শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্ভর ফতুল্লার বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গারী ব্যবসার অন্তরালে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী বিভিন্ন অপরাধীদের বিশাল সিন্ডিকেট। পুলিশ, বিশেষ পেশার ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে এরা দিনকে দিন হয়ে উঠছে বেপোরোয়া।
অসাধু ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের কারনে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ছিচকে চোরদের সংখ্যা। এসকল ছিচকে চোরেরা আবার মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা সংগ্রহে তারা বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি করে তা ভাঙ্গারী দোকানগুলোতে নিয়ে গিয়ে নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে। এসকল চোরদের আবার অগ্রিম টাকা ও দিয়ে থাকে ভাঙ্গারী দোকানীরা।
স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় ওইসব চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অপকর্ম প্রকাশ্যে চালিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরব ভূমিকা নিয়ে এলাকার জনমনে নানা প্রশ্ন দানা বেঁধে উঠেছে।
এছাড়া জেলার সদর উপজেলার ফতুল্লার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা ভাঙ্গারী ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ওইসব দোকানী ও সিন্ডিকেট সদস্যরা স্বল্প বেতন কিংবা কমিশনে স্থানীয় মাদকসেবী, বখাটে যুবক ও ছিচকে চোরদের কাজে লাগিয়ে এবং তাদের ব্যবহার করে বিভিন্ন বাসা বাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট, সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন প্রকার লোহার মালামাল, টিন, ষ্টিল, তামা, পেপার, বই, এল্যুমিনিয়াম, প্লাষ্টিক ও টায়ার,নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারী দ্রবাদী জাতীয় দ্রব্য চুরি করিয়ে তা কম দামে ক্রয় করে বিশাল মজুদ গড়ে তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল-কারখানায় বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
এ পেশায় ফতুল্লাঞ্চলে প্রায় শতাধিক ভাঙ্গারী দোকানের সাথে প্রায় দুই সহস্রাধিক শিশু-কিশোর এবং নারীরা জড়িত। এছাড়া রয়েছে এ অঞ্চলে প্রায় ৩০ টি ভাঙ্গারী মালামাল ভাঙ্গার কারখানা। এদের মূলত সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই।
তথ্য মতে, ফতুল্লা থানা এলাকার পুলিশ লাইন সংলগ্ন গড়ে উঠা জেলার সর্ব বৃহৎ লোহার মার্কেটে ভাঙ্গারী দোকানীরা তাদের মালামাল বিক্রি করে থাকে। মার্কেটটিতে প্রকাশ্যে এ সকল মালামল বেচাকেনা হলেও প্রশাসনের নেই কোন নজরদারি।
তাছাড়া পাগলা এলাকায় ভাঙ্গারী ব্যবসার অন্তরালে একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এরা মালবাহী পরিবহন থেকে চুরি করে বিভিন্ন মালামাল। পাগলা মেরী এন্ডারসন সংলগ্ন দুটি দোকানে এবং তালতলা এলাকায় চারটি দোকানে একাধিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেচাকেনা করা সহ অপরাধিদের শেল্টার দিচ্ছে।
স্থানীয় নেতা- পাতি নেতা, বিশেষ পেশার একাধিক জন,অসাধু পুলিশ কর্মকতারা এদের নিকট থেকে নগদ অর্থ নিয়ে সকল প্রকার সহোযোগিতা করে আসছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটির মতে পাগলা মেরী এন্ডারসনের গেইট এলাকায় সক্রিয় রয়েছে আয়েত আলী, হাবুল্লাহ, ভোলাইয়া কালু সিন্ডিকেট, তালতলা এলাকায় সক্রিয় রয়েছে জুয়াড়ী নজরুল, সোর্স আক্কাস, জাহাঙ্গীর আলী, হাবু ডাকাত, সুমন, রাকিব সিন্ডেকেট।
জানা যায়, ভাঙারি ব্যবসায়ীরা তাদের নিযুক্ত ফড়িয়া-হকার কিংবা খুচরা ক্রেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন সিন্ডিকেট সদস্যরা রাতের অন্ধকারে টিউবওয়েলের মাথা, লোহার পাইপ, গাড়ীর যন্ত্রাংশ, প্লাষ্টিক সামগ্রী, নতুন-পুরাতন রড, সরকারী-বেসরকারী দপ্তর কিংবা আবাসিক এলাকায় পরিত্যাক্ত পড়ে থাকা বিভিন্ন মালামাল নিয়ে এসে ভাঙ্গারী দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছে
এমন কি কখনো-সখনো এ সকল চোরের দল সুযোগ বুঝে বাসা বাড়ী কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ অর্থ, স্বর্নালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে। শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্ভর ফতুল্লা ফতুল্লাঞ্চলের ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন টনকে টন বিভিন্ন মালামাল ট্রাক যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে।
স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের ব্যবহার করে এ ভাঙ্গারী ব্যবসাটি খুবই লাভজনক বিধায় ফতুল্লার শিল্পাঞ্চলের আনাচে-কানাচে, পাড়া- মহল্লার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভাঙ্গারী দোকান।
ভাঙ্গারী দোকানগুলোতে শ্যালু যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক্স মোটর, রেলওয়ের স্লিপার ও পাতসহ অন্যান্য মূল্যবান যন্ত্রাংশ, ফ্যান, দরজা-জানালার গ্রিল, টিউবওয়েল, যানবাহনের যন্ত্রাংশ, সাইকেল-রিক্সাসহ বিভিন্ন পরিবহনের চাকা, বিদ্যুত সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি, এল্যুমিনিয়াম ও তামার দ্রব্য, লোহার পাত ও পাইপ এবং রডসহ বিভিন্ন লৌহজাত দ্রব্য প্রকাশ্যে বেচাকেনা হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে।
এসবের পিছনে স্থানীয় মাদকাসক্ত ছিচকে চোর, বখাটে মাদকাসক্ত যুবক, মাদকাসক্ত মহিলা ও শিশু-কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন অপরাধী সিন্ডিকেট সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ রিজাউল হক দিপু জানায়, আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। এদের প্রতি নজরদারী করা হচ্ছে। অতি দ্রুত তাদের কে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন