পুঁজিবাজারে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে ক্যাপিটাল গেইন করলে তার ওপর কর দিতে হবে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ায় গত বুধবার দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জারি করা পরিপত্রের ভিত্তিতে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে ক্যাপিটাল গেইন করলে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের তার ওপর কর দিতে হবে না। এতে ক্যাপিটাল গেইন নিয়ে শেয়ারবাজারে ছড়িয়ে পড়া গুজব দূর হওয়ার পাশাপাশি পতন কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে পুঁজিবাজার। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহসহ টানা চার সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার। চার সপ্তাহের টানা উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৪১১ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন বাড়ে ১৯ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। তবে, চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবস কমে মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে কমে লেনদেনের পরিমাণ। আর মঙ্গলবার প্রধান মূল্যসূচক সামান্য বাড়লেও কমে বাছাই করা সূচক এবং বুধবার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। একদিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫০ পয়েন্ট পড়ে যায়।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল লেনদেনের প্রথমদিকে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। ফলে লেনদেন শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে বড় উত্থান প্রবণতা দেখা দিলেও লেনদেনের মধ্যে সূচকের বেশ অস্থিরতা দেখা যায়। একাধিকর সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। তবে, শেষ ঘণ্টার লেনদেনে টানা বাড়ে সূচক। এতে সবকটি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। সেইসঙ্গে বড় হয়েছে দাম বাড়ার তালিকা।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৭টির এবং ১৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৫১৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৪২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৩০৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৬৫ কোটি ১ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮০ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ৯৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-বিডিকম অনলাইন, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, ইউনিক হোটেল, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, শাহিনপুকুর সিরামিকস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৭২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯১টির এবং ৮৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন