শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভূমন্ডল-নভোমন্ডলের ক্ষমতা ও রাজত্বের দাবীদার একমাত্র মহান আল্লাহ

খুৎবা পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

আমরা দুনিয়ার ক্ষমতা, অর্থ, প্রভাব-প্রতিপত্তির লোভে বিভোর থেকে আখিরাতকে ভুলে গিয়েছি। সর্বপরি আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে ব্যর্থ বিধায় আজ আমাদের উপর এত গযব ও আযাব। আমরা ভুলে গিয়েছি ভূমন্ডল-নভমন্ডেলের ক্ষমতা ও রাজত্বের দাবীদার একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। দাম্ভিকতা, ক্ষমতা, পেশি ও মস্তিস্কশক্তি, সামরিক ও পারমানবিক শক্তি আল্লাহর আযাবের কাছে ঠুনকো বালুকণা ছাড়া কিছুই না। যুগে যুগে ফেরাউন, নমরুদ, হামান, সাদ্দাদের মত অসংখ্য ক্ষমতাধর ব্যক্তি এসেছিলো আজ কোথায় তাদের দাম্ভিকতা, কোথায় তাদের রাজত্ব, সবকিছু বিলিন হয়েগেছে, কেউই স্থায়ী হতে পারেনি। শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের প্রতিযোগীতা না করে নিজেকে গুনাহ্ থেকে মুক্তরাখা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রতিযোগীতা করাই শ্রেয়। বিশ্বব্যাপী সঙ্কট, মহামারী, দুর্যোগের ব্যাপারে সতর্ক করতে গিয়ে গতকাল জুম্মার বয়ানে খতিব পবিত্র কোরআনের এ আয়াত তুলে ধরেন।

হে নবী আপনি বলুন! ইয়া আল্লাহ তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দাও। আর তুমিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আন এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। আর তুমিই যাকে ইচ্ছা বেহিসাবে রিযিক দান কর (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-২৬ ও ২৭)।

রাজধানীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব মুফতী মাওলানা মাহবুবুর রহমান বলেন, শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের প্রতিযোগীতা না করে নিজেকে গুনাহ্ থেকে মুক্তরাখা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রতিযোগীতা করাই শ্রেয়। আমাদের দেশসহ বিশ্বের প্রত্যেকটি রাষ্ট্র বর্তমানে কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে। পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাঁকালে দেখবেন কোথাও কোথাও পানির ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে, নদী, হ্রদ শুকিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের পানির উৎস কলোরাডো নদীর পানি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। শক্তিধর এই রাষ্ট্র আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত নদীর এক ফোঁটা পানিও বৃদ্ধি করতে পারবে না। ইউরোপের দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন সেখানে বন্যা, দাবানল, অতিরিক্ত তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে, যা থেকে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কখনই তাঁরা মুক্তি পাবে না। এরই মাঝে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ সম্পদ আয়ত্বকরণের জন্য যুদ্ধ, বিশ্লেষকগণ আশঙ্কা করছেন এ যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে। ইসরাইল চাচ্ছে সমগ্র বিশ্বে নিজেদের ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করতে। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতে ব্যাপক ধস নেমেছ, মুদ্রা ক্রয়ক্ষমতা আজ নিম্নমুখী যা আরো পতন হতে পারে। মূল্যস্ফীতি আঁকাশচুম্বি। শ্রীলংকার মত সয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র কিভাবে চুড়া থেকে ধসে পড়েছে তা আমরা দেখেছি। এসবই মহান রাব্বুল আলামীনে অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ।

খতিব সাহেব পবিত্র কোরআনের উদ্বৃতি দিতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ উদাহরণ দিচ্ছেন এক নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত জনপদের। যেখানে সর্বদিক থেকে প্রচুর রিযিক আসতো। অতপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের অস্বীকার করলো। ফলে কৃতকর্মের জন্য আল্লাহ তাদেরকে ভোগ করালেন ক্ষুধা ও ভীতি (সূরা আন-নাহল, আয়াত-১১২)।

যুগে যুগে ফেরাউন, নমরুদ, হামান, সাদ্দাদের মত অসংখ্য ক্ষমতাধর ব্যক্তি এসেছিলো আজ কোথায় তাদের দাম্ভিকতা, কোথায় তাদের রাজত্ব, সবকিছু বিলিন হয়েগেছে, কেউই স্থায়ী হতে পারেনি। আল্লাহ মানুষকে ক্ষমতা ও শক্তি দিয়ে পরীক্ষা করেন, কেবল তারাই উর্ত্তীণ হয় যারা শুকরিয়া আদায় করে নিজেকে আল্লাহর গোলাম ও তাঁর সৃষ্টির খাদেম ভাবেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো শান্তি, যা বিলিনের পথে। এজন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। আমরা সঠিকভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায় করতে পারিনি, আমরা নিজেদের গুনাহ্ থেকে হেফাজত করতে পারিনি। আমরা দুনিয়ার ক্ষমতা, অর্থ, প্রভাব-প্রতিপত্তির লোভে বিভোর থেকে আখিরাতকে ভুলে গিয়েছি। সর্বপরি আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে ব্যর্থ বিধায় আজ আমাদের উপর এত গযব ও আযাব। আমরা ভুলে গিয়েছি ভূমন্ডল-নভমন্ডেলের ক্ষমতা ও রাজত্বের দাবীদার একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন হে নবী আপনি বলে দিন, হে বান্দারা! নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ তো সব গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল অসীম দয়ালু। আযাব আসার আগেই রবমুখী হও এবং ইসলাম গ্রহণ করো। তার পরে কিন্তু তোমাদের সাহায্য করা হবে না। অতর্কিত ও অজ্ঞাতসারে আযাব আসার আগেই তোমাদের প্রতি রবের অবতীর্ণ উত্তম বিষয় কোরআনের বিধানসমূহ অনুসরণ করো। পরে কাউকে বলতে না হয় যে, আল্লাহর প্রতি কর্তব্যে অবহেলার কারণে আমার আফসোস! আর আমি তো ঠাট্টাকারী ছিলাম না। অথবা কেউ না বলে আল্লাহ হেদায়েত করলে আমি অবশ্যই মুত্তাকী হতাম। অথবা কেউ আযাব দেখার সময় না বলে, আমি আরেকবার পৃথিবীতে ফিরে নেককার হতে পারতাম (সূরা জুমার, আয়াত- ৫৩ থেকে ৫৮)।

খতিব সাহেব সকলকে নিজ নিজ গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সময় থাকতে আমাদের আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করা উচিৎ। দাম্ভিকতা, ক্ষমতা, পেশি ও মস্তিস্কশক্তি, সামরিক ও পারমানবিক শক্তি আল্লাহর আযাবের কাছে ঠুনকো বালুকণা ছাড়া কিছুই না। আমরা যা নিয়ে গর্ব-অহংকার করছি তা তো কেবল আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত কিছুই নয়। তিনি চাইলে যেকোন মুহুর্তে আমাদের সকল কিছু কেড়েনিতে সক্ষম। মুহুর্তের মধ্যে আমাদের পাহাড়সম জনপ্রিয়তা ধুলিসাৎ করে দিতে পারেন তিনি। আবার তিনিই পারেন অশান্ত এ পৃথিবীকে নিমেশেই শান্ত করে দিতে। তাই আসুন আমরা আযাব ও গযব থেতে নিজেদের হেফাজতের নিমিত্বে আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাই। এমন বালা-মুছিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাসূল (সা.) বলতেন- হে আল্লাহ! আপনার নেয়ামত হ্রাস করণ থেকে আমি পানাহ্ চাই, শান্তি বিনষ্ট হওয়া থেকে এবং হঠাৎ আক্রমন প্রতিশোধ ও সকল অসন্তুষ্টি হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি (মুসলিম শরীফ)। রাসূল (স.) আরো বলতেন, হে আল্লাহ! আমি বালা-মুসিবতের তীব্রতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে বেঁচে থাকার আশ্রয় প্রার্থনা করছি (বুখারী শরীফ)।

সবশেষে খতিব সাহেব উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিয়ে আসন্ন সকল দৃশ্যমান ও অদৃশ্য বালা-মুসিবত, আযাব-গযব থেকে দেশ ও জাতি যাতে মুক্ত থাকতে পারে, বিশেষ করে সমগ্র বিশ্বের অস্থিরতাকে দূরীভুত করে সকলে যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেজন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী বলেন, দায়িত্বশীলতা একটি বড় আমানত। সঠিক ভাবে ও যথাযথ মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করা ইসলামে ফরজ । দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারীর স্থান জাহান্নাম। কিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে বান্দা জিজ্ঞাসিত হবে। দায়িত্ব পালনে অলসতা, অসতর্কতা, অনিহা প্রকাশ, অবহেলা করা ও ফাঁকি দেয়া চরম অন্যায়। আবার যারা পরিপূর্ণ ও যথাযত ভাবে দায়িত্ব পালন করেন তাদেরকে প্রকৃত মু’মিন ও জান্নাতি বলে ঘোষণা দিয়েছেন মহান আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা নিজেদের আমানত (জিম্মাদারিত্ব এবং দায়িত্বশীলতা) ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। তারা চিরস্থায়ী জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিকারী হবে। (সূরা মুমিনুন, আয়াত : ৮ ও ১১)।

খতিব বলেন, আজ দায়িত্বহীনতার কারণে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্টের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কে, রাস্তা ঘাটে অহরহ প্রাণ ঝরছে। তবুও কেন যেন কর্তৃপক্ষের বার বার সতর্কতা সত্বেও দায়িত্বহীনতা বেড়েই চলছে। চালকের দায়িত্বহীনতা, নিয়মের অমান্যতার ও যথাযত কর্তৃপক্ষের পর্যাবেক্ষণের জিম্মাদরিত্ব পালনে অবহেলায় অতিসম্প্রতি উত্তরার সড়কে গার্ডার চাপায় অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হলো কয়েকজনকে। আল্লাহ তাদের জান্নাত নসীব করেন। এ ক্ষেত্রে চালকের ভূমিকা হওয়া উচিৎ স্বাভাবিক ও সুনিয়ন্ত্রিত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে। (সূরা ফুরকান : ৬৩)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন