হারাধনের ৫টি ছেলে, রইল বাকি ২! বাংলায় বহুল প্রচলিত এই প্রবাদ এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ‘টি-২০ সংস্করণের ক্ষেত্রে’ খাটানো যায়। পঞ্চপাণ্ডবের মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবালের পর এবার টাইগার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। তবে টেস্ট ও ওয়ানডে চালিয়ে যাবেন। দুপুরে নিজের ফেসবুক ও টুইটারে মুশফিক জানান, ‘টি টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে আজ আমি অবসর নিচ্ছি। তবে, বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলা গর্বের সাথেই চালিয়ে যাব। আমি আশাবাদী যে, এই দুই সংস্করণে আমি আরও অনেক কিছু দিতে পারব দেশের জন্য।’ সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজ লিগের সুযোগ পেলে সেখানেও খেলবেন বলে লিখেছেন।
মুশফিকের টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই সংস্করণে শুরুর দিনই। সময়টা ২৮ নভেম্বর, ২০০৬। প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। অভিষেকের ১৫ বছর ২৮১ দিনের মাথায় ঘোষণা দিলেন টি-২০ থেকে সরে যাওয়ার। সম্প্রতি ব্যাট হাতে টি-টোয়োন্টিতে ফর্ম হীনতার কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মুশি। চলমান এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে করেন মাত্র ৪ রান। ২০১৮ সালের পর থেকেই গ্লাভস হাতে ক্যাচ ছাড়া নিয়মে দাঁড়িয়ে যায় মুশির। একই সাথে সম্প্রতি সময়ে উইকেটের পিছে দাঁড়িয়ে যথার্ত দিকনির্দেশনা দিতেও ব্যর্থ ৩৫ বছর বয়সী এই কিপার-ব্যাটসম্যান। তাতে ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জণ ছিল, টি-২০ বিশ্বকাপের দল থেকে ছেঁটে ফেলা হতে পারে এই ‘ক্ষুদে মাস্টার’কে। ক্রিকেট বর্ডকে সেই সুযোগ না দিয়ে, নিজেই ক্রিকেটের ছোট সংস্করণ থেকে সরে দাঁড়ালেন।
মুশফিক গত দশটি ইনিংসের মধ্যে সাতটিই দুই অঙ্ক ছোঁতে ব্যর্থ হন। এশিয়া কাপে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যথাক্রমে ১ ও ৪ রান করে আউত হন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতলেই বাংলাদেশ সুপার ফোরে খেলার সুযোগ পেত। সেই ম্যাচে শুরুতেই ক্যাচ ফেলে দেন মুশফিক। যারফলে বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে এশিয়া কাপ থেকে প্রথম পর্বেই বিদায় নেয়। এরপর বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থক ও বোর্ডের অনেকেই মুশফিকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। মুশফিক ১০২টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে, ৯৩ ইনিংসে ১৫০০ রান তুলেছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যারা কমপক্ষে ১৫০০ রান তুলেছেন তাদের মধ্যে একমাত্র মুশির গড় ২০ এর নিচে, স্ট্রাইক রেটও সর্বনিম্ন ১১৫.০৩।
মুশফিকুর রহিম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের পর তার সতীর্থ, সমর্থক ও ক্রিকেট বিশ্লেষকরা এই সিদ্ধান্তকে সম্মানের সঙ্গে দেখছেন। একই সাথে এই সংস্করণে তার অবদানকেও স্মরণ করলেন অনেকে। আপাতত দুজন ‘বাইরের’ জগতের মানুষের অভিনন্দনই বেশ প্রাসঙ্গিক। সাবেক মহিলা ক্রিকেটার ও উপস্থাপিকা মিশু চৌধুরী লিখেছেন, ‘আপনার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাচ্ছি।’ ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ডের ভোকালিস্ট শাকিব চৌধুরী লিখেন, ‘দারুণ খেলেছেন ক্যারিয়ারে। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা।’
টি-টোয়েন্টিতে মুশফিকুর রহিমের সর্বোচ্চ ইনিংস ৭২* রানের। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩৫ বলের এই ইংসটির কল্যাণে বাংলাদেশ দল ছোট সংস্করণে সর্বোচ্চ ২১৪ রান তাড়া করে জয় পায়। সেই আসরে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালেও ৫৫ বলে ৭২* করেন মুশি। তবে সেই ম্যাচ হারতে হয় টাইগারদের। মুশফিক তার ক্যারিয়ারে সর্বমোট ৬টি পঞ্চাশর্ধ ইনিংস খেলেন যার মাঝে ৩টি ২০১৮ সালে। সেই বছর ১৬টি ম্যাচ খেলে তিনি ১৩২.৩৩ স্ট্রাইকরেটে করেন ৩৯৭ রান, গড় ছিল ৩০.৫৫। মুশির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম বছরও সেটি। আর যদি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে তিক্ত ও বেদনার কথা বলতে হয়, তাহলে সামনে আসবে ২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে হার। বেঙ্গালুরুতে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে পরপর দুটি চার মেরে উদযাপন করেন মুশি। কিন্তু শেষ ৩ বলে ২ রান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ম্যাচ হারতে হয় বাংলাদেশকে।
২০১৯ সাল থেকেই টি-২০ সংস্করণে আবগমণের দিকে থাকে মুশফিকের ফর্ম। গতবছরের টি-২০ বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচ খেলে ১৪৪ রান করেন ১১৩.৩৮ স্ট্রাইকরেটে। তখন থেকে এই কিপার-ব্যাটারের সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সম্পর্কেও টানাপোড়েন শুরু হয়। তাকে ‘বিশ্রাম’ দিয়ে পাকিস্তান সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেছিল বিসিবি। দল থেকে বাদ পড়ার পর মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন মুশফিক। নির্বাচকরা তখন ‘বিশ্রাম’ বললেও আসলে তাকে ‘বাদই’ দেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে তাকে দলে রাখা হবে কিনা সেই ব্যাপারে আলোচনা চলে আসছিল বহুদিন থেকেই। তবে এশিয়া কাপের ব্যর্থ মিশন শেষে দল দেশে ফেরার পরের দিনই অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন ‘লিটল মাস্টার’ মুশফিক। তাতে নির্বাচকদের কাজ হয়ে গেল সহজ আর নিমিষেই থেমে গেল সকল আলোচনা।
টি-টোয়েন্টিতে মুশফিক
অভিষেক : ২০০৬
ম্যাচ : ১০২
ইনিংস : ৯৩
রান : ১৫০০
সর্বোচ্চ : ৭২*
গড় : ১৯.৪৮
স্ট্রাইক : ১১৫.০৩
ফিফটি : ৬টি
ছক্কা : ৩৭টি
ম্যাচসেরা : ৪ বার
ক্যাচ : ৪২টি
স্ট্যাম্পিং : ৩০টি
অধিনায়ক হিসেবে
ম্যাচ : ২৩
জয় : ৮
হার : ১৪
পরিত্যক্ত : ১
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন