মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

আইসিডিডিআর’বি’র গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী পদক্ষেপ প্রয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৩৫ পিএম

যক্ষ্মা মোকাবিলায় বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ লক্ষ্যে স্ক্রিনিং, কেস ফলো আপ, ভার্চুয়াল কেয়ার ও ডিজিটাল স্বাস্থ্য, কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রশিক্ষণের দিকে আরও মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা।

বৃহষ্পতিবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে পরিচালিত ফেলোশিপ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠান ও সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা।

সেমিনারে আইসিডিডিআর’বি পরিচালিত ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) কার্যক্রমের আওতায় চারজন গবেষক তাদের যক্ষ্মাবিষয়ক গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষক ডা. আজিজুর রহমান শারাক রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীদের পরিবারের সদস্যদের ওষুধ সংবেদনশীলতা এবং এ ধরনের যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবের ওপর তার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, নভেম্বর ২০২০ থেকে অক্টোবর ২০২১ সালের মধ্যে পরিচালিত এই ক্রস-সেকশনাল পদ্ধতির গবেষণায় তিনি ঢাকায় ৯৩ জন ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর পরিবারের মোট ৩৫৫ জন সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের যক্ষ্মার লক্ষণ ছিল এবং পরবর্তীকালে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ জনের যক্ষ্মা ধরা পড়ে। এছাড়া ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর পরিবারের ১৭৮ জন সদস্যকে স্ক্রিনিং করে একজন যক্ষ্মা রোগী পাওয়া গেছে।

একই প্রতিষ্ঠানের ডা. ফারিহা আলম মিহিকা ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকায় ফুসফুস যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ পরিষেবার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাববিষয়ক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, তিনি ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ও যক্ষ্মা রোগীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এ সময় তিনি ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়সীমার মধ্যে সংগৃহীত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে একটি ক্রস-সেকশনাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষণায় দেখা যায় যে, কোভিড-১৯ এর কারণে যক্ষ্মা স্ক্রিনিং ১৬ থেকে ৩৫ শতাংশ প্রভাবিত হয়েছে। সেবাগ্রহীতারা লকডাউনের কারণে সৃষ্ট পরিবহন সঙ্কটে ৯৫ শতাংশ এবং কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার ঝুঁকির বিষয়কে প্রধানতম সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবাদানকারীর অভাব, কাজের চাপ বৃদ্ধি এবং কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়গুলো স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ঢাকায় শিশু যক্ষ্মা শনাক্তকরণ প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে গবেষণা করেন নিপসমের ডা. মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন। একটি কোয়ালিটিটিভ গবেষণায় তিনি যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, তাদের পিতামাতা এবং স্বাস্থ্য সেবা দানকারীসহ ৩২ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তার গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক ও প্রচলিত স্টিগমা, ভুল ধারণা এবং শিশু যক্ষ্মা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, অপ্রতুল কন্ট্যাক্ট ইনভেস্টিগেশন, রোগ নির্ণয়ে সীমাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবাদানকারী এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা শিশু যক্ষ্মা শনাক্তকরণ বাধাগুলোর মধ্যে অন্যতম।

একই প্রতিষ্ঠানের নার্স মমতাজ বেগম নিপসম স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং রোগীদের মাঝে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মাবিষয়ক জ্ঞান ও মনোভাব সম্পর্কিত গবেষণা উপস্থাপন করেন। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়সীমার মধ্যে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তিনি একটি ক্রস-সেকশনাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। এই গবেষণায় তিনি ২৩২ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, যার মধ্যে ১০১ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও ১৩১ জন রোগী। সমীক্ষায় দেখা গেছে, শতকরা ৯৩ শতাংশ চিকিৎসক ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বিষয়টি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন। আর প্রায় ৬৯ শতাংশ নার্স এবং ৮২ শতাংশ রোগী এই বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান রাখেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, যক্ষা রোগীদের জন্য এই রোগ থেকে সুস্থ হওয়া একটি যুদ্ধ। চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন অনেকদূর এগিয়েছে। ফলে টিবি এখন প্রতিরোধযোগ্য রোগে পরিণত হয়েছে। তবে এখনও নতুন নতুন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তা রোধ না করা গেলে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না। তাই টিবি প্রতিরোধে সবার আগে তা শনাক্ত করতে হবে।

গবেষণায় গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই। গবেষণার মাধ্যমে টিবির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করতে হবে। এরপর স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে যক্ষ্মা নির্মূলে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা তা পূরণ করা সম্ভব হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাত ও গবেষণায় সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলেও জানান ডা. আনোয়ার হোসেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন