণের আন্দোলন করতে পারেনা। তারা দেশিয় আইন অমান্য করে চা শিল্পের ক্ষতি করছেন এই আন্দোলন অন্যায় এবং অবৈধ বলে তিনি জানান।
এদিকে মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন। গতকাল সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা চায়ের পাতা উত্তোলন ও চা ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগ না দিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ফ্যাক্টরি এলাকায় তাদের দাবি আদায়ের লক্ষে অবস্থান নেন। দুপুর ১২ টার দিকে বিভিন্ন বাগান থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমুহনায় জড়ো হন। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল পালন করে। সমাবেশে চা শ্রমিকরা জানান, সাপ্তাহিক ছুটি রোববার ও শোক দিবসের ছুটি আগামী ২দিন।
চুরারুঘাট (হবিগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলা চুনারুঘাটের ২৪ টি চা বাগান শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক অবরোধ করেছে। গতকাল সকাল থেকে মহা সড়কের উপজেলার চান্দপুর বাজারে তারা সমবেত হয়। চা শ্রমিকরা চান্দপুর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিকেলে হাজার হাজার চা শ্রমিক নারি পুরুষ পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে চুনারুঘাট মধ্যবাজারের সমাবেশে মিলিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর, চুনারুঘাট উপজেলা আ. লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, প্রেসক্লাব সভাপতি জামাল হোসেন লিটন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিতুর রহমান রোমন ফরাজী , জাকির হোসেন পলাশ, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল,খায়রুন আক্তার প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন