পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে তা এখনো থামেনি। বরং সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমসহ দেশ বিদেশে এ বিতর্ক ডালপালা ছড়াচ্ছে। বরং বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গতকাল রোববার ডাক ও রেজিস্ট্রার যোগে এই নোটিশ পাঠিয়ে বলা হয়েছে পদত্যাগ না করলে আইনি প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হব। শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’ দেশের এবং বিদেশের গণমাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে অবিহিত করে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, নাগরিক ঐক্য, ইসলামী আন্দোলন, জাগপাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে দাবি করা হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই দায় এড়াতে পারেনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতকে অনুরোধ করার জন্য শেখ হাসিনা এমন কাউকে দায়িত্ব দেননি। ওই বক্তব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিজের’। অতপর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী দলের (আওয়ামী লীগ) কেউ নন। দলে তার কোনো পদ-পদবিও নেই। তিনি সরকারের মন্ত্রী। কাজেই তিনি যা বলবেন সেটা কোনোভাবেই দলের বক্তব্য হতে পারে না।’
অতপর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমানের এমন বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেউ নয় দাবি করলেও বাস্ততে সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সদস্য। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ৩ নম্বর সদস্য পদে তার নাম রয়েছে। সিলেট নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ড. মোমেন আওয়ামী লীগের শাখা কমিটির তিনটি পদে রয়েছে।
সিলেট আওয়ামী লীগের তিনটি কমিটিতে ড. মোমেনের নাম থাকার পর গতকাল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য অবশ্যই। কিন্তু যেহেতু আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিদেশে গিয়ে কিছু বলা, সে দায়িত্ব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউকে দেয়নি, ওনাকেও দেয়নি। তিনি যদি কোথাও গিয়ে কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ করে আসেন বা গল্প করে আসেন, সেটির দায়ভার তার, দল বা সরকারের নয়।
ড. মোমেন যে আওয়ামী লীগের সদস্য সেটা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তর লেখালেখি চলছে। এতে বলা হয় ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ গঠন করা হলেও ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ড. এ কে আব্দুল মোমেন আমাদের কমিটির এক নম্বর সদস্য হিসেবে আছেন। এক নম্বর সদস্য দলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ।’ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, ড. এ কে মোমেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সদস্য। তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সদস্য বলেও শুনেছি।
সিলেটের স্থানীয় সাংবাদিক নেতা মিসবাহ উদ্দীন আহমদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সিলেট নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটিতে ২ নম্বর সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর ওই কমিটি ঘোষিত হয়। কমিটিতে ১ নম্বর সদস্য রাখা হয় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ড. মোমেনের বড় ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে (মৃত) ও ২ নম্বর সদস্য রাখা হয় ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে। ভুল যদি না হয় তবে এই কমিটি এখনো বহাল রয়েছে।
গতকালও দেশের সবগুলো গণমাধ্যমে ড. মোমেনের বক্তব্য নিয়ে নানান মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন জন এ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন