গত বছরের ২২ মে রায়ান বার্ল একটি টুইটে লিখেছিলেন, ‘আমরা কি কোন স্পন্সর পেতে পারি, যেন প্রতি সিরিজ শেষে আঠা দিয়ে নিজেদের জুতো সারাতে না হয়’। ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পুমা সেই সমস্যার সমাধান করলেও এই অলরাউন্ডারকে মাথা পেতে নিতে হয়েছিল ক্রিকেট বোর্ডের শাস্তি। ঠিক ১৫ মাস পরে, সেই বার্লের হাত ধরেই জিম্বাবুয়ে পেল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অজিদের হারানোর প্রথম স্বাদ। ক্যাঙ্গারুদের মাটিতে আগের ১৩ চেষ্টায় ব্যর্থ হয় জিম্বাবুয়ে। সিরিজের আগের দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জেতে যথাক্রমে ৯৯ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে এবং ২১২ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটের বিনিময়ে। কিন্তু গতকাল ভোরে টাউন্সভিলে টসে জিতে বোলিংয়ের সিধান্ত নেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক রেজিস চাকাভা। সফরকারী দলের তিন পেসার রিচার্ড এনগারাভা, ভিক্টর নিয়াউসি ও ব্রাড ইভান্সের বোলিং তোপে লন্ডভন্ড হয়ে যায় অজিদের ব্যাটিং মেরুদন্ড। বাকি কাজটা একাই করেন অলরাউন্ডার বার্ল। স্বাগতিকদের ছোঁড়া ১৪১ রানের লক্ষ্য ৬৬ বল ও তিন উইকেট হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে চাকাভার দল। ২০১৪ সালের আগস্টের পর আবারও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পেল জিম্বাবুইয়ানরা। একই সাথে ম্যাচটি ভরপুর ছিল বহু রেকর্ডে। যার অন্যতম মিচেল স্টার্কের দ্রততম ওয়ানডে উইকেটের দ্বিশতক প্রাপ্তি।
অস্ট্রেলিয়া এক পর্যায়ে ৭২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে। সেই ধ্বংস্তূপ থেকে দলের হাল ধরেন প্রথম থেকেই দারুণ খেলতে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার ও গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল। এই ব্যাটার ছাড়া স্বাগতিকদের মাঝে অন্য কেউ ২ অংকের রান পান নি। ২২ বলে ১৯ করা ম্যাক্সওয়েল বার্লের বলে ফিরতি ক্যাচ দিলে ভাঙ্গে ৫৭ রানের জুটি। বার্ল ঘূর্ণিতে অজিরা শেষ ৫ উইকেট হারায় মাত্র ১২ রানে। ডেভিড ওয়ার্নের ইনিংস থামে সেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে। এই বাঁহাতি ওপেনার বল খেলেছিলেন ৯৪টি। একটি দলের পূর্নাঙ্গ ইনিংসে কেবল একজন ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত অবদানের শতাংস হিসেব করলে, ওয়ার্নার (৬৬.৬৬) আছেন দ্বিতীয় স্থানে। ১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৯* ( দলীয় রান ২৭২/৯ ) রানের ইনিংস খেলেন গ্রেট ভিভ রিচার্ডস। তাতেই ৬৯.৪৮ নিয়ে শীর্ষে এই ক্যারিবিয়ান। এদিকে অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমবারের মত ২০০ রানের নিচে অলাআউট হলো। আগের সর্বনিম্ন ২০৯ রান। এই ম্যাচে বার্লের বোলিং ফিগার হচ্ছে ৩-০-১০-৫। ওয়ানডেতে বোলিং শেষ হওয়ার পর সবচেয়ে কম ওভার খরচ করে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতী এখন এই লেগ স্পিনারের। অজিদের বিপক্ষে জিম্বাবুয়েন কোন বোলারের সেরা ফিগারও এটি।
জিম্বাবুয়ের রান তাড়াটা মোটেই সহজ ছিল না। ওপেনার মারুমানি এক দিক থেকে রান করে গেলেও ৩৫ রান করে ক্যামেরুন গ্রিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। তাতে দলীয় ৭৭ রানের ভেতরে ৫ উইকেট হারায় সফরকারীরা। যারমাঝে ৩ উইকেট নিয়ে ধসটা নামান জস হ্যাজেলউড। এই পেসার ১৯ তম অজি হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেটের মালিক হলেন। এই জন্য তিনি নিয়েছেন ৬৪ ম্যাচ। ৬ষ্ঠ ব্যাটসম্যান হেসেবে নামা সফরকারী কাপ্তান চাকাভা ৩৮ রানের জুটি গড়েন টনি মুনইয়াঙ্গাকে নিয়ে। অ্যাগারের বলে যখন মুনইয়াঙ্গা ফেরেন তখনও জয় থেকে ২৭ রান দূরে সফরকারীরা। বল হাতে জাদু দেখানোর পর ১ চার ও ১ ছক্কায় ১১ রানের ইনিংস খেলে জিম্বাবুয়েকে জয়ের খুব কাছাকাছি নিয়ে যান বার্ল। তবে স্টার্কের ২০০ তম উইকেটে পরিণত হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় এই অলরাউন্ডারকে। স্টারক ২০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছাতে নেন মাত্র ১০২ ম্যাচ ও ৫২৪০ বল। ২৩ বছর ধরে লেজেন্ড সাকলাইন মুস্তাকের কাছে ছিল এই রেকর্ডটি। পাকিস্তানি অফ স্পিনারের এই মাইলফকে পৌঁছাতে লেগেছিল ১০৪ ম্যাচ ও ৫৪৫৭ ডেলিভারি। এদিকে চাকাভার অপারাজিত ৩৭ রানের কল্যাণে ৩ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় আফ্রিকার দলটি। এই জয়ে জিম্বাবুয়েন কোচ ডেভ হ্যাটন জানান, ‘আমাদের এখন চাঁদে হাটার অনুভূতি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার মত বড় দলকে তাদের মাটিতে হারানো আমাদের ক্রিকেট ও দেশের জন্য একটা বিশাল ব্যাপার।’
আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে জিম্বাবুয়ের ৪র্থ জয় এটি। ১৫ ম্যাচে ৯ জয় ও ৬ পরাজয়ে ৯০ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ৭ নম্বরে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন