শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবন ১৪৩১, ২০ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কোরআন ও সুন্নাহের অনুসরণের মাঝেই মানুষের কল্যাণ খুৎবা পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২২, ৩:৪৫ পিএম

কোরআন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত । কোরআন ও সুন্নাহের অনুসরণের মাঝেই মানুষের কল্যাণ। যুগে যুগে কোরআনের অনুশাসনের মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরে এসেছে। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।

ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, কোরআন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত । কোরআন ও সুন্নাহের অনুসরণের মাঝেই মানুষের কল্যাণ । যুগে যুগে কোরআনের অনুশাসনের মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরে এসেছে। আজও মুসলমান যদি কোরআনের বিধান অনুযায়ী তার ব্যক্তি , পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মনোযোগী হতো তবে শান্তির সুবাতাস বইতো। পরস্পরের মধ্যে কলহ বিবাদ মারামারি কাটাকাটি সন্ত্রাসী রাহাজানির মতো অন্যায় অবিচার থেকে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র মুক্তি পেতো। মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেমে আসত আল্লাহর রহমত ও অনাবিল শান্তি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমি কোরআনের মাধ্যমে মানুষের রোগ মুক্তি ও মুমিনের জন্য রহমত এবং শান্তি নিশ্চিত করেছি। সুরা ইসরা, আয়াত নং ৮২।

খতিব বলেন,এই বিশৃঙ্খলাময়ী ঘুনে ধরা সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে কোরআনের অনুসরণ ও অনুশাসনের বিকল্প নাই। তাই তিনি সকল মুসলমানকে অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত তার উপর আমল করার প্রতি বিশেষ আহবান জানান ।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজার শাহী মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি মিনহাজ উদ্দিন জুমার বয়ানে বলেন, আল্লাহর ভয় ও সত্য সঠিক পথেই রয়েছে আমাদের মহাসাফল্য। খতিব বলেন, আজকের সমাজের মানুষ সাফল্যের পেছনে দৌড়াচ্ছে, কেউ মনে করছেন অর্থবিত্তের মাঝে সফলতা রয়েছে যে কারণে হালাল হারামের তোয়াক্কা না করে দুর্নীতি, সুদ ঘুষসহ বিভিন্ন কৌশলে অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জনে ব্যস্ত। আবার কেউ ভাবছেন ক্ষমতা আধিপত্যের মাঝে রয়েছে সাফল্য, যে কারণে ক্ষমতা কুক্ষিগত করবার জন্য নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন এবং জুলুম নির্যাতনে লিপ্ত হচ্ছেন। আবার অনেকে ভাবেন জোশ খ্যাতির মাঝে রয়েছে সফলতা। যে কারণে মিথ্যা, ধোকা, লৌকিকতার মাধ্যমে সাফল্য তালাশ করছেন। এতদাসত্বেও চ‚ড়ান্ত সফলতার চিড়া ধরা দিচ্ছে না, বরঞ্চ এ অন্যায় প্রতিযোগিতায় মানুষ আরো বেশি ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে পড়ছে। আসল মহাসাফল্য কোন পথে আসবে সে কথা আল্লাহ সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগেই বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন।

মহান আল্লাহ ইরশাদ ফরমান,"হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের কর্মকে ক্রটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে।" সূরা আহযাব। জীবনের সর্বত্র আল্লাহর ভয় এবং সত্য সঠিক কথাবলা পথচলা আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। এ পথে চলতে গিয়ে কখনো শয়তান ধোঁকা দিতে পারে, ভয় নেই কারণ আল্লাহ বলেছেন, "আর তোমরা হীনবল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, তোমরাই হবে সর্বোপরি (বিজয়ী); যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।" সুতরাং ঈমানদার আল্লাহকে ভয় করে, সত্য সঠিক পথে আল্লাহ তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে নিজের জীবনের মহাসফলতা অর্জন করবে। এটাই একমাত্র পথ, বাকি সব মরিচিকা আর ধোকা। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন আমিন। ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি জুমার বয়ানে বলেন,আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানীতে হজের কার্যক্রম সম্পাদন করে অনেকেই বাংলাদেশে আগমন করেছেন। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ তাদের সকলের হজকে কবুল করেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হজ এবং উমরাহ আদায়কারীগণ আল্লাহ পাকের বিশেষ প্রতিনিধি। যদি তারা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া কবুল করেন। আর যদি তারা মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাহলে মহান আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।" (ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরিফ-খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৩)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "যখন তুমি হাজী সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তুমি প্রথমে তাকে সালাম দাও এবং মুসাফাহা করো এবং ঘরে প্রবেশের পূর্বে তার কাছে আবেদন করো যে তিনি যেন তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কেননা হাজী সাহেব ক্ষমা প্রাপ্ত ব্যক্তি।" (মুসনাদ আহমাদ, মিশকাত শরিফ-খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৩) আলোচ্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে চারটি দায়িত্ব দিয়েছেন। সপ্রনোদিত হয়ে হাজী সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করা। প্রথমে তাকে সালাম দেয়া। হাজী সাহেবের সাথে মুসাফাহা করা। নিজের গুনাহ ক্ষমার প্রার্থনার জন্য তাকে অনুরোধ করা। খতিব বলেন, হজ আল্লাহ ও রাসূল প্রেম ও ভালোবাসা প্রকাশের সর্বোচ্চ স্তর। তাই হজের সফরে হাজী সাহেবগণ যতগুলো ভালো কাজ করেছেন সবগুলোই নিজ এলাকাতেও পালন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। নিজের অন্তরে মহান আল্লাহর হুকুমের ভালোবাসা সর্বোচ্চ রাখা। সদা সর্বদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রীতিনীতি পালনের জন্য প্রস্তুত থাকা। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাজ পুরুষ ভাইয়েরা মসজিদে গিয়ে জামাতে আদায় করা। সব ধরনের অন্যায় কাজ ছেড়ে দেয়ার জন্য সংকল্প করা।
কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো মানুষের হক নষ্ট না করা। মৃত্যুকে বেশি করা স্মরণ রাখা। নিজের সন্তানদেরকেও ইসলামী রীতিনীতি পালন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকা। কোনো অবস্থাতেই গালি গালাজ, কর্কশভাষা ব্যবহার না করা। নম্রতা ভদ্রতা শালীনতা দানশীলতা ইত্যাদি গুনে গুনান্বিত হওয়ার চেষ্টা করা। আল্লাহ তায়ালা সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরছেন হাজীরা। সদ্য হজ ফেরত হাজীদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। তারা আল্লাহর মেহমান হয়ে তারই ঘরে গিয়েছিলেন, আবার ফেরত আসছেন। তাদের আত্মায় ও গায়ে লেগে আছে পবিত্র ভূমির সৌরভ। প্রিয় নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সা. অন্যদেরকে তাদের থেকে সেই সৌরভ গ্রহণ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো হাজির সাথে সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম দিবে, তার সঙ্গে মুসাফাহা ও মুয়ানাকা করবে এবং দোয়া চাইবে। কারণ হাজীর সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে।-সুনানে তাবারানি। হজ পালনকারী ব্যক্তি বিপুল সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। এই সম্মান ও মর্যাদার কথা স্মরণে রেখেই তাকে পরবর্তী জীবন আল্লাহর পথে পরিচালিত করতে হবে। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ, সুদ, ঘুষসহ সব ধরনের অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। খতিব আরও বলেন, হজ থেকে ফিরে আসার পর একজন হাজীর অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে, সে তার দ্বীনের হেফাজত করবে, নিজের ঈমানের পূর্ণতা এবং চারিত্রিক শুদ্ধতার দিকে খেয়াল রাখবে। ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাহ আদায়ের পাশাপাশি হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ এবং তার রাসূল সা. এর যে কোন নির্দেশ পালনের ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি যতœবান হবে। হালাল রুজির ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। নিজের পরিবার পরিজন, অধীনস্থ ব্যক্তি, পাড়া-প্রতিবেশী ও সমাজের লোকজনকে দ্বীনের পথে থাকার আহবান করবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন