চীনের উত্তরাঞ্চলের জিনজিয়াংয়ের ঘুলজায় কোডিভ লকডাউন নীতির কারণে গত সপ্তাহে একদিনে অনাহারে বা চিকিৎসার অভাবে অন্তত ২২ জন মারা গেছেন। পুলিশ ও শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ)জানিয়েছে।
বেইজিংয়ের শূন্য-কোভিড ব্যবস্থার অধীনে কোয়ারেন্টাইনে আটকাপড়া উইঘুররা চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছে।
জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে (এক্সইউএআর) সংখ্যালঘুদের দুর্দশার কথা তুলে চীন সরকার যে দমনপীড়ন চালাচ্ছে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ চেয়েছেন আন্দোলনরত উইঘুর প্রবাসীরা।
এ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে উইঘুররা দাবি করছে, জিনজিয়াংয়ে উইঘুর এবং অন্যান্য তুর্কি সংখ্যালঘুদের নির্বিচারে আটক ও দমন করছে চীন। এটা আন্তর্জাতিক ও মানবতাবিরোধী অপরাধ। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার ভাষণে জিনজিয়াংয়ের দমনপীড়নকে বৈশ্বিক অধিকার লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ঘুলজা প্রায় পাঁচ লাখ উইঘুর এবং অন্যান্য তুর্কি মুসলমানদের একটি শহর। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আগস্টের শুরু থেকে লকডাউনের অধীনে রয়েছে। রেডিও ফ্রি এশিয়া এর আগেও ঘুলজায় অনাহার বা ওষুধের অভাবে মৃত্যুর খবর দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ঝুলজার একটি গ্রামের ৬০০’র বেশি তরুণ উইঘুরকে জিনজিয়াং কর্তৃপক্ষ আটক করেছিল। তারা কঠোর কোভিড-১৯ লকডাউন উপেক্ষা করেছিলেন এবং খাদ্য সংকট নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় প্রতিবাদ করেছিলেন।
চীনা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সাহায্যের জন্য মরিয়া উইঘুরদের পোস্ট করা ভিডিওগুলো সরকারের সেন্সরের কারণে দ্রুত মুছে ফেলা হচ্ছে। যা এটা দেখাচ্ছে যে, স্থানীয় লোকজনকে কঠোর ‘জিরো-কোভিড’ নীতির লকডাউনের অধীনে খাবার এবং চিকিৎসা সেবা পেতে লড়াই করতে হচ্ছে। অনেকে বলছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা অনাহারে মারা গেছেন।
আরএফএ জানিয়েছে, পোস্ট করা ভিডিওতে যেসব দাবি করা হয়েছে সেগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি তারা। ঘুলজা শহরের কর্মকর্তা এবং পুলিশের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া মৃত্যুর তথ্য অনুসরণ করেছে তারা। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ১৫ সেপ্টেম্বর সেখানে কমপক্ষে ২২ জন মারা গেছে।
ঘুলজার একটি পৌরসভার কাছে আরএফএ তথ্য চেয়েছিল যে গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার শহরে কতজন মানুষ অনাহারে মারা গেছে, তখন জানিয়েছিল ২০ জনের কথা। তবে শহরের কোথায় এসব মৃত্যু ঘটেছে সে সম্পর্কে তারা তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। সেখান থেকে বলা হয়, ‘অনাহারে ২০ জন মারা গেছে। আর ফোন দিও না।’
ঘুলজা সিটি মিউনিসিপ্যাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স স্টেশন থেকে অন্য একজন কর্মকর্তা আরএফএকে ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু তিনিও এর বেশি কিছু জানাতে অস্বীকার করেছেন।
চীনা প্ল্যাটফর্ম দুয়োইনে শেয়ার করা একটি ভিডিও অনুসারে, ১৫ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়াদের একজন ছিলেন হলমুতার ওমেরজান। যিনি ঘুলজার কেপেকিউজি গ্রামের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বিধবা স্ত্রী হুরিয়েত বেকরি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। কেউ আমার ফোন কলে সাড়া দেয়নি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন