চায়না এক্সিম ব্যাংকের ৬৭০ মিলিয়ন ডলরের আর্থিক সহায়তায় ‘পাওয়ার চায়না’র মালিকানায় বরগুনার তালতলীতে ৩০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পরিক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফলে চলতি মাসেই পায়রা ও তালতলী থেকে ১৬শ’ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদু্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ২য় পর্যায়ে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরো দুটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির প্রায় ২৬% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে ২০২৪ সালে দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রায় ২৩শ’ মেগাওয়াট ও ২০২৫-এর জুনের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে বলে আশা করছে বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল মহল।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিটের প্রথমটি ২০২৫ সালের মধ্যে এবং ২০২৬-এর জুনের মধ্যে ২য় ইউনিটটি জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হবে বলে আশা করছে সশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পায়রাতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার অপর দুটি ‘কোল পাওয়ার প্লান্ট’ ২০২০-এর মে ও ডিসেম্বর মাসে চালু হবার পর চলতি বছরের ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী আনষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। তবে ৪শ’ কেভি গ্রীড ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ শেষে গত ১৫ ডিসেম্বর পরিক্ষামূলকভাবে ও ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে বাণিজ্যিকভাবে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়েছে।
অপরদিকে, ২০১৭ সালে ৬৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তালতলী কোল পাওয়ায়ার প্লান্টটির নির্মাণ কজ শুরু করে চীনা প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার চায়না লিমিটেড’। কয়লাভিত্তিক এ উৎপাদন ইউনিটটি থেকে ২০২১ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ দেয়ার কথা থাকলেও পরে এক বছরের বর্ধিত সময়ে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষে গত অক্টোবরে তালতলী পাওয়ার প্লান্টটি সাফল্যজনকভাবে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির পরে এখন চুড়ান্ত পরিক্ষা নিরিক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। তবে প্রথমে এখানে ৩০৭ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট স্থাপনের কথা থাকলেও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বিশ^ব্যপী পরিবেশবিদদের আপত্তির বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার ২য় ইউনিট নির্মাণ থেকে সরে এসেছে। ফলে প্রাথমিকভাবে এখানে ৩৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণের কথা থাকলেও পরে ২৬০ একরের মধ্যেই একমাত্র ইউনিটটি স্থাপন করা হয়েছে।
৬৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তালতলী পাওয়ার প্লান্টটি নির্মাণে সমুদয় অর্থ ‘চায়না এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে চীনের ‘পাওয়ার চায়না’ নামের প্রতিষ্ঠানটি। এ পাওয়ার স্টেশনটি নির্মাণ ও বিদ্যুৎ ক্রয়ে মালিকানা প্রতিষ্ঠানের সাথে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল পিডিবি’র চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী পাওয়ার চায়না’র কাছ থেকে পিডিবি প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ ৬.৮৮ টাকা দরে কিনে নেবে। তবে চাহিদা কম থাকা বা কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতার কম বিদ্যুৎ গ্রহণ করলেও পিডিবি’কে পুরো বিদ্যুতের মূল্যই পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছে পাওয়ার চায়না’র দায়িত্বশীল মহল। ইতোমধ্যে পুরো কমিশনিংসহ প্লান্টের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৩০ মাসে আগে সফলভাবে চালু হলেও গ্রীড ট্রান্সমিশন লাইনের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ১৭ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়েছে। তবে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিক্ষামূলক চালুর পরে বিভিন্ন পরিক্ষা নিরিক্ষা অব্যাহত থাকায় পায়রা’র ১টি ইউনিট সচল রেখে ৬শ’ মেগাওয়াটের মত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবারহ হচ্ছে। খুব শিঘ্রই রামপালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর সাথে সেখান থেকে মোংলা-গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকার আমীন বাজার পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবারহ শুরু হচ্ছে। সাথে পায়রা’র দুটি ইউনিট থেকেও পূর্ণলোডে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডে সরবারহ করা হবে বলে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তত্ববধায়ক প্রকৌশলী-অপারেশন শাহ আবুল হাসিব জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন