ভোজ্যতেলের পর ডিম নিয়েও কারসাজিতে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছিলেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে ইস্যু করে দুই সপ্তাহে প্রতি হালিতে ২০-২৫ টাকা বাড়িয়ে জনগনকে জিম্মি করেছিলেন তারা। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সারা দেশের প্রান্তিক খামারি ও ডিলারদের কাছ থেকে নির্ধারিত দামে ডিম কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দামে বাজারে ছেড়েছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে ব্যাপক দরবৃদ্ধি হয় পণ্যটির। তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযানে থমকে যায় অসাদু ব্যবসায়ীদের দ্বৈরাত্ব। গতকাল রোববার ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহসহ চারজনকে সঙ্গে নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল ভোক্তা অধিকার। সেখানে তাদের ব্যবসায়ের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে বলা হয়। তবে তারা কাগজ দেখাতে না পারায় অধিদফতরে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়। পরবর্তীসময়ে কাগজপত্র দেখানোর প্রতিশ্রুতিতে ডিম ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দেন অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
গতকাল অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সমবায় অধিদফতর থেকে নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করায় তাদের কাছে বৈধ কাগজ চাওয়া হয়। সফিকুজ্জামান বলেন, সমবায় সমিতির লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। উনাদের কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছে, সেগুলো আনলে আমরা বসবো। তারা কীভাবে ডিমের দাম নির্ধারণ করেন সে বিষয়ে তদন্ত করবো। তিনি বলেন, তারা বৈধ কাগজপত্রের প্রমাণ দেবে এবং এ বিষয়টি এখন এনএসআইকে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সেখানে কোনো সমস্যা পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।
সভায় উপস্থিত এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করা যায় কি না? এ জায়গায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে হাত দিতে হবে। সমবায় সমিতি ব্যবসা করতে পারে কি না আমি জানি না। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আশা করি দেখবে। এ ধরনের সমবায় সমিতি, আড়তদাররা কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী। তারাই কিন্তু দেশকে অস্থিতিশীল করছে। তারা ইচ্ছামতো দাম কমায়-বাড়ায়। সরকারের উচিত তাদের আইনের আওতায় আনা।
বৈধ কাগজপত্রের জন্য যাদের বসিয়ে রাখা হয় তারা হলেন-তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ ও সেক্রেটারি হানিফ মিয়া, কাজী ফার্মসের ডিলারের একজন প্রতিনিধি এবং ডিমে অর্গানিক সিল মারার বিষয়ে অভিযুক্ত একজন। সভা চলাকালে ভোক্তার মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহকে প্রশ্ন করেন, তাদের ব্যবসায়ী সংগঠনের অনুমতি কোথা থেকে নেওয়া। তিনি জানান, সমবায় সমিতির কাছ থেকে নিয়েছেন। তখন সব কাগজপত্র চাইলে তিনি দেখাতে ব্যর্থ হন। পরে তাকে থাকতে বলে অন্য কাউকে দিয়ে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়। সেই সঙ্গে সেক্রেটারিকেও থাকতে বলা হয়।
এছাড়া কাজী ফার্মসের ডিলারের প্রতিনিধিকে দাম নির্ধারণের কাগজপত্র দেখানোর জন্য থাকতে বলা হয়। সিল মেরে অর্গানিক ডিম হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগে একজনকে অর্গানিক ডিমের প্রমাণপত্র দেখানোর জন্য থাকতে বলা হয়।
এদিকে ভোক্তা অধিকারের নিয়মিত অভিযানের প্রেক্ষিতে লাগামহীন ডিমের বাজার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। গতকাল বিভিন্ন বাজারে ১২০ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে। কিছুদিন আগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ১৬০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন এই পণ্যটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন