শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

অবহেলার কারণে আর যেনো লাশের মিছিল দেখতে না হয় খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২২, ৩:৫১ পিএম | আপডেট : ৪:১৯ পিএম, ১৯ আগস্ট, ২০২২

আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকেই তার প্রতি অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। অবহেলা জনিত অপরাধের কারণে আল্লাহ তায়ালা দায়িত্বশীলগণকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন এবং কঠিন শাস্তি দিবেন। প্রচন্ড ব্যস্ত সড়ক-মহাসড়ক জনবহুল এলাকার বিভিন্ন প্রকল্পের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের চরম অবহেলার কারণে আজ বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। জান মালের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে নেমে আসছে ভয়াবহ বিপর্যয়। দায়িত্ব অবহেলার কারণে আর যেন এই বিভৎস দৃশ্য ও লাশের মিছিল আমাদেরকে দেখতে না হয় সে জন্য সব মহলকে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় বহু মুসল্লিকে রাস্তার ওপর নামাজ আদায় করতে হয়েছে।

ঢাকা উত্তরা ৩ নং সেক্টর ঐতিহ্যবাহী মসজিদ আল-মাগফিরাহ’র খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম আরবী খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, কোরআন ও হাদীসের বিপুল সংখ্যক বর্ণনায় মানুষকে তার নিজ নিজ পেশাগত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনের জন্য বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীকে তার ব্যবসার স্বচ্ছতার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। চাকরিজীবিকে সরকার বা কোম্পানি কর্তৃক তার প্রতি অর্পিত অফিসিয়াল দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। রাষ্ট্রের পরিচালকদেরকে জনগণের প্রতি সুশাসন ও ইনসাফ নিশ্চিত করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন। অনুরুপ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলগণকে অবহেলা জনিত অপরাধের কারণে আল্লাহ তায়ালা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন এবং কঠিন শাস্তি দিবেন। আর আন্তরিকতার সাথে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করলে বড় পুরস্কারের শুভসংবাদ দিয়েছেন। খতিব বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য প্রচন্ড ব্যস্ত সড়ক-মহাসড়ক, মানুষ আর মানুষে গাদাগাদি করা বিল্ডিং ও জনবহুল এলাকার বিভিন্ন প্রকল্পের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের চরম অবহেলার কারণে আজ বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে জান মালের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, দায়িত্ব অবহেলার কারণে কিছু দিন পরপর আদম সন্তানের অস্বাভাবিক ও বিকৃত লাশ দেখতে হচ্ছে। মুআত্তায়ে মালেকে আসছে হযরত জাবির বিন আতিক (রা.) সূত্রে বর্ণিত নবী (সা.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া ছাড়াও ৭ প্রকার মৃত শহীদি মৃত্যু। এগুলো হচ্ছে, মহামারিতে মৃত্যু, পানিতে ডুবে মৃত্যু,শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত্যু, পেটের পীড়ায় মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধে মৃত্যু, ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মৃত্যু এবং প্রসবকালিন মৃত্যু। খতিব বলেন, গত ১৫ আগস্ট সোমবার উত্তরায় প্রাইভেট কারে গার্ডার চাপায় মর্মান্তিক ভাবে নিহতদেরকে আল্লাহ শহীদ হিসাবে কবুল করুন। দায়িত্ব অবহেলার কারণে আর যেনো এই বিভৎস দৃশ্য ও লাশের মিছিল আমাদেরকে দেখতে না হয় সে জন্য সব মহলকে সচেতন থাকতে হবে। কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মহান আল্লাহ সবাইকে সজাদ থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী বলেন, দায়িত্বশীলতা একটি বড় আমানত। সঠিক ভাবে ও যথাযথ মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করা ইসলামে ফরজ । দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারীর স্থান জাহান্নাম। কিয়মতের দিন এ সম্পর্কে বান্দা জিজ্ঞাসিত হবে। দায়িত্ব পালনে অলসতা, অসতর্কতা, অনিহা প্রকাশ, অবহেলা করা ও ফাঁকি দেয়া চরম অন্যায়। আবার যারা পরিপূর্ণ ও যথাযত ভাবে দায়িত্ব পালন করেন তাদেরকে প্রকৃত মু’মিন ও জান্নাতি বলে ঘোষণা দিয়েছেন মহান আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা নিজেদের আমানত (জিম্মাদারিত্ব এবং দায়িত্বশীলতা) ও প্রতিশ্রæতি রক্ষা করে। তারা চিরস্থায়ী জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিকারী হবে। (সূরা মুমিনুন, আয়াত : ৮ ও ১১)। তাই তিনি পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন, তোমরা যেনো মালিকের কাছে তার আমানত প্রত্যর্পণ কর। (সূরা নিসা, আয়াত : ৫৮)। অন্য আয়াতে অল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ, তোমরা তোমাদের অঙ্গিকার (গুরু দায়িত্ব সমূহ) পরিপূর্ণ কর। (সূরা মায়িদা, আয়াত : ০১) । যারা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বাণী উচ্চারন করে তিনি বলেন, বড় দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়, (দায়িত্বে অবহেলা করে) অন্যের থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় নেয়, আর যখন তাদের মেপে দেয় তখন কম দেয়। ওরা কী চিন্তা করে না যে, ওদের কিয়ামতের দিন পুনর্জীবিত করা হবে। মহান প্রভূর দরবারে হাজিরা দিতে হবে ? (সূরা মুতাফফিইফন-১-৬)। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে মুমিনগণ শুনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং জিম্মাদর । তোমাদের প্রত্যেকেই তার দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সহিহ বোখারি, হাদিস : ২৫৫৪)।

খতিব বলেন, আজ দায়িত্বহীনতার কারণে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্টের প্রায় তিটি সেক্টরে বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তা ঘাট, কল কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি ইবাদাতের মাঝেও এর ছোয়া লেগেছে। দিন দিন সমাজ অধ:পতনের দিকে যাচ্ছে। সড়কে, রাস্তা ঘাটে অহরহ প্রাণ ঝরছে। তবুও কেন যেন কর্তৃপক্ষের বার বার সতর্কতা সত্বেও দায়িত্বহীনতা বেড়েই চলছে। চালকের দায়িত্বহীনতা, নিয়মের অমান্যতার ও যথাযত কর্তৃপক্ষের পর্যাবেক্ষণের জিম্মাদরিত্ব পালনে অবহেলায় উত্তরার সড়কে গার্ডার চাপায় অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হলো অনেকের। আল্লাহ তাদের জান্নাত নসীব করেন। এ ক্ষেত্রে চালকের ভূমিকা হওয়া উচিৎ স্বাভাবিক ও সুনিয়ন্ত্রিত। দ্রæতগতিতে যানবাহন চালানোর ঝুঁকি এড়াতে রাস্তার নির্ধারিত গতিসীমা মেনে চলা অপরিহার্য। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই গাড়ী চালনা ও রাস্তায় চলাফেরার ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা অবলম্বন কারা উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিন¤্রভাবে চলাফেরা করে। (সূরা ফুরকান : ৬৩)। হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ধীরস্থিরতা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে। (বায়হাকি শরীফ, হাদিস নং ২০৭৬৭)। অতএব আসুন আমরা সকলে আমাদের নিজ অর্পিত দায়িত্ব নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে যথাযত ভাবে পালন করি। দুনিয়া ও আখিরাতের মুসিবত থেকে বেঁচে থাকি। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করেন। আমিন।

পুরোনো ঢাকার ঐতিহাসিক চকবাজার শাহী মসজিদের খতিব মুফতি মিনহাজ উদ্দিন বলেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ আত্মম্ভরী দাম্ভিককে ভালোবাসেন না। (সূরা নিসা)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, তবে কি তারা জাহেলী যুগের বিধান (বিচার-ব্যবস্থা ) পেতে চায়?, খাঁটি বিশ্বাসী জাতির জন্য বিচারে আল্লাহ অপেক্ষাকে শ্রেষ্ঠতর? (সূরা ইউসুফ)। খতিব বলেন, আজ রাজপথে দুর্ঘটনা বাড়ছে। কর্মক্ষেত্রে অবহেলা, অসতর্কতাসহ নানা কারণে জীবন বিপন্ন হচ্ছে। পারিবারিক কলহের জেরে অনেক সময়ে পিতা মাতার ঘাতক হচ্ছে কলিজার টুকরা সন্তান।

ঘরে-বাহিরে, হাটে-বাজারে কেমন যেন এক নিরাপত্তাহীন পরিবেশ বিরাজ করছে। এ অবস্থা হতে উত্তরণে মহান আল্লাহর শাশ্বত বিধান ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহকে সামনে রেখে পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রকে একযোগে আন্তরিকতার সাথে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন