আজ থেকে ১৭ বছর আগের কথা। ফ্রেঞ্চ ওপেনের ২০০৫ সালের শিরোপা জিতে চারদিকে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী এক স্প্যানিশ তরুণ। নাম তার রাফায়েল নাদাল। ২০২২ সালের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ইউএস ওপেনে কার্লোস আলকারাজ আবারও ফিরেয়ে আনলেন সেই স্মৃতি। স্বদেশী ও নিজের আদর্শ নাদালের ন্যায় টিনএজেই উঁচিয়ে ধরলেন গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা। ক্যাসপার রুডকে ৬-৪, ২-৬, ৭-৬ (৭-১), ৬-৩ গেমে দাপটের সঙ্গে হারিয়ে আলকারাজ নাম লেখালেন টেনিসের অভিজাতদের খাতায়। মাত্র ১৯ বছর বয়সে সর্বশেষ ইউএস ওপেন জয়ের পূর্বের রেকর্ডটি ১৪ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী গ্রেট পিট সাম্প্রাসের। আলকারাজের কৃতী এখানেই শেষ নয়। এই জয়ের ফলে, এটিপি র্যাঙ্কিংয়ের ৪৯ বছরের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ট হসেবে চূড়ায় বসলেন এই স্প্যানিশ। শিরোপা জিতে আলকারেজ জানালেন, তার আরও অনেক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার ক্ষুধা আছে।
চলতি বছরেই ফরাসি ওপেনের ফাইনালে রাফায়েল নাদালের কাছে স্ট্রেট সেটে হেরেছিলেন রুড। মজার ব্যাপার হচ্ছে রুড নাদালের টেনিস একাডেমমিরই ছাত্র। এ বার ইউএস ওপেনের ফাইনালে নাদালের দেশেরই কার্লোস আলকারাজের কাছে হার মানতে হল নরোয়েজিয়ান রুডকে। অন্যদিকে প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠলেও এক বারের জন্যও আলকারাজকে দেখে মনে হয়নি চাপে আছেন। এই তরুণ স্প্যানিশের শক্তিনির্ভর টেনিসের সামনে পিছিয়ে পড়েন রুড। প্রথম সেট থেকেই দাপট দেখাতে শুরু করেন টিনএজার। প্রথম সেটে রুডের সার্ভিস ভেঙে দেন আলকারাজ। ৬-৪ জিতে এগিয়ে যান তিনি। দ্বিতীয় সেটে অবশ্য ম্যাচে ফেরেন রুড। আলকারাজকে পাল্টা কোর্টের কাছে টেনে এনে পয়েন্ট জিততে থাকেন তিনি। চাপে পড়ে কয়েকটি ডবল ফল্ট করে বসেন আলকারাজ। সেগুলি কাজে লাগান রুড। দ্বিতীয় সেট ৬-২ জিতে যান তিনি।
তৃতীয় সেটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। দুই জনেই নিজেদের সার্ভিস ধরে রাখেন। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। তার মধ্যেও সেট জিততে পারতেন রুড। দুটি সেট পয়েন্ট পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আলকারাজ হাল ছাড়েননি। দুটি সেট পয়েন্ট বাঁচিয়ে খেলা টাইব্রেকারে নিয়ে যান। টাইব্রেকারে দাপট দেখান আলকারাজ। তার পরিচিত শক্তিশালী ডাউন দ্য গ্রাউন্ড শটের কোনও জবাব ছিল না রুডের কাছে। টাইব্রেকার জিতে তৃতীয় সেট জিতে নেন আলকারাজ।
চতুর্থ সেটেও রুডকে ফিরতে দেননি আলকারাজ। রুডের কাছ থেকে ব্রেক পয়েন্ট আদায় করেন। ফলে চাপে পড়ে যান নরওয়ের টেনিস ২৩ বছর বয়সী তারকা। অনেক চেষ্টা করেও সেট বাচাতে পারেননি তিনি। ৬-৩ গেমে সেট জিতে ম্যাচ জিতে নেন আলকারাজ। প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনাল খেলতে নেমে জিতলেন তিনি। আগে থেকেই নিশ্চিত ছিল যে ফাইনালে যিনি জিতবেন তিনি পুরুষদের টেনিসে এক নম্বরে উঠবেন। চার সেটের লড়াইয়ে জিতে সেই শীর্ষস্থান দখল করলেন আলকারাজ।
ম্যাচ হেরেও আলকারাজকে প্রশংসায় ভাসালেন রুড। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণকে এখন বিশ্বের সেরা টেনিস খেলোয়াড় বলেই মানছেন তিনি, ‘এখন আলকারাজ বিশ্বের সেরা টেনিস খেলোয়াড়। এটা ওর প্রাপ্য। টেনিসে ওর মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুব কম এসেছে। ওর গতি, খেলার বৈচিত্র আমাকে অবাক করেছে। ওর মধ্যে বেশ কয়েক জন বড় টেনিস তারকার গুণ রয়েছে। ওকে হারানো খুব কঠিন।’ অন্যদিকে বিষ্ময়কর এই কৃতী সাধনের পর আলকারাজ জানান, তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না যে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমি মুহূর্তটা অনুভব করার চেষ্টা করছি। আমার হাতের শিরোপার, সেটাই উপভোগ করছি। আমি এমন আরও শিরোপার জন্য ক্ষুধার্ত। সত্যি বলতে এই দিনটার জন্যই টেনিস র্যাকেট হাতে নিয়েছিলাম। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। কয়েকটা সপ্তাহ স্বপ্নের মতো কাটল। ফাইনালে রুডের বিরুদ্ধে জেতা সহজ ছিল না। কারণ, এর আগেও ওর গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু দিনটা আমার ছিল।’ নিজের আদর্শ নাদালকে স্মরন করতে ভুললেন না আলকারাজ, ‘নাদালকে দেখে আমার টেনিস শুরু। সেই নাদালকে টপকে বিশ্বের এক নম্বর হতে পেরে গর্বিত। এই জায়গা ধরে রাখার চেষ্টা করব।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন