পূর্ব প্রকাশের পর : দুখু মিয়া তার দুখের টানাটানিতে সুরধ্যানের এই চর্চা কখন কীভাবে করেছেন তা এক দারুণ আশ্চর্যের ব্যাপার।তিনি জীবন সংগ্রাম করতে করতেই হয়তো সুরের এই ব্যাপারগুলো আত্মস্থ করেছেন।এমনকি রবীন্দ্রনাথের মতো বড় শক্তিও তার গান থেকে কখনও উপকরণ নিয়েছেন।নজরুলের আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেব না ভুলিতেগ্ধ গানের পর রবীন্দ্রনাথ লিখেন তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলেগ্ধ।নজরুলও রবীন্দ্রনাথের গানের বাণী দ্বারা বিভিন্ন সময় এভাবে প্রভাবিত হয়েছেন।
গান একটি গুরুমুখী বিদ্যা।একজন সাধারণ কণ্ঠশিল্পী হতে গেলেও যে কাউকে এ ব্যাপারে একটা নির্দিষ্ট পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় যা অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য ও সাধনার ব্যাপার।নজরুলের ক্ষুধা ও দারিদ্র্েযর জীবনে তিনি তার অল্পই সুযোগ পেয়েছেন।কৈশোরে লেটো গানের দলে অল্পকিছুদিন গানের চর্চা করেছেন,বেশ কিছু উস্তাদের কাছে গানের তালিমও নিয়েছেন তিনি।কিন্তু এইসব বিচ্ছিন্ন ও অল্প পরিসরের চর্চা তার বাংলা গানের জগতে একজন এতবড় সুরস্রষ্টা হওয়ার পক্ষে সাধারণ দৃষ্টিতে যথেষ্ট হওয়ার কথা নয়।বীজ যেমন সহজাতভাবেই বৃক্ষকে ভেতর থেকে বের করে আনে তার বেলায় সেটাই হয়েছিল।তিনি বাইরে থেকে অল্প নিয়ে নিজের সহজাত প্রতিভায় তাকে বহুগুণে বিকশিত করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ হলেন শিল্পের মহাদেশ আর নজরুল নিজেই শিল্প।কবিতা,উপন্যাস,প্রবন্ধ,ছোটগল্প,গান ইত্যাদিতে রবীন্দ্র সাফল্য আকাশচুম্বী।শেষ জীবনে তিনি ছবিও এঁকেছেন।ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর নানা দেশ।তার সাথে সখ্য গড়ে উঠেছিল বিশ্বের সব বড় বড় ব্যক্তিত্বের,বইপাঠ ও ব্যক্তিগত সাক্ষাতে তাদের সাথে হয়েছিল তার চিন্তা ও ভাব বিনিময়।ফলে রবীন্দ্রপ্রতিভা বিশ্বময় বিস্তৃত প্রতিভা হতে পেরেছিল।অপরদিকে নজরুল প্রতিভা এত বিস্তৃত বিষয়কে অবলম্বন না করলেও নিজস্ব পরিধিতে তা সবচেয়ে প্রাণবন্ত,সবেচেয়ে নিপুণ।এক সমুদ্র জলকে একটি মাত্র গ্লাসে ভরে দেওয়া গেলে তা যে পরিমাণ টগবগে ও তেজি রূপ ধারণ করবে নজরুল প্রতিভা ছিল তার মতোই চঞ্চল।বাংলা সাহিত্যে একমাত্র তাকেই জ্ঞানে-অজ্ঞানে রবীন্দ্রনাথের সাথে তুলনা করা হয়।রবীন্দ্রনাথের সাথে একই সমান্তরালে উল্লেখ করার মত নাম বাংলা সাহিত্যে আর পাওয়া যায় না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন