শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

অপার সম্ভাবনাময় কাগজি লেবু

প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আনোয়ার হোসেন জসিম, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে : চায়ের রাজধানী ও পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গলের প্রধান অর্থকরী ফসল চা হলেও অপার সম্ভাবনাময় ফসল হচ্ছে কাগজি লেবু। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চা-এর পাশাপাশি কাগজি লেবুর ভূমিকাও আজ অগ্রগণ্য। শ্রীমঙ্গলের বাজারে প্রতি বছর এ অঞ্চলে উৎপাদিত প্রায় শত কোটি টাকার অধিক লেবু বেচা-কেনা হয় বলে ব্যবসায়ী ও বাগান মালিক সূত্রে জানা গেছে। শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের লেবুর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে দেশ ও বিদেশের বাজারে। শ্রীমঙ্গলে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির লেবু পাওয়া গেলেও কাগজি লেবু পাওয়া যায় অধিক পরিমানে। প্রচুর রসে পরিপূর্ণ টসটসে কাগজি লেবু সব মৌসুমেই শ্রীমঙ্গলের বাজারে বিক্রি হয়। তবে এ অঞ্চলে মে- আগস্ট পর্যন্ত ৪ মাস বিপুল পরিমাণ লেবুর ফলন হয়। এক সময় কাগজি লেবু শুধু পাহাড়ি টিলায় চাষাবাদ হতো। বর্তমানে দেশে-বিদেশে এ লেবুর বিপুল চাহিদার কারণে অনেকেই কাগজি লেবু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন অনেকের বাড়ির আনাচে-কানাচে ও পতিত জমিতে কাগজি লেবুর চাষাবাদ করা হচ্ছে। কাগজি লেবুর চাষাবাদ বিপুল লাভজনক হওয়ার কারণে শ্রীমঙ্গল ছাড়িয়ে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা ব্যাপকভাবে কাগজি লেবু চাষের প্রতি উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। সিলেট বিভাগের বাণিজ্যিক কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে এখন কাগজি লেবুর ব্যাপক সমারোহ। প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে লাখ লাখ কাগজি লেবু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন প্রসাধনী ও ক্যামিকেল কোম্পানিগুলো কিনে নিচ্ছে এসব কাগজি লেবু। প্রক্রিয়াজাত করে ছাড়ছে বাজারে। শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, বিদেশেও রয়েছে কাগজি লেবুর ব্যাপক চাহিদা। তাছাড়া বেভারেজ কোম্পানিগুলোও ‘লেমন কোল্ড ড্রিঙ্কস’ তৈরির জন্য বিপুল পরিমাণ কাগজি লেবু ক্রয় করে থাকে। প্রতি বছরে শ্রীমঙ্গলে কমপক্ষে শত কোটি টাকার কাগজি লেবু বেচা-কেনা হয়ে থাকে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। টিলা ও সমতল ভুমিতে কাগজি লেবুর বাগান দিগন্ত বিস্তৃত। উঁচু-নীচু পাহাড়ি টিলা, পাহাড়ের ঢালু, ফসলী জমির মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনাসহ আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে কাগজি লেবুর বাগান। বাগান মালিকরা জানান, আদিকাল থেকে শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির লেবুর চাষ কম-বেশী হলেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ শুরু হয় সত্তরের দশক থেকে। লাভজনক হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা ও হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, চুনারুঘাট উপজেলায় কাগজি লেবুর ব্যাপক চাষাবাদ করা হচ্ছে। লাভজনক হওয়াতে লেবু চাষের প্রতি চাষীদের উৎসাহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শ্রীমঙ্গলেই এর চাষাবাদ বেশী হয়ে থাকে। যা অন্যান্য অঞ্চলের উৎপাদিত কাগজি লেবুর চেয়ে স্বাদ, গন্ধ ও সাইজে আলাদা।
প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে জীপ, টেম্পু ও ঠেলা গাড়ি যোগে শ্রীমঙ্গলের বাজারে আসতে থাকে বিপুল পরিমাণ কাগজি লেবু। যা মধ্যদুপুর পর্যন্ত চলে। এখান থেকে প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমাণের কাগজি লেবু নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এমনকি লন্ডনসহ মধ্যপ্রাচ্যে শ্রীমঙ্গলের কাগজি লেবু রপ্তানী করা হয়ে থাকে। শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত কাগজি লেবু ছাড়াও উন্নত মানের চায়না, জারা, এলাচি, সিডলেস লেবু উৎপাদন হয়। দেশের লেবুর চাহিদার ৭৫ শতাংশ উৎপাদন হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন লেবু বাগান থেকে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় বর্তমানে ২৫ হাজার হেক্টর পাহাড়ি ও সমতল ভুমিতে কাগজি লেবুর চাষাবাদ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। লেবুর চাষ লাভজনক হওয়ায় রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমেছেন চাষিরা। লেবু চাষি নেপাল আদিত্য, শিপন মিয়া ও ঝাড়– মিয়া জানান, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার লেবু বাগানগুলোতে প্রায় ১০ সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করছে। অনেক দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় লেবু চাষের জন্য সেচ ব্যবস্থা খুবই ব্যয় বহুল। অনেকস্থানে বৈদ্যুতিক নলকুপের মাধ্যমে সেচ কার্য চালানো হয়। এ ব্যাপারে তারা সরকারের সুনজর কামনা করেন।
শ্রীমঙ্গলের সফল লেবু চাষি খলিল মিয়া জানান, লেবু চাষ লাভজনক হবার কারনে ১৯৮৮ সালে নিজের ব্যবহৃত বাইসাইকেল বিক্রি করে পতিত জমিতে লেবু চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ৫০ একর জমিতে লেবু চাষ করছেন বলে জানান।
মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও হবিগঞ্জের বাহুবল ও চুনারুঘাট উপজেলায় অসংখ্য নতুন নতুন কাগজি লেবুর বাগান গড়ে উঠেছে। কাগজি লেবুর চাষাবাদ বৃদ্ধির ফলে একদিকে বেকারদের হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে দেশের বাইরে লেবু রপ্তানী করে সরকার পাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শহিদুল হক জানান, ‘লেবু ধারাবাহিক বাম্পার ফলনে আমি খুবই আশান্বিত। লেবু সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা প্রতিষ্ঠিত হলে এই ফলন অতিতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতিতে লেবু বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন