ইউরোপিয়ান ফুটবলপ্রেমীরা রোববারকে বলে ‘সুপার সানডে’। কারণ এই দিনেই বিভিন্ন লিগের বড় ম্যাচগুলো হয়ে থাকে। পরশু যেমন ইউরোপসহ সারা বিশ্বের নজর ছিল চেলসির মাঠ স্টামফোর্ড ব্রিজে। এদিন লন্ডন ডার্বিতে মুখোমুখি হয়েছিল চেলসি ও টটেনহ্যাম। আক্রমণ পাল্টাআক্রমণে খেলা হল জমজমাট, নাটকীয়তারও ছিল না অভাব। তবে সব কিছু ছাপিয়ে গেল দুই দলের কোচ টমাস টুখেল ও অ্যান্তোনিও কন্তের ম্যাচ পরবর্তী হাতাহাতি! হ্যারি কেইনের শেষ মুহূর্তের গোলে প্রতিপক্ষের মাঠে ড্রয়ের সুবাদে, মূলবান এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠে ছাড়ে স্পার্স। তবে দুই কোচের ওমন অ-ফুটবলীয় আচরণে যেন হারল ফুটবলই।
চেলসির জার্মান মিডফিল্ডার কাই হাভার্টজ ম্যাচের দুয়ার্ধেই মিস করেন দারুণ দুটি সুযোগ। তবে ম্যাচের ৩৮ মিনিটে ব্লুজদের এগিয়ে দেন তাদের দুই ডিফেন্ডার কুকেরেয়া ও কুলিবালি। এই মৌসুমেই প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে চেলসি এই দুজনকে তাদের ডেরায় টানে। স্পার্সের হয়ে প্রথমার্ধে সেসেগনন আর বিরতির পর কেইন ও গতবারের ইপিএলের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার সন মিস করেন গোল করার ৩টি সুযোগ। কুকুরেয়ার কর্নার থেকে উড়ে আসা বলটি সম্পূর্ন আনমার্কড কুলিবালি দারুন ভলিতে স্পার্সের জালে জড়ান। ৬৮ মিনিটে ডেনিশ হইবিয়ার সমতায় ফেরান অতিথিদের। এই গোলের পরই টুখেলের সামনে বুনো উল্লাস করে কন্তে, তখন হাতাহাতি হওয়ার আগেই তা থেমে যায় ডাগ আউটের বাকিদের চেষ্টায়। ৭৭ মিনিটে আরেক ডিফেন্ডার রিচ জেমস ব্লুজদের পুনরায় এগিয়ে দেন। যখন চেলসির জয় নিশ্চিত মনে হচ্ছিল তখনই নাটক। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা ৬ মিনিটের সময় স্পার্সের নতুন সাইনিং পেরিসিকের কর্নার থেকে হেড করে গোল করেন কেইন। ২-২ গোলে ম্যাচ ড্র হওয়ার পর ভাষ্যকার বলছিলেন, ‘এখানেই নাটকের সমাপ্তি।’ তখন করমর্দন করতে গিয়ে চরম উত্তেজনার জন্ম দেয় দুই দলের কোচ। ভাষ্যকার বলে উঠলেন, ‘সংশোধন, ডাগ আউটের নাটক সবে শুরু!’ বাকিরা এসে তাদের সরিয়ে নেয়ায় ঘটনা খুব বেশিদূর এগোয় নি। তবে ম্যাচ রেফারি অ্যান্থনি টেলর দুই কোচকেই রেড কার্ড দেখান।
ম্যাচ পরবর্তী সাক্ষৎকারে টুখেল রেফারিকে এক হাত নিলেন, ‘টেলরকে চেলসি ম্যাচের বাহিরে রাখাই ভালো।’ কর্নার থেকে কেইনের গোলের আগে স্পার্স ডিফেন্ডার রোমেরো চুল ধরে টান দেন কুকুরেলার। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে জার্মান কোচ বলেন,’ চুল টানা কবে থেকে বৈধ হল? কবে থেকে এটা ফাউল নয়? সামনের ম্যাচে আমি কোচিং করাতে পারবো না কিন্তু সে (টেলর) ঠিকই বাঁশি বাজাবে।’ কন্তের সাথে লেগে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘হাত মেলানোর সময় চোখে চোখ রাখতে হয়, এটি জেনে এসেছি।’ কন্তে অবশ্য সেই ব্যাপারে গেলেনই না, ‘এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কিছু হয়ে থাকলে সেটা তার আর আমার মধ্যে।’ তবে জেমসের লিড এনে দেওয়া গোলের পর টুখেল যে আক্রমণাত্মক উদযাপন করেন সেই ছবি ব্যবহার করে ইতালিয়ান কোচ পরে নিজের ইনাস্টাগ্রামে লিখেন, ‘ভাগ্য ভালো যে আমি তোমাকে দেখিনি। তোমাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেওয়াটাই যথার্ত হত।’
এদিকে লা লিগায় কষ্টার্জিত জয় দিয়ে মৌসুম শুরু করল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ম্যাচের শুরুতেই মাদ্রিদের অভিজাতরা প্রতিপক্ষ আলমেরিয়ার কাছে পায় ‘গার্ড অব অনার’। তবে এরপর আর ছেড়ে কথা বলেনি তারা। নিজেদের মাঠ পাওয়ার হর্সে ম্যাচের ৬ষ্ঠ মিনিটেই আলমেরিয়াকে এগিয়ে দেয় বেলজিয়ান স্ট্রাইকার রামজানি। এরপর প্রথমার্ধে ভালভার্দে, বেনজেমা ও ভিনিসিয়ুস মিস করেন গোল করার সুযোগ। একই সাথে আলমেরিয়ার গোলকিপার ফের্নান্দো মার্টিনেজও চীনের প্রাচীর হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন রিয়াল প্লেয়ারদের সামনে। বিরতির পরের ১৫ মিনিটও রিয়ালকে হতাশ করতে থাকে ৩২ বছর বয়সী এই গোল কিপার। ৬১ মিনিটেও ভিনিসিয়ুসকে রুখে দেন এই কিপার। তবে বেনজেমা হয়ে সেই বল ভাসকেসের কাছে গেলে গোল করতে ভুল করেননি এই স্পেনিশ সব্যসাচী। বদলি হিসেবে নামার ১ মিনিটের মাথায় ফ্রি কিক থেকে দারুণ এক গোল করেন ডেভিড আলাভা। ম্যাচের ৮৫ মিনিটের সময় আলমেরিয়ার সানচেজ কর্তোয়াকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন। বার্সা প্রথম ম্যাচেই পয়েন্ট হারিয়েছে। তাই এই পূর্ন ৩ পয়েন্ট পেয়ে দারুন খুশি বিয়াল বস আনচেলত্তি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন