শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কুড়িগ্রামে ইউএনও’র অবহেলায় প্রশ্ন ফাঁস!

ইউএনওকে শোকজ বরখাস্ত হয়েই শিক্ষা কর্মকর্তা হাসপাতালে

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মার গাফলতির কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় চলতি এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড কর্তৃক পরীক্ষার কয়েক হাজার প্রশ্নপত্র সেটের প্যাকেট পাঠিয়ে দেয়। এসব প্যাকেট থেকে প্রশ্ন সটিং এবং যাচাই-বাছাই করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একজন প্রতিবেদন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মাকে শোকজ করেছেন জেলা প্রশাসক কুড়িগ্রাম। গত বুধবার তিন কর্মদিবসের সময় দিয়ে শোকজের জবাব দিতে বলা হয় ওই শোকজ পত্রে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিধি মোতাবেক ইউএনও পরীক্ষার ব্যাপারে চিঠি দিয়েছেন। তারপরও কোন গাফিলতি আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম বলেন, বরখাস্ত হওয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো জানান, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের তিন সদস্যের তদন্ত টিম তদন্ত শেষে ফিরে গেছেন। ১/২ দিনে একজন মানুষের পক্ষে কয়েক হাজার প্রশ্নের প্যাকেট যাচাই বাছাই করা অসম্ভব।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভূরুঙ্গামারী ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মা গত ১১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য গোপনীয় কাগজ পত্রাদি যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন জমা দেবার জন্য উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমানকে দায়িত্ব দেন। পত্রে বলা হয়, ভূরুঙ্গামারী থানায় প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য গোপনীয় কাগজপত্রাদি সংরক্ষিত রয়েছে। উক্ত সিলগালাকৃত পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র ও অন্যান্য গোপনীয় কাগজপত্রাদি বিবরণী মোতাবেক সঠিক আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করে ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ করেন। এই পত্রের অনুলিপি দেয়া হয় ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি উপজেলার ৬টি পরীক্ষা কেন্দ্রের সকল সচিবগণকে। পত্রে আরও উল্লেখ্য করা হয়, পরীক্ষার সময়সূচি অবশ্যই খামের উপরে লিখতে হবে।
আরও জানা যায়, ভূরুঙ্গামারী থানায় প্রশ্ন বাছাইয়ের সর্টিং করার সময় নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আব্দুর রহমানের যোগসাজসে বাংলা ১ম পত্রের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের ভিতর বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের প্রশ্নপত্রের একটি করে খাম ঢুকিয়ে নেন এবং প্যাকেট সীলগালা করেন। তার ওপর স্বাক্ষর করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান। বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষার দিন যথানিয়মে থানা থেকে বাংলা ১ম পত্রের প্যাকেট এনে তা খুলে অন্য খামগুলো কৌশলে সরিয়ে ফেলেন কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমানসহ তার সহযোগিরা। এসময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার বোর্ডের দেয়া তালিকা অনুযায়ী পাঠানো প্রশ্নে পত্রের খাম গণনা করার নিয়ম থাকলেও তারা দায়িত্ব অবহেলা করে তা করেনি। পরে প্রধান শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের হাতে লেখা উত্তর পত্র তৈরী করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হওয়া উত্তর পত্রের সাথে পরের দিন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। আর অনেকেই মোবাইলের মাধ্যমে উত্তরপত্র গোপনে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি করেন অন্যান্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিকট।
ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, আমার কাছে কোন চিঠি নেই। প্রশ্নপত্রসমূহে আমরা শুধু স্কড দিয়ে থাকি, বাকি সভাপতি এবং তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সটিং, সিলগালা রাখা না রাখা তাদের দায়িত্ব।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান বলেন, আমাকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমি বর্তমানে হসপিটালাইজড আছি এর বেশি কিছু বলতে পারবো না। ভূরুঙ্গামারী ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মাকে একাধিবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন