ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলের হলোটা কি? মৌসুমের শুরু থেকেই বড্ড নড়বড়ে অলরেডরা। লিগে ৬ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে পয়েন্ট তালিকার সাত নম্বরে। সঙ্গে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছিল নাপোলির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচ। পরশুরাতে ৪-১ ব্যবধানে ম্যাচটি হেরে লজ্জার এক রেকর্ডের অংশীদার হল লিভারপুল। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে কোনো মৌসুমে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আর কোনো ইংলিশ দল এত বড় ব্যবধানে হারেনি। লিভারপুলের হতশ্রী রাতে আরেক ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম দারুণভাবে রাঙালো দুই মৌসুম পরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরে আসাটা। স্পার্স ঘরের মাঠে সাবেক ইউরোপ সেরা মার্শেইয়ের জিতল ২-০ ব্যবধানে। জোড়া গোল করেন রিচার্লিসন। একই সময় সান সিরোতে আরেক হাই ভোল্টেজ ম্যাচে ইন্টারের বিপক্ষে লেরয় সানের অসাধারণ গোলে জয় পেয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। আর বার্সালোনার জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অভিষেকেই লেভান্দোভস্কির হ্যাটট্রিক। তাতে ৫-১ ব্যবধানে বড় জয় জাভি হার্নান্দেজের দলের।
নাপোলির দিয়াগো আর্মান্দো মারাদোনা স্টেডিয়ামে ৪৫ মিনিট শেষে স্কোরলাইন – নাপোলি ৩: ০ লিভারপুল। শেষ পর্যন্ত নাপোলির মাঠ থেকে কাল ৪-১ গোলে হেরে ফিরেতে হয়েছে ক্লপের দলকে। এই মাঠে ক্লপের লিভারপুল শেষ ৩ ম্যাচেই হারের মুখ দেখল। রক্ষণে ফন ডাইক সর্বশেষ ৭ ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ২টি পেনাল্টি উপহার দিয়েছেন। যেখানে লিভারপুলের জার্সিতে তার আগের ১৫০ ম্যাচে কখনো পেনাল্টিই দেননি! তাছাড়া সাদিও মানের বিদায়, দিয়াগো জোটার ইনজুরিতে দারুণ রসায়নহীন আক্রমণভাগ। আর মাঝমাঠ? চোটের চোটপাটে সে তো এখন গড়ের মাঠ! ম্যাচ শেষে অলরেড বস ক্লপ বলেন, ‘প্রথমে আমি সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। একইসাথে এটাও বলবো আমাদের বাজে শুরুর সুবিধা নিয়ে নাপোলি গোটা ম্যাচ দারুন খেলেছে। আসলে দলটাকে এমনভাবে বদলাতে হবে, যাতে সব কিছুই অন্যরকম দেখায়।’ এই ম্যাচে নাপোলির পিতর জিলিনস্কির পেয়েছেন জোড়া গোল। জাম্বো আঙ্গিসা ও জিওভান্নি সিমিওনে করেন বাকি গোল দুটি। এটলেটিকো মাদ্রিদের কোচ দিয়াগী সিমিওনের ছেলে, ২৭ বছর বয়সী জিওভান্নি ম্যাচের ৪৪ মিনিটে গোল করে চুমু খেলেন শরীরে আঁকা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্যাটুতে। ১৪ বছর আগে এই উল্কি আঁকিয়েছিলন তিন। বিরতির পর লিভারপুললের হয়ে এক গোল শোধ দেন লুইস দিয়াজ। গ্রুপ ‘এ’র আরেক ম্যাচে আয়াক্স ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে রেঞ্জারস্কে।
গ্রুপ ‘বি’-তে বিগ ম্যাচে পোর্তোর বিপক্ষে এটলেটিকো জিতেছেও ২-১ গোলে। গোল তিনটিই হয়েছে ৯০ মিনিটের পর যোগ করা সময়ে! এটলেটিকোর মারিও এরমোসো বল জড়ানোর সময় ঘড়িতে সময় ৯১ মিনিট। ৯৬ মিনিটে উরিবের গোলে সমতায় পোর্তো। যোগ করা সময়ের ১১তম মিনিটে গ্রিজম্যানের গোল উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছে ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটনকে!
গ্রীষ্মকালীন দলবদলে বার্সেলোনায় আসার সময়ে যেন বায়ার্ন মিউনিখের ফর্মটাই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন রবার্ট লেভান্দোভস্কি। লা লিগায় কাতালানদের হয়ে চার ম্যাচ খেলে পাঁচ গোল করে ফেলেছেন তিনি। স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও লেভান্দোফস্কির শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। এই পোলিশ স্ট্রাইকারের হ্যাটট্রিকে চেক প্রজান্ত্রের ক্লাব ভিক্টোরিয়া প্লজেনকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। ম্যাচে অন্যদুটি গোল করেন ফ্রাঙ্ক কেসি ও ফেরান তরেস। ম্যাচের ৩৪ থেকে ৬৭ মিনিটের মাঝে হ্যাট্রিক পূরণ করেণ পোলিশ স্ট্রাইকার। ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ জাভি লেভান্দোভস্কির প্রশংসা করতে গিয়ে জানান, ‘আমি লেভার প্রেমে পড়ে গিয়েছি!’ আসলে ও কেবল নিজে খেলে না, দলকেও খেলায়। দারুণ এক ফুটবলারকে দলে টেনিছি আমরা।’
‘সি’ গ্রুপের বিগ ম্যাচটি ছিল সান সিরোতে। যেখানে একাই রাজত্ব করলেন জার্মান উইঙ্গার সানে। ম্যাচের বয়স তখন ২৫ মিনিট। জশুয়া কিমিচের মধ্যমাঠ থেকে লম্বা করে বাড়ানো বল ক্ষিপ্র গতিতে দুই ডিফেন্দারকে ছিটকে বুক দিয়ে রিসিভ করেন ২৬ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। এরপর গোলকিপারকে কাটিয়ে অসাধারণ এক গোলে এগিয়ে দেন বায়ার্নকে। ম্যাচের ৬৬ মিনিটের সানের নেওয়া শট ইন্টার কাপ্তান আমব্রোসিওর গায়ে লেগে জালে জরালে আত্মঘাতী গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাভারিনরা। বায়ার্ন কোচ জুলিয়ান নাগেলসম্যান ম্যাচ শেষে সব প্রশংসায় উগলে দিলেন সানের জন্য,‘লেরয়ের দুটি অসাধারণ মুভই ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। দারুণ খেলেছে সে আজ।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন