সম্প্রতি দেশের বিদ্যুৎ নিয়ে এমন সঙ্কটের দিনেও সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাত ৮টার পরেও চলে আলোকসজ্জা। রাজউকের নতুন শহর প্রকল্পের পূর্বাচলের অস্থায়ী রেস্টুরেন্টগুলোতে দেখা যায় এমন চিত্র। অভিযোগ রয়েছে অবৈধ টানা লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগে চলছে শতাধিক অস্থায়ী রেস্টুরেন্ট এবং তাদের বাহারী আলোকসজ্জা। এমন চিত্র নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে। খুঁটিতে বিদ্যুতের তার ঝুলানো দেখা গেলেও খালি চোখে বুঝার উপায় নেই তা বৈধ, কী অবৈধ। তবে একটু গভীর দৃষ্টিতে তাকালেই বুঝা যায়, বিদ্যুতের এ লাইনগুলো খুঁটির উপরে অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে। কোথাও বা বাঁশ দিয়ে নেয়া হয়েছে মাইলের পর পর এমন অবৈধ সংযোগ।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও দাউদপুর ইউনিয়নের একটি অংশ ছাড়াও গাজীপুরের পাড়াবর্তা ও বরকাউ নামের দুটি মৌজায় ১৯৯৬ইং সন থেকে শুরু হয় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ। আর সে সময় থেকে পূর্বাচলের আদিবাসিদের সরিয়ে নেয়া হয় অন্যত্র। আর তাতে এ অঞ্চল হয়ে পড়ে অনেকটা নির্জন। তবে সময়ের ব্যবধানে এখন এটি দর্শনীয় স্থানে রূপ নিয়েছে। তাই পূর্বাচলে দর্শনার্থীদের জন্য স্থানীয় যুবকরা রসনাবিলাসের জন্য গড়ে তুলেছেন শতাধিক রেস্টুরেন্ট। আবার এ অঞ্চলে ভারী যান চলাচলের জন্য এশিয়ান মহাসড়ক ও ৩শ’ ফুট সড়কের পাশে গাড়ী সার্ভিসিং, বাতাস পাম্প মেশিন এমনকি রয়েছে ১০টির অধিক ওয়ার্কসপ। রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সাধারণত খুঁটি থেকে ১শ’ ফুটের অধিক দূরত্বে কোন বৈধতা পাওয়ার নিয়ম নেই গ্রাহকের। কিন্তু পূর্বাচলে মাইলের পর মাইল টানা লাইনে দেয়া হয়েছে এমন অবৈধ সংযোগ। শুধু তাই নয়, হুক লাগিয়ে অবৈধ সংযোগ নেয়ার রয়েছে অভিযোগ। আবার একটি বৈধ সংযোগ থেকে নুন্যতম ২০টির অধিক সংযোগের চিত্রও দেখা গেছে। এসব অবৈধ সংযোগের ব্যবসায় বাদ যায়নি মসজিদও। আবাসিক সংযোগ থেকে টানা লাইনে ওয়ার্কসপ, মুরগীর ফার্ম, গরুর ফার্মসহ চলছে শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এসব নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেক্টরভিত্তিক সিন্ডিকেট।
সূত্র জানায়, পূর্বাচলের প্রতিটি সেক্টরের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে রয়েছে একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডেকেট। এসব দালালরা এক সময় নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে থাকা বিভিন্ন কার্যালয়ে দালালি করতো। কিন্তু এখন ডেসার অধীনে থাকায় কৌশল বদলিয়েছে তারা। পূর্বাচলে সেক্টরভিত্তিতে ভাগ হয়ে একই কায়দায় পূর্বাচল জোনাল অফিসের দায়িত্বরত মিটার রিডারদের হাত করে অবৈধ সংযোগ বাণিজ্য করে আসছে দীর্ঘ বছর ধরে। অভিযোগ রয়েছে মিটার রিডারদের বৈধ মিটার প্রতি অতিরিক্ত সংযোগের দায়ে গোঁপনভাবে ২শ’ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। আর তাতে উপরস্থ কর্মকর্তাদের এসব খবর পৌঁছান না তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্বাচলে এসব অবৈধ সংযোগের ব্যবসা করেন এমন একজন জানান, পূর্বাচলের সেক্টর ভিত্তিতে ভাগ করা রয়েছে অবৈধ সংযোগ পরিচালকদের সীমানা। অভিযোগ রয়েছে, হঠাৎ মার্কেটের পাশে দেলোয়ার, বাগরার টেকের মোবারক, ২১ নং সেক্টরে শহরের বাইরে থেকে নেয়া টানা লাইনে জড়িত রয়েছে প্রায় ৩০টির অধিক দোকান ও হোটেল মালিক। লালমাটিয়া এলাকায় সাইদও একইভাবে সংযোগ দিয়েছেন। ২২ নং সেক্টর এলাকায় কালনীতে নয়ন, আব্দুল হক, কামাল, মজিবুর, ৭নং সেক্টরের সুলপিনা হেলিপ্যাড চত্ত্বরে আব্দুর রহিম, আব্দুল হক, আফজাল, ২৩নং এ আব্দুল কাইয়ুম, জিন্দা পার্ক এলাকার মুরগী ও গরুর ফার্মসহ ব্যাটারী কারখানা পরিচালনা করেন তিনি। এছাড়াও ১ ও ২ নং সেক্টরের পূর্বাচল ক্লাবের আশপাশেও এভাবেই টানা লাইনে চলে পূর্বাচলের প্রায় সবকটি অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান।
তবে পূর্বাচল জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার লাবিবুল বাশার বলেন, এসব বিষয়ের কিছুটা জেনেছি। তবে সমস্যাটা নতুন নয়। বহুদিন ধরে চলে আসছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ নয় পবিস তবে নিয়মবহির্ভূত বটে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জরিমানা আদায় করেছি। আর পূর্বাচলে ডেসকোর বিদ্যুৎ লাইন সচল রয়েছে। এদিকে ডেসকোর আঞ্চলিক কর্মকর্তা প্রকৌশলী হুমাউন কবীর বলেন, পূর্বাচলে এখনো সামগ্রিক সংযোগ দেয়া হয়নি। ফলে পূর্বাচলের বাইরের গ্রাম থেকে টানা লাইনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটিকে অবৈধ বলার সুযোগ নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন