শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

ডিএসইতে শিগগিরই চালু হচ্ছে এটিবি

বৈপ্লবিক সংযোজন বলছেন বিশ্লেষকরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ব্যবসায় মূলধন প্রাপ্তি ও শেয়ারের মালিকানা পরিবর্তন সহজ করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শিগগিরই চালু হচ্ছে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা বা অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি)। ব্যবস্থাটি চালু হলে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা যেকোনো কোম্পানি এটিবিতে সরাসরি তালিকাভুক্ত হয়ে শেয়ার লেনদেন করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটিকে অবশ্যই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তিত হতে হবে। বর্তমানে পুঁজিবাজারের বাইরে দুই হাজারেরও বেশি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি চাইলে সরাসরি এটিবিতে নিজেদের শেয়ার লেনদেনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ২৯ আগস্ট এ-সংক্রান্ত আইন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড) রেগুলেশন, ২০২২ অনুমোদন দিয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর যা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছে ডিএসই। এটি প্রকাশ হলেই এটিবি চালু হওয়ার পথে সব আইনি বাধা দূর হবে। পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা শেয়ার লেনদেনের এ বিকল্পব্যবস্থাকে স্টক এক্সচেঞ্জে বৈপ্লবিক সংযোজন হিসেবে দেখছেন।
ডিএসই ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, এটিবি চালু হলে পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানির উদ্যোক্তারা খুব সহজে মালিকানা পরিবর্তন বা শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবেন। আগে এ কাজটি করতে অনেক খরচ হতো। এখন তা কম খরচেই করা যাবে। এ ছাড়া কোম্পানিগুলো সরাসরি শেয়ার লেনদেনের সুযোগ পাওয়ায় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল জোগানদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের মূলধন দিতে উৎসাহিত হবে। কেননা এটিবিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলোর বিনিয়োগ করা শেয়ার হস্তান্তরের অবারিত সুযাগ তৈরি হবে।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল হলো এমন ধরনের মূলধন, যা কোনো আর্থিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, যারা কিনা ভবিষ্যতে লাভজনক হতে পারে- এমন স্টার্টআপ বা ছোট কোম্পানিতে মালিকানা বা শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগ করে থাকে। সাধারণত বড় বড় বিনিয়োগকারী, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এ ধরনের তহবিল গঠন হয়ে থাকে। বাজারে বিনিয়োগকৃত শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মুনাফা ও মূলধন ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
দেশে এতদিন শেয়ার লেনদেনের বিষয়টি সহজ ছিল না। ফলে বেশ কয়েকটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল জোগানদাতা প্রতিষ্ঠান থাকলেও তা খুব বেশি কাজে আসছিল না।
শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান বলেন, এটি চালু হলে মার্কেটের গভীরতা অনেক বাড়বে। অনেক ভালো কোম্পানি আছে যারা বিভিন্ন কারণে সরাসরি তালিকাভুক্ত হতে চাচ্ছে না, তারা এখানে তালিকাভুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা ভালো শেয়ার পাবে। এটা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের একটা লিকুইডিটি দিবে, টাকা চাইলে শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলতে পারবে। এ ছাড়া ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলো এখানে একটা এক্সিট পয়েন্ট পাবে।
বর্তমানে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসগুলোর নিবন্ধকের পরিদফতরে (আরজেএসসি) দুই লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৮টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি এক লাখ ৯৫ হাজার ৪৫টি, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি দুই হাজার ৫২৩টি আর একক মালিকানা কোম্পানি আছে ১৬৫টি। বাকিগুলো হচ্ছে ট্রেড অর্গানাইজেশন, বিদেশি কোম্পানি, সোসাইটি আর অংশীদারি কোম্পানি। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে পুঁজিবাজারে আছে ৩৫০টি কোম্পানি। সেই হিসাবে ২ হাজার ১৭৩টি কোম্পানি এখন স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরে। এই কোম্পানিগুলো এটিবি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের শেয়ার লেনদেনের সুযোগ নিতে পারবে। আর বাকিগুলোকে আগে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম জানান, পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে তালিকাচ্যুত বা তালিকাবহির্ভূত যে সিকিউরিটিজগুলো আছে সেগুলো এটিবিতে লেনদেন করা যাবে। এ ছাড়া ডেবিট সিকিউরিটিজ ও মিউচুয়াল ফান্ডও লেনদেন হবে। রেজাউল করিম বলেন, এটিবি চালু হলে বাজারে শেয়ারের সরবরাহ বাড়বে। সামগ্রিকভাবে যা বাজারে গভীরতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগের বিকল্প সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এদিকে বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত যেকোনো কোম্পানি তাদের শেয়ার হস্তান্তর করতে গেলে ট্রান্সফার ফি ও মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটসহ বড় ধরনের খরচের বোঝা বহন করতে হয়। এ ছাড়া ১১৭ ফরম পূরণ করতে আরজেএসসিতে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। এটিবিতে এলে কোনো ধরনের ঝুটঝামেলা ছাড়াই সামান্য কমিশনেই শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে। বাড়তি কোনো ফি দিতে হবে না। উদ্যোক্তারা তাদের কোম্পানির বাজারমূল্য সম্পর্কে ধারণা পাবে। এ ছাড়া কোম্পানির পরিচিতি, সুনাম বা ব্র্যান্ড ভেল্যুও বাড়বে। এমনকি কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে এখান থেকে রাইট শেয়ার কিংবা প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার ছেড়ে তাদের মূলধন বাড়াতেও পারবে।
বিএসইসির মুখপাত্রের আশা, এতে অনেক কোম্পানি এখানে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। ফলে বাজার মূলধন ও লেনদেন বাড়বে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের গুরুত্বও বেড়ে যাবে।
এটিবিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো কর সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। এনবিআরের সম্মতি পেলে সাড়ে ৭ শতাংশ কর ছাড় পাবে কোম্পানিগুলো। পুঁজিবাজারে এলে কোম্পানি পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আগের চেয়ে বাড়ে, যা প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতে বড় ভূমিকা রাখে।
এছাড়া এটিবিতে তালিকাভুক্তি অনেকটা সরাসরি বা ডায়রেক্ট লিস্টিংয়ের মতো। নতুন শেয়ার না ছেড়ে উদ্যোক্তার হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্তি নেয়া যাবে। শেয়ারের মূল্যও হবে বাজারভিত্তিক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন