পশ্চিম জোন বিদ্যুৎ বিতরন কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র সাথে বরিশাল সিটি করপোরেশনের দেনা পাওনার দন্ধের আপতত নিরশন হলেও বকেয়া প্রায় ৬০ কোটি টাকা পরিশোধ নিয়ে কেন ফয়সালা হয়নি। তবে এখন থেকে সিটি করপোরেশন নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার ভিত্তিতে সরবারহ অব্যাহত রাখতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। বকেয়া নিয়ে দন্ধের যের ধরে দুদিন পরে বৃহস্পতিবার সন্ধায় বরিশাল মহানগরীর রাস্তার বাতি জ¦লার পরে ঐ রাতেই নগরীর বরিশাল ক্লাবে বিভাগীয় কমিশনারের মধ্যস্ততায় সিটি করপোরেশন এবং ওজোপাডিকোর মধ্যে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিটি মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়াও ওজোপাডিকো’র প্রধান প্রকৌশলী- পরিচালন, এবং তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীগন অংশ নেন।
রাত ৯টা থেকে প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঐ বৈঠকে এখন থেকে সিটি করপোরেশন নিয়মিতভাবে ব্যাবহৃত বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বকেয়া প্রায় ৬০ কোটি টাকা নগর ভবন থেকে কবে কিভাবে পরিশোধ করা হবে, সে ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না হলেও বিদ্যুৎ বিভাগের সব অর্থ পরিশোধে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে নগর প্রশাসন।
উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্ট্রিট লাইট ও পানির পাম্প সহ বিভিন্ন স্থাপনার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রায় ৬০ কোটি টাকা পরিষোধে মন্ত্রনলয়ের নির্দেশে গত ৮ আগষ্ট নোটিস দেয় ওজোডিকো। এ প্রেক্ষিতে নগর ভবন থেকে প্রায় ৭৮ লাখ টাকা পরিষোধ করা হলেও অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন না করায় মঙ্গলবার দুপুরে ওজোপাডিকো নগরীর ৪৮টি ষ্ট্রিট লাইট সংযোগের ১৫টি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কিন্ত নগর ভবন থেকে নগরীর সব রাস্তার বাতি বন্ধ রাখা হয়।
তবে বিষয়টি নিয়ে নগর ভবন ও ওজোপাডিকো’র তরফ থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। বুধবার রাতে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তার বাস বাসভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীলদের একগুয়েমীকে দায়ী করেন। বকেয়া থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা পরিশোধের পরেও সিটি করপোরেশনের রাস্তার বাতির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাকে জনস্বার্থ বিরোধী বলেও দাবী করে অবিলম্বে তা পূণর্বহালের দাবী জানায় নগর ভবনের দায়িত্বশীল মহল। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ে যোগোযোগের কথাও জানিয়েছিলেন সিটি মেয়র। তবে মন্ত্রনালয় থেকে যে অর্থ পরিশোধের কথা বলা হয়েছিল তা দেয়ার মত সামর্থ নগর ভবনের নেই বলেও জানান তিনি। কোন কিছু না জানিয়ে নগরীর রাস্তার বাতির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাকে ‘অমানবিক ও জনস্বার্থ বিরোধী’ বলেও মনে করছে নগর ভবনের দায়িত্বশীল মহল ।
তবে এব্যাপারে ওজোপাডিকো’র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে গত ৮ আগষ্ট বরিশাল সিটি করেপারেশনের কাছে বকেয়া প্রায় ৫৯ কোটি টাকা পরিষোধে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। নোটিশ প্রাপ্তির পরে নগর ভবন থেকে প্রায় ৭৮ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিতও করা হয়েছে। কিন্তু বকেয়া আদায়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের প্রেক্ষিতে ও নির্দেশেই সিটি করপোরেশনের স্ট্রিট লাইটের প্রায় ৪৮টি সংযোগের মধ্যে মাত্র ১৫টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধা থেকে নগর ভবন থেকে নগরীর সব রাস্তার বাতি বন্ধ রাখা হয় বলেও দাবী করেন ওজোপাডিকো’র কর্মকর্তাগন। এর বাইরে ৪৮টি পানির পাম্পের সংযোগ ছাড়াও সিটি করপোরেশনের রাস্তার বাতির অন্য কোন সংযোগ এবং অফিস সহ বিভিন্ন স্থাপনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি বলেও জানায় ওজোপাডিকো।
ওজোপাডিকো’র মতে, প্রতিমাসে বরিশাল সিটি করপোরেশন রাস্তার বাতি ও পানির পাম্প সহ বিভিন্ন সংযোগের বিপরিতে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার বিদ্যুৎ ব্যাবহার করে থাকে। তবে গত প্রায় ৫ বছরে নগর ভবন থেকে ওজোপডিকো’র হোল্ডিং ট্যাক্স ও বিভিন্ন দাবী সমন্বয় সহ প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকার মত পরিষোধ করা হয়েছে। ফলে বকেয়ার পরিমান প্রতিমাসেই বেড়ে এখন প্রায় ৬০ কোটির কাছে পৌছেছে বলে দাবী করছে ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীল মহল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন