সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শক্তিশালী ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় শুরু হবে ম্যাচটি। ভারতের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে জয়ের বিকল্প ভাবছেন না সাবিনা খাতুনরা। কারণ এ ম্যাচ জিতলে কেবল ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াই নয়, ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পাবে বাংলাদেশের মেয়েরা। এর আগে সব মিলিয়ে দশবারের মোকাবেলায় ভারতকে একবারও হারাতে পারেনি লাল-সবুজরা। আর সাফ টুর্নামেন্টে আগের পাঁচবারের সাক্ষাতে একটি মাত্র ড্র আছে বাংলাদেশের। ২০১৬ সালে টুর্নামেন্টের চতুর্থ আসরের গ্রুপ পর্বে গোলশূন্য ড্র করে ভারতকে রুখে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত এটিই ভারতীয়দের বিপক্ষে লাল-সবুজদের সেরা সাফল্য। যদিও ওই আসরের ফাইনালে ভারত ৩-১ ব্যবধানে বাংলাদেশকে হারিয়ে টানা চতুর্থ শিরোপা ঘরে তুলেছিল। আর বাংলাদেশ হয়েছিল প্রথমবারের মতো রানার্সআপ।
এবারেরর আসরেও শিরোপার প্রধান দাবীদার ভারতই। গ্রুপ পর্বে তারা প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩-০ গোলে হারালেও দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপকে ৯-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে তারা। বিপরীতে প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। সাফের ষষ্ঠ আসরের ফাইনালে খেলার আশা নিয়েই কাঠমান্ডু গেছেন সাবিনারা। আর সেটা করতে হলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে হবে তাদের। যদি তাই হয় তবে সেমিফাইনালে ‘বি’ গ্রুপ রানার্সআপ অপেক্ষাকৃত দূর্বল ভুটানকে পাবে বাংলাদেশ। আর যদি মারিয়া মান্ডারা আজ ভারতকে হারাতে না পারেন তাহলে শেষ চারে ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হতে হবে তাদের। এক্ষেত্রে ফাইনালে যাওয়া কঠিনই হবে লাল-সবুজদের জন্য। কারণ নিজেদের মাঠে নেপাল খুবই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। অন্যদিকে ভারত শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে নূন্যতম ড্র করলেই গ্রুপ সেরা হয়ে সেমিতে খেলবে। তাই ভারতের চেয়ে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে ম্যাচে লাল-সবুজদের জয়ের বিকল্প নেই। ম্যাচের আগে গতকাল কাঠমান্ডুর আর্মি হেডকোয়ার্টার মাঠে শিষ্যদের নিয়ে শেষবারের মতো অনুশীলন সারেন বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী। অনুশীলনের ফাঁকে সতীর্থ সাতজনকে নিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে ১০ মিনিটের ছোট্ট একটি পরামর্শ সেশন করেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। শক্ত প্রতিপক্ষ ভারতকে মোকাবেলায় বিশেষ কোন নির্দেশনা আছে কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সাবিনার উত্তর, ‘না বিশেষ কোন দিক নির্দেশনা নেই। তবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে হলে ভারতকে হারানোর বিকল্প নেই আমাদের। তাই সতীর্থদের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করলাম।’
অনুশীলনে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রস্তুতি সেরেছেন কৃষ্ণা রানী সরকার, আঁখি খাতুনরা। সেখানে চোখ রাখলে দেখা যায়, পাকিস্তানের বিপক্ষে উইনিং কম্বিনেশনেই আস্থা রাখছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। ভারতের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখলেও সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাংলাদেশ কোচ ও ফুটবলাররা। এ প্রসঙ্গে কোচ ছোটন বলেন, ‘২০১০ থেকে ২০২২- বাংলাদেশের নারী ফুটবলে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন এসেছে মেয়েদের মানসিকতায়। পরিবর্ধন হয়েছে তাদের খেলায়। মালদ্বীপ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সাবিনাদের দুর্দান্ত খেলা দেখার পর আমি ভারতের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারি।’ একই আশার কথা শোনালেন বালাদেশের ফুটবলাররাও। অধিনায়ক সাবিনা বলেন, ‘আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামবো।’ তারকা ফুটবলার কৃষ্ণা রানী সরকার বলেন, ‘গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ভারতকে হারানোর কোন বিকল্প নেই। আমরা সেই চেষ্টা করবো।’ ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমার কথায়, ‘সুযোগ পেলেতো অবশ্যই আমি গোল করবো ভারতের বিপক্ষে।’
ইনজুরিতে থাকায় ৮ দিন অনুশীলনের বাইরে ছিলেন বাংলাদেশ দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আনাই মোগিনী। কাল সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলন করলেন তিনি। তবে বাঁ পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে এখনো ব্যান্ডেজ। আজ কি অন্যতম প্রিয় এই শিষ্যকে পাবেন কোচ? নিশ্চিত করে বলতে পারলেন না কোচ ছোটনও, ‘আগামীকাল (আজ) ম্যাচের আগ পর্যন্ত আমরা তাকে পুরোপুরি ফিট করার চেষ্টা করবো। দেখা যাক কি হয়।’ গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আনাইয়ের এক গোলেই শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। তাই দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে ভারতের বিপক্ষে মাঠে দেখতে চাইবেন কোচ। সময়ই বলে দেবে শেষ পর্যন্ত কি হয়?