নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা ও প্রতিপালক মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য। কিন্তু মানুষ দুই দলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। একদল তার ইবাদত-বন্দেগি করে। অন্যদল ইবাদত-বন্দেগি করে না। একদল ইবাদত করার মাধ্যমে সৌভাগ্যবান হয়। অপরদল নাফরমানি করে হতভাগ্য হয়। যারা ইবাদত করে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। যারা নাফরমানি করে তাদের জন্য রয়েছে তিরস্কার। যারা মহান আল্লাহর ইবাদত করবে তারা চিরসুখের জান্নাত লাভ করবে। পক্ষান্তরে যারা তার নাফরমানি করবে তাদেরকে আপন কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করতে হবে। মানুষ প্রতিদিন যেসব কাজ করে সেগুলোর প্রতিদান অবশ্যই পাবে। ভালো কাজ করলে ভালো প্রতিদান পাবে। মন্দ কাজ করলে মন্দ পরিণতি ভোগ করতে হবে। মানুষকে ভাল প্রতিদান কিংবা মন্দ প্রতিফল প্রদান করা হবে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। মানুষের প্রতিটি কর্মের সাক্ষ্য প্রস্তুত রয়েছে। সেসব সাক্ষ্য মানুষের পক্ষে যাবে বা বিপক্ষে প্রমাণস্বরূপ দাঁড়াবে। মানুষের কৃতকর্মের যেসব সাক্ষ্য রয়েছে সেগুলোর মধ্য হতে কয়েকটি উল্লেখ করছি।
মহানবির সাক্ষ্য : মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই ধরাধামে প্রেরণ করেছেন উম্মতকে হেদায়েত ও পথ প্রদর্শন করার জন্য। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তের তেইশ বছরে আল্লাহ তাআলার সব আদেশ-নিষেধ উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বিদায় হজের ভাষণে তিনি লক্ষাধিক সাহাবিকে সম্বোধন করে বলেছেন, আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছি? উপস্থিত সকলে বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আপনি অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আল্লাহর বাণী আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহর বাণী পৌঁছাতে গিয়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবর্ণনীয় কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন হতে হয়েছে! বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয়েছে। আবু তালিবের ঘাঁটিতে তিন বছর বন্দি জীবন পার করতে হয়েছে! মক্কার পুণ্যভূমি হতে নির্বাসিত হতে হয়েছে! ওহুদের ময়দানে দন্ত মোবারক শহিদ করতে হয়েছে! তায়েফে দেহ মোবারককে রক্তাক্ত করতে হয়েছে! রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত এই দ্বীন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাহর কাছে রেখে গিয়েছেন। তাই উম্মাহর জন্য সমীচীন হলো তার রক্তভেজা দ্বীন মেনে চলা। যদি আমরা তার আনীত দ্বীন মেনে না চলি, তাহলে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সামনে সাক্ষ্য প্রদান করবেন। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক সাক্ষ্য প্রদান করার বিষয়টি আল-কুরআনে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি যাতে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্যে এবং যাতে রাসুল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৩)
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবার বিষয়টি হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত। তিনি কেবল এই উম্মতের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন তা নয়, বরং তাঁর উম্মতকে নিয়ে হজরত নুহ আলাইহিস সালামের উম্মতের বিরুদ্ধেও সাক্ষ্য প্রদান করবেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. বলেন, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন হজরত নুহ আ.-কে ডাকা হবে। তিনি বলবেন, হে আমাদের প্রভু! আমি আপনার পবিত্র দরবারে হাজির। আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কি আমার বাণী পৌঁছে দিয়েছিলে? তিনি বলবেন, হাঁ। এরপর তার উম্মতকে জিজ্ঞাসা করা হবে, নুহ আ. কি তোমাদের নিকট আমার বাণী পৌঁছে দিয়েছে? তারা বলবে, আমাদের কাছে কোন ভয়প্রদর্শনকারী আসে নি! তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার পক্ষে কে সাক্ষ্য দেবে? তিনি বলবেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মতগণ। তখন তারা সাক্ষ্য দেবে যে, নুহ আ. তাঁর উম্মতের নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের জন্য সাক্ষী হবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৪৮৭)
ফেরেশতাদের সাক্ষ্য : মানুষের কৃতকর্ম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য মহান আল্লাহ ফেরেশতাগণকে মানুষের তত্ত্বাবধায়ক রূপে নিযুক্ত করে দিয়েছেন। দুইজন সম্মানিত ফেরেশতা স্কন্ধে বসে মানুষের আমলনামা লিখে চলেছেন। ডান কাঁধের ফেরেশতা ভালো কাজকর্ম লিখছেন এবং বাম কাঁধের ফেরেশতা মন্দ কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ করছেন। এসব ফেরেশতা মানুষের পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবেন। মানুষ ভালো কাজ করলে পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবেন। মন্দ কাজ করলে বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবেন। ফেরেশতাগণের সাক্ষ্য যাদের পক্ষে যাবে তারা স্বাচ্ছন্দ্যময় জান্নাতে অবস্থান করবে। পক্ষান্তরে তাদের সাক্ষ্য যাদের বিরুদ্ধে যাবে তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাই মানুষের জন্য সমীচীন হলো ভেবেচিন্তে কাজ করা। ভালো কাজে মনোনিবেশ করা ও মন্দ কাজ পরিত্যাগ করা। ফেরেশতাগণ সাক্ষী হবেন মর্মে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন তিনি যে তা সজ্ঞানেই করেছেন সে ব্যাপারে আল্লাহ নিজেও সাক্ষী এবং ফেরেশতাগণও সাক্ষী। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৬৬) আল কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।’ (সুরা ক্বাফ, আয়াত : ১৭-১৮) ফেরেশতাগণ মানুষের পাপ পুণ্যের খতিয়ান পূর্ণাঙ্গভাবে জানেন। তাই তাদের পক্ষে যথাযথ ও সঠিক সাক্ষ্য প্রদান করা সম্ভব। ফেরেশতাগণকে মানুষের আমল সংগ্রহ করার তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করার বিষয়টি আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে আল কুরআনে বর্ণনা করে বলেছেন, ‘অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত রয়েছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে তোমরা যা কর।’ (সুরা ইনফিতার, আয়াত : ১০-১২)
পৃথিবীর সাক্ষ্য : আমরা এই পৃথিবীতে চলাফেরা করি ও বসবাস করি । বিভিন্ন কাজকর্ম করি। অনেক সময় নেক আমল করি। আবার কখনো বদ আমল করি। কখনো করি সৎকাজ। আবার কখনো করি অসৎ কাজ। আমরা যেসব কাজ করি তার সবই পৃথিবীর উপর নিষ্পন্ন হয়। তাই আমাদের সব ক্রিয়াকর্ম ও কার্যকলাপ পৃথিবীর নখদর্পণে রয়েছে। সে আমাদের সকল কাজের প্রত্যক্ষদর্শী ও নীরব সাক্ষী। এই পৃথিবী কেয়ামতের দিন আমাদের ভালো-মন্দ সকল কাজের সাক্ষ্য প্রদান করবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে, যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে এবং মানুষ বলবে, এর কী হলো? সেদিন সে তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।’ (সুরা জিলজাল, আয়াত১-৪) সুনানে তিরমিজির একটি হাদিসে সুরা জিলজালের চতুর্থ আয়াতের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আয়াতের ব্যাখ্যায় সেই হাদিসে বলা হয়েছে পৃথিবী সেদিন তার উপর যেসব কাজকর্ম করা হয়েছে তার সংবাদ ও সাক্ষ্য প্রদান করবে। ‘হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করলেন, ‘সেদিন পৃথিবী তার যাবতীয় বৃত্তান্ত ব্যক্ত করবে।’ তিনি বললেন, তোমরা কি জান পৃথিবীর বৃত্তান্ত কী? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই বেশি জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার বৃত্তান্ত হলো, তার বুকে প্রত্যেক নর-নারী যা কিছু করেছে সে তার সাক্ষ্য দেবে। পৃথিবী বলবে, সে তো অমুক অমুক দিন এই এই কাজ করেছিল। এটাই হল পৃথিবীর বৃত্তান্ত।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৫৩)
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য : মানুষের অধিকাংশ কর্মতৎপরতা, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দৌড়ঝাঁপ নিজের দেহ সত্তার পরিপালনকে কেন্দ্র করে। ভোগ-বিলাস, আরাম-আয়েশ ও সুখ-শান্তিকে সামনে রেখে। মানুষ চিন্তা করে কীভাবে হাত, পা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে পরিপুষ্ট করা যায় ও সুন্দর রাখা যায়। নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যত্ন নিতে এবং সেগুলোকে প্রতিপালন করতে মানুষ কৃপণতা করে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হাশরের ময়দানে মানুষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে। এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে কোন্ কোন্ কাজ করা হয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব মানুষের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রদান করবে! এ মর্মে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এসেছে, ‘যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে অগ্নিকুণ্ডের দিকে ঠেলে নেওয়া হবে এবং ওদের বিভিন্ন দলে বিন্যস্ত করা হবে, যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছাবে, তখন তাদের কান, চক্ষু ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। তারা তাদের ত্বককে বলবে, তোমরা আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা বলবে, যে আল্লাহ সব কিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন, তিনি আমাদেরও বাকশক্তি দিয়েছেন। তিনিই তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। তোমাদের কান, তোমাদের চক্ষু এবং তোমাদের ত্বক তোমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে না ধারণার বশবর্তী হয়ে তোমরা তাদের কাছে কিছু গোপন করতে না। তবে তোমাদের ধারণা ছিল যে, তোমরা যা কর তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ১৯-২২) কেয়ামত দিবসে বহু মানুষ নিজের মুখে নিজ নিজ কৃতকর্ম ও অপরাধ অস্বীকার করার চেষ্টা করবে। কিন্তু এ সময় মহান আল্লাহ তাদের মুখে মোহর এঁটে দেবেন। ফলে তারা কথা বলতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে কুরআন শরিফে এসেছে, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব। তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৬৫) হাদিস শরিফেও মানুষের জবান বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মানুষের জবান বন্ধ করে দেবেন। ফলে তারা কথা বলতে পারবে না। এরপর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। ‘হজরত আনাস ইবনু মালিক রা. বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম। এ সময় তিনি হেসে বললেন, তোমরা কি জান, আমি কেন হাসলাম? আমরা বললাম, এ সম্পর্কে আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। অতঃপর তিনি বললেন, বান্দা তার রবের সঙ্গে যে কথা বলবে সেজন্য হাসলাম। বান্দা বলবে, হে আমার পালনকর্তা! তুমি কি আমাকে অত্যাচার হতে আশ্রয় দাওনি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলবেন, হাঁ! আমি কারো প্রতি অত্যাচার করি না। এরপর বান্দা বলবে, আমি আমার ব্যাপারে স্বীয় সাক্ষ্য ছাড়া অন্য কারো সাক্ষী হওয়াকে বৈধ মনে করি না। তখন মহান আল্লাহ বলবেন, আজ তুমি নিজেই তোমার সাক্ষী হওয়ার জন্য যথেষ্ট এবং সম্মানিত লিপিকারবৃন্দও যথেষ্ট। তারপর বান্দার জবান বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরপর তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নির্দেশ দেওয়া হবে, তোমরা বলো। তারা তার আমল সম্পর্কে বলবে। তারপর বান্দাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে। তখন বান্দা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে উদ্দেশ্য করে বলবে, অভিসম্পাত তোমাদের প্রতি, তোমরা দূর হয়ে যাও। আমি তো তোমাদের সুখের জন্যই বিবাদ করছিলাম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৩২৯)
আমলনামার সাক্ষ্য : প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যেসব কাজকর্ম করে চলেছি, সেগুলোর সবই লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। ছোট হোক বা বড়, পুণ্য হোক বা পাপ এমন কোন কাজ নেই যা লিখে রাখা হচ্ছে না। আমলের বিরাট ডায়েরি প্রস্তুত করা হচ্ছে! আমলনামার এই ডায়েরি আমাদের পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। আমাদের ছোট বড় এমন কোন আমল নেই যা আমলনামায় সংরক্ষিত হচ্ছে না। তাই জীবন চলায় আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার। সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগরুক রাখা দরকার। অন্যথায় পরকালে ধৃত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। কেয়ামতের দিন আমাদের আমলনামা আমাদের সামনে পেশ করা হবে মর্মে আল কুরআনে এসেছে, ‘আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবলগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাব, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১৩-১৪) অপরাধী মানুষগুলো কেয়ামতের দিন তাদের বিস্তারিত আমলনামা দেখে হয়রান, পেরেশান ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে। কেননা তাদের আমলনামায় জীবনের সব ভালো মন্দ সবিস্তারে লিপিবদ্ধ থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদের ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে, হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয় নি। সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ৪৯)
তাই জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সামনে দাঁড়াবার ও হিসাব দেওয়ার চিন্তা মাথায় রাখা দরকার। যে কোন কাজ করার আগে ভাবা প্রয়োজন এই কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে নাকি অসন্তুষ্টি? আল্লাহর শাস্তি ও দোজখ হতে বাঁচতে চাইলে তার সন্তুষ্টির পথে চলার বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ সকলকে পুণ্যময় জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন।
লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা-১২১১
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন