সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়ে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ষষ্ঠ আসরে শিরোপা জিতে প্রথমবারের মতো সেরাদের সেরা হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে নেপালের (১০২) চেয়ে ৪৫ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ (১৪৭)। দুই দলের অতীত পরিসংখ্যানও এগিয়ে নেপাল। তারপরও মাঠের লড়াইয়ে সেরা হলেন সাবিনা খাতুনরাই। সোমবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে সাফের ফাইনালে স্বাগতিকদের ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে লাল-সবুজের নারী ফুটবলে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। মেয়েদের এমন কৃতিত্বে গর্বিত দেশবাসী। বহুদিন পর বাংলাদেশের কোটি ফুটবলপ্রেমী পেলেন উল্লাস করার উপলক্ষ্য। দেশের মাটিতে সাফ জয়ী বাঘিনীদের বরণ করে নিতে তারা এখন প্রস্তুত। সাবিনা বাহিনীকে সংবর্ধনায় সিক্ত করতে চান লাল-সবুজের ফুটবল ভক্তরা। চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসে করে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। গতকাল সকাল থেকে রাত অবদি চলেছে সে আয়োজনই। ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে ছাদখোলা বাস। এই বাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সংস্থা (বিআরটিসি)।
আজ দুপুরে দেশে ফিরবে সাফ জয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এদিন নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১২টায় কাঠমান্ডু থেকে বিমানে চড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, আঁখি খাতুন, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সিরাত জাহান স্বপ্না, মারিয়া মান্ডা, মাসুরা পারভীনরা। এক ঘণ্টার ফ্লাইট শেষে দুপুর সোয়া ১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখার কথা রয়েছে তাদের। প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতে দেশের ফুটবলে ইতিহাস গড়ার পরই লাল-সবুজের ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেওয়ার দাবি ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিভিন্ন মহল থেকেও আসে এ দাবি। ফাইনালের আগে কিছুটা আক্ষেপ আর আবেগ নিয়ে জাতীয় নারী ফুটবল দলের তারকা খেলোয়াড় সানজিদা আক্তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তার সেই ফেসবুক স্ট্যাটাস গণমাধ্যমে প্রকাশের পর মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। মূলত সানজিদার ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণেই সাফ জয়ী মেয়েদের ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনার দাবি জোরদার হয়। সানজিদা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই।’
বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা সাহসিকতা আর দৃঢ় প্রত্যয়ের খেলায় শুধু চ্যাম্পিয়ন ট্রফিই জেতেনি, জিতে নিয়েছে দেশের মানুষের ভালোবাসাও। আর তাই তাদের রাজসিক ঘরে ফেরাটা রঙিন করে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে বিআরটিসি ইনকিলাবকে জানিয়েছে, ৭৫ সিটের ডাবল ডেকার বাসের দুইতলার ১০টি সিট তুলে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি বিআরটিসির মতিঝিল ডিপোর একটি ডাবল ডেকার বাসের ছাদও কাটা হয়েছে। একই সঙ্গে বাসের গায়ে চ্যাম্পিয়নদের ছবিযুক্ত বড় স্টিকার লাগানো হয়েছে। মতিঝিল বাস ডিপোর ম্যানেজার মো. মাসুদ তালুকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ প্রসঙ্গে কাল বিকেলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সাফ জয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিতে বিআরটিসির একটি ডাবল ডেকার বাসের ছাদ খুলে ফেলেছি আমরা। একইসঙ্গে আসনগুলো সরিয়ে ফেলারও কাজ চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসার পরই আমাদের মতিঝিল ডিপোতে এ কাজ শুরু করেছি। যা শেষের পথে। আজ (গতকাল) রাতের মধ্যেই বাসটি প্রস্তুত হয়ে যাবে।’
সোমবারের ফাইনাল ম্যাচের আগে বাংলাদেশ ও নেপাল আটবার মুখোমুখি হয়েছিল। যেখানে ছয় ম্যাচ জিতেছে নেপালীরাই। দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ফলে সাবিনা-কৃষ্ণাদের ইতিহাসগড়া এই জয়ে নেপালবধের অপেক্ষা ঘোচার পাশাপাশি ঘুচলো অধরা শিরোপা জয়ের অপেক্ষাও। সাফে তিনবার সেমিফাইনাল ও একবার ফাইনালে হারের পর অবশেষে শিরোপার দেখা পেয়ে ইতিহাস গড়ে দেশবাসী গর্বিত করলো বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। মেয়েদের ট্রফি জেতার মধ্য দিয়েই দীর্ঘ ১৯ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দল। এবার অতীতের সেই গৌরব ফিরিয়ে আনলো বাংলার বাঘিনীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন