মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকো। অথচ আখেরাতের জীবনই উত্তম ও অবিনশ্বর। নিশ্চয়ই এ কথা (শুধু কোরআনেই নয়) পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহেও বিদ্যমান আছে।’ সূরা আলা :১৬-১৮। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমী আজ জুমার বয়ানে বলেন, পৃথিবীতে সবাই চায় সফল হতে, প্রত্যেকেই চায় বুদ্ধিমান হিসেবে নিজেকে জাহির করতে। অথচ আমরা জানি না, প্রকৃত সফল এবং বুদ্ধিমান কারা। যাদের অঢেল ধন সম্পদ আছে এবং ক্ষমতা আছে তাদের আমরা সফল ভাবি। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, যে ব্যক্তি জানে যে, যা কিছু পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে তা সত্য সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে অন্ধ? তারাই বোঝে, যারা বোধশক্তি সম্পন্ন। আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন , হে মুহাম্মদ যা কিছু পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর যে সত্য বলে স্বীকার করে না তারা কখনও সমান হতে পরে না। আল্লাহ তায়লা ঐ মহান ব্যক্তিদের প্রশংসনীয় গুনাবলি বর্ণনা করেছেন যারা আখেরাতে জান্নাতের মালিক হবেন এবং দুনিয়াতেও তারা উত্তম প্রতি দান পাবে। যারা আল্লাহর (সাথে কৃত) প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না। আর আল্লাহ যে সম্পর্ক বজায়া রাখতে আদেশ দিয়েছেন তা বজায়া রাখে এবং স্বীয় পালনকর্তাকে ভয় করে এবং কঠোর হিসাবের আশঙ্কা রাখে। এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্য ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের জান্নাত। তা হচ্ছে বসবাসের বাগান। তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের সৎকর্মশীল বাপ দাদা, স্বামী স্ত্রী ও সন্তান সন্ততি। ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। আর তারা বলতে থাকবে তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিণাম গৃহ কতই না চমৎকার। সূরা রদ (১৯-২৫)। আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কি জানো, আল্লাহর সৃষ্টিকূলের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে কারা প্রবেশ করবে?’ সবাই বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টিকূলের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে দরিদ্র মুহাজিররা। যাদের মাধ্যমে সীমান্তের প্রহরা নিশ্চিত করা হয়। তাদের মাধ্যমে যেকোনো বিপদ আপদ দূর করা হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকো। অথচ আখেরাতের জীবনই উত্তম ও অবিনশ্বর। নিশ্চয়ই এ কথা (শুধু কোরআনেই নয়) পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহেও বিদ্যমান আছে।’ সূরা আলা :১৬-১৮। আল্লাহ তায়লা আমাদেরকে এ সকল বিষয় গুলোর উপর আমল করার তৌফক দান করুন আমীন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন নেক সন্তান আল্লাহ তায়ালার এক অপূর্ব নিয়ামত। পবিত্র কোরআনে সন্তানকে দুনিয়ার জীবনের শোভা এবং হাদিস শরীফে তাদেরকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা সৌন্দর্য মাত্র। ( সূরা কাহাফ, আয়াত নং ৪৬)। হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মৃত্যুর পর কবরে থাকা অবস্থায় বান্দার সাতটি আমলের প্রতিদান সদকায়ে জারিয়া হিসেবে অব্যাহত থাকে। যা’হচ্ছে, ইলম দ্বীন শিক্ষা দেয়া, মানব কল্যাণে নদী খননের ব্যবস্থা করা, কূপ খনন করা, কোনো (খেজুর) গাছ রোপণ করা, মসজিদ নির্মাণ করা, কোরআন (তিলাওয়াতের জন্য অথবা এর আহকাম জীবনে বাস্তবায়নের জন্য) কাউকে দান করা, এমন সস্তান রেখে যাওয়া, যে মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (সহিহুত তারগিব, হাদিস নং : ৭৩)। তাই সস্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই প্রাণপন চেষ্টা করা। আর এ জন্যে সময়মত তার সঠিক পরিচর্যা করা। অন্যথায় এই সন্তানই মাতা পিতার ইহকাল পরকালের অশান্তির কারণ হতে পারে। মনীষীগণ বলেন, সন্তানকে যদি সৎ ও নেক হিসেবে গড়ে তুলতে হয় তবে মাতা পিতাকে নেক ও সৎ হওয়া পূর্ব শর্ত। মাতা পিতা যদি সঠিক সময়ে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সমূহ পালনে ব্রত হয় তবে আল্লাহ ইচ্ছায় অবশ্যই সন্তান ভাল হতে বাধ্য। দ্বিতীয়ত : সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে তার শিক্ষা দিক্ষা, আচার ব্যবহার, চাল চলন ও মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দেয়া, তার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে দৃষ্টি রাখা, পবিত্র কোরআন শিক্ষাসহ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় দ্বীনী ইলম তথা মাসআলা মাসায়েল শিক্ষার ব্যবস্থা করা, পর্যায়ক্রমে নামাজ ও অন্যান্য ফরজ বিধান পালনে গুরুত্বারোপসহ তার জন্য গুনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে রক্ষা কর। (সূরা তাহরীম, আয়াত : ৬)। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বসর হয় তখন তাদের নামাজের নির্দেশ দাও। আর বয়স ১০ বছর হলে তখন (নামাজ আদায় না করলে) প্রয়োজনে মৃদু প্রহার কর এবং তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করে দাও। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)।
খতিব আরও বলেন, মাতা পিতা তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও একনিষ্ঠ দোয়ার মাধ্যমে একজন নেক সন্তানের থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। তাঁরা নেক সন্তানের মাধ্যমে দুনিয়াতে যেমন সম্মানিত হতে পারেন, তেমনি আখিরাতেও তাদের মর্যাদা বুলন্দ করে নিতে সক্ষম হন। রাসূল (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ জান্নাতে নেককার বান্দার মর্যাদা সমুন্নত করবেন, তখন সে বলবে, হে আমার রব, কেন আমার জন্য এই উচ্চ মর্যাদা ? তখন আল্লাহ বলবেন, এ মর্যাদা তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ১০৬১০)। আল্লাহ তায়ালা সকলকে তার স্বীয় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সন্তানকে নেক ও সৎ চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলার তৌফিক দান করেন। আমীন।
ঢাকা শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি জুমার নামাযের পূর্বে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে"হে রাসূল আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে যে বিষয় গুলো আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌছে দিন যদি আপনি এরুপ না করেন,তবে আপনি তার পয়গাম কিছুই পৌছালেন না"(সূরা মায়িদা ৬৭)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে"এটি (পবিত্র কোরআন) এমন একটি গ্রন্থ যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আপনি এর মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করেন। আর এটি বিশ্বাসিদের জন্যে উপদেশ। অতএব এটি পৌছে দিতে আপনার মনে সংকীর্ণতা থাকা উচিত নয়। তোমরা অনুসরণ করো যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের অনুসরণ করো না"(সূরা আ'রাফ,২৩)। "এটি এমন একটি গ্রন্থ যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন" (সূরা ইবরাহিম, ১)। উল্লেখিত তিনটি আয়াতের আলোকে কোরআনি শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলো এই যে, পবিত্র কোরআনের বিধিনিষেধ গুলো মানুষের কাছে পৌছে দেয়া। অন্যথায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গন্য হবে।
দ্বিতীয় মানুষকে জাহান্নামের শাস্তি এবং মহান আল্লাহর অন্যান্য শাস্তির ব্যাপারে ভয় দেখানো। তৃতীয় মানুষকে জান্নাতের নিয়ামতরাজি অর্জনের জন্য উপদেশ দেয়া। চতুর্থ কুফর শিরক এবং মন্দ কাজের অন্ধকার সমূহ থেকে মানুষকে মুক্ত করে ঈমান এবং নেক আমলের আলোর দিকে এনে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন। গুলিস্তান রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী আজ জুমার বয়ানে বলেন, সূরা ফাতিহা মূলত একটি বিশেষ দোয়া বা প্রার্থনা। এ সূরায় মানবজীবনের মূল আকুতি ফুটে উঠেছে। নামাজের প্রতি রাকাতে এ সূরার তেলাওয়াত বাধ্যতামূলক করে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে লাগাতার চিন্তা-ভাবনা ও আল্লাহ তায়ালার কাছে তা চাওয়াকে চেতনায় বদ্ধমূল করেছেন। যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা কোনো কিছু ইচ্ছাই করতে পারো না, যদি না সে ব্যপারে আল্লাহ ইচ্ছা করে থাকেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা দাহার: ৩০)। আল্লাহ যা পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন এমন প্রত্যেকটি প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য কথা ও কাজের নাম হচ্ছে ইবাদাত। [মাজমু ফাতাওয়া]। সুতরাং কোন কিছু আল্লাহর দরবারে ইবাদত হিসেবে কবুল হওয়ার জন্য দুটি শর্ত অবশ্যই থাকবে। প্রথমতঃ সেটা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হতে হবে। তাতে থাকবে পরিপূর্ণ ভালোবাসা, বিনয় ও ভীতি। যাকে ইখলাস বলা হয়। দ্বিতীয়তঃ সেটা হতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রদর্শিত পদ্ধতিতে। সুতরাং কোনো কাজ ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হওয়ার জন্য দ্বিতীয় এ শর্তটি অবশ্যই পাওয়া যেতে হবে। ইবাদত কেবল আল্লাহরই করবো, মা'বুদ কেবল তাকেই বানাবো, তিনি ছাড়া আর কারও দাসত্ব কবুল করবোনা। [আদওয়াউল বায়ান] খতিব বলেন, আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ঘোষণা করেন, "মানুষ ও জিন্ন জাতিকে এই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছে যে তারা (স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে) কেবল আমারই দাসত্ব বন্দিগী করবে। [সূরা আয যারিয়াত ৫৬]। অর্থাৎ আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করাই হচ্ছে মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের ছহি বুঝ দান করুন। আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন