নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গত পাঁচ আসরের সবকটিতে শিরোপা জিতেছিল ভারত। এবার বাংলাদেশের মেয়েদের মাধ্যমে নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা পেল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ফুটবল আসরটি। গতকাল কাঠমুন্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে আসরের ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। জোড়া গোল আসে কৃষ্ণা রানি সরকারের পা থেকে। অন্য গোলটি করেন বদলি নামা শামসুন্নাহার জুনিয়র। স্বাগতিকদের পক্ষে ব্যবধান কমান অনিতা বাসনেত।
আগের আট দেখায় নেপালকে কখনও হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। দুই ড্র ছাড়া বাকি ছয়টিতে হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয়েছিল তাদের। এই প্রথম নেপালকে হারানোর পাশাপাশি শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতোয়ারা হলো বাংলার অপ্রতিরোধ্য মেয়েরা। এবারের সাফে পাঁচ ম্যাচ খেলে সবকটিতে জিতল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ২৩ বার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠায় তারা। বিপরীতে হজম করে কেবল একটি গোল। অর্থাৎ ফাইনালের আগে তাদের গোলপোস্ট ছিল অক্ষত। ইতিহাস গড়া এই সাফ জয়ে বড় অবদান রেখেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। টুর্নামেন্টে ৮ গোল করে তিনিই সর্বোচ্চ গোলাদাতা। তবে এর চেয়েও বড় স্বীকৃতিটা আদায় করে নিয়েছেন সাবিনা। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও। টুর্নামেন্টে সেরা গোলকিপার বাংলাদেশের রুপনা চাকমা। ৫ ম্যাচে যাঁর বিপক্ষে গোল হয়েছে মাত্র একটি।
কয়েক বছর আগেও জাতীয় দলে সাবিনা ছিলেন নিঃসঙ্গ। একাই লড়তে হতো। কারণ, সতীর্থরা ছিলেন ছোট। জাতীয় দলে খেলার মতো অভিজ্ঞতা ছিল না মারিয়া মান্দাদের। তখনো যেমন দলকে টেনে নিয়েছেন সাবিনা খাতুন, এদিনও তিনি নেতৃত্ব দিলের সামনে থেকে। গতকাল ফাইনালে গোল পাননি সাবিনা, তবে গোল করিয়েছেন। কোনো না কোনোভাবে দলে জয়ে অবদান থাকেই সাবিনার। ফাইনালের আগপর্যন্ত প্রতি ম্যাচে করা ৮ গোলের মধ্যে দুটি হ্যাটট্রিক। প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয়ে সাবিনার দুই গোল। পাকিস্তানের বিপক্ষে দলের ৬-০ গোলে জয়ে সাবিনার তিন গোল। ভারতের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয়ে সাবিনা গোল পাননি। সেদিন দুই গোল করেন স্বপ্না। সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ৮-০ গোলে উড়িয়ে দেয় ভুটানকে। সাবিনা হ্যাটট্রিক করেন সেদিনও।
দল হিসেবে এবার বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলেছে। তার মধ্যেই সাবিনা ছিলেন আলাদা। ঢাকা ছাড়ার আগে বলেছিলেন, শিরোপা নিয়ে ফিরতে পারলে নিজেকে সুখী ভাববেন। এদিন সত্যিই নিজেকে সুখী ভাবার দিন সাবিনার। তার নেতৃত্বেই যে বাংলাদেশের মেয়েরা হিমালয় জয় করে ফিরছেন দেশে। শিরোপা নিয়ে দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকা সাবিনা ম্যাচের পর প্রকাশ করেছেন তীব্র উচ্ছ্বাস, ‘দীর্ঘ ১২-১৩ বছরের অপেক্ষা শেষ হয়েছে। দেশবাসী দোয়া করছিল এবং আগের রাতে আমি দেখেছি যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে আমাকে ট্যাগ করেছিল এবং বলছিল ট্রফিটা ঘরে নিয়ে আসার জন্য। এই ট্রফি সারা দেশের, সারা দেশের মানুষের। ভালো লাগছে যে ট্রফিটা নিয়ে যেতে পারছি।’ ব্যক্তিগত অর্জন নিয়ে ২৮ বছর বয়সী সাবিনা বলেছেন, ‘আমরা ফেয়ার প্লে ট্রফি জিতেছি। আমি সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার ও আসরের সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছি। শিরোপা জেতার পাশাপাশি এটা আমার জন্য অনেক বড় অর্জন। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনের সেরা দিন।’
এক নজরে
চ্যাম্পিয়ন : বাংলাদেশ
রানার্সআপ : নেপাল
ফেয়ার প্লে : বাংলাদেশ
সর্বোচ্চ গোলাদাতা : সাবিনা খাতুন (বাংলাদেশ)
সেরা খেলোয়াড় : সাবিনা খাতুন (বাংলাদেশ)
সেরা গোলকিপার : রুপনা চাকমা (বাংলাদেশ)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন