শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

‘ইমপ্যাক্ট’ রাখতে পেরে খুশি আফিফ-মিরাজ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:১১ এএম

টি-টোয়েন্টিতে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ দলে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম আফিফ হোসেন। ম্যাচের পর ম্যাচ দলের ব্যাটিংকে বয়ে নিয়ে চলেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের দাবি মিটিয়ে হয়ে উঠেছেন দলের ভরসা। তাতে আত্মতৃপ্তি পেয়ে বসেনি তরুণ এই ব্যাটসম্যানকে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দলের বিপর্যয়ে দারুণ এক ইনিংস খেলার পর বললেন, পরের ম্যাচ থেকে আরও বেশি রানের আশা তার।
গত বিশ্বকাপের পর থেকে ১৪ টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশের মাত্র তৃতীয় জয় ছিল এটি। আরব আমিরাত বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত কোনো শক্তি না হলেও তারা লড়াইয়ে কমতি রাখেনি। এক পর্যায়ে ১১ ওভারে ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে আফিফ ও নুরুল হাসান সোহান ৯ ওভারে ৮১ রানের জুটি গড়েন। রান তাড়ায় আমিরাত এক পর্যায়ে সহজে হারবে বলে মনে হলেও পরে লোয়ার অর্ডারে দারুণ ব্যাটিংয়ে তারা চমকে দেয় বাংলাদেশকে। শেষে গিয়ে অবশ্য পেরে ওঠেনি অল্পের জন্য। দুবাইয়ে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ত্রাতা ছিলেন আফিফ।
১১ ওভার শেষে ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় দল। সেখান থেকে আফিফ দলকে এগিয়ে নেন নুরুল হাসান সোহানকে সঙ্গে নিয়ে। ৯ ওভারে দুজনের ৮১ রানের জুটিতে বাংলাদেশ পায় মোটামুটি ভালো পুঁজি। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে আফিফ করেন ৫৫ বলে অপরাজিত ৭৭। এই ইনিংস তার দারুণ ফর্মেরই ধারাবাহিকতা। এই বছর এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সফলতম টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান তিনিই। ১১ ম্যাচ খেলে ৩২৩ রান করে ফেললেন ৪০.৩৭ গড় ও ১২৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে। দলের আর কোনো ব্যাটসম্যান করতে পারেননি ২৫০ রানের বেশি। রান প্রচুর করলেও আফিফ বরাবরই অল্প কথার মানুষ। সামনের ম্যাচগুলোয় প্রত্যাশার প্রশ্নে তার ছোট্ট উত্তর, ‘আশা করি, পরের ম্যাচ থেকে আরও বেশি রান করব।’
বয়স ¯্রফে ২৩ হলেও এই সংস্করণে তার অভিজ্ঞতা এখন কম নয় মোটেও। ৫০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেললেন। তার ব্যাটিংয়েও সেই অভিজ্ঞতারই প্রকাশ, চাপের মধ্যে যেভাবে ইনিংসটি গড়লেন তিনি। ম্যাচ শেষে বললেন, একের পর এক উইকেট হারানোর পর তার চাওয়া ছিল শেষ পর্যন্ত দলকে টেনে নেওয়া, ‘শুরুতে উইকেট একটু কঠিন ছিল। বল গ্রিপ করছিল। টপ অর্ডার ভালো করতে পারেনি। আমি আর সোহান ভাই যখন ব্যাট করছিলাম, উইকেট আস্তে আস্তে ভালো হচ্ছিল বলে আমরা ভালো ব্যাট করতে পেরেছি। আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল যে, দুজন যদি শেষ পর্যন্ত থাকতে পারি, দুজনেরই বিশ্বাস ছিল যে দলকে একটা ভালো স্কোরে নিয়ে যেতে পারব।’
এই সফরে ব্যাটিং লাইন আপে এখন লিটনের পর সবচেয়ে অভিজ্ঞ নাম আফিফই। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এখানে নেই সিপিএল খেলার কারণে, বাদ পড়েছেন মাহমুদউল্লাহ, অবসরে গেছেন মুশফিকুর রহিম। মিডল অর্ডারের ম‚ল ভার এখন আফিফের কাঁধে। তবে সেই ভারে তিনি নুইয়ে পড়ছেন না, ‘কোনো বাড়তি চাপ ছিল না। যে একাদশ খেলছে, সেটিই আমাদের সেরা একাদশ। চাপ তাই ছিল না।’ ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সোহানও ম্যাচের পর প্রশংসা করলেন আফিফের ইনিংসের, ‘আফিফ সত্যিই ভালো খেলেছে। পুরো সময় স্ট্রাইক রোটেট করেছে দারুণভাবে। আমাদের জন্য এটা ছিল গুরুত্বপ‚র্ণ।’
এই চাপ উৎরাতে সহযোগীর ভুমিকায় ছিলেন আরেক জন- মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে এই জয়ে বড় অবদান রাখেন এই অলরাউন্ডার। তবে আপাতত আলোচনা বেশি তার ব্যাটিং নিয়ে। বলা ভালো, ব্যাটিং পজিশন নিয়ে। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের পর এই ম্যাচেও তাকে দেখা যায় ওপেনিংয়ে। এশিয়া কাপের ম্যাচে ২৬ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে তিনি বেশ চমকে দিয়েছিলেন। আরব আমিরাতের বিপক্ষে রোববার করতে পারেন স্রেফ ১৪ বলে ১২। তবে নিজের নতুন এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বেশ রোমাঞ্চিত, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে একটা সুযোগ দিয়েছে। হয়তো তারা মনে করছেন যে আমি ওপেন করলে ভালো। চেষ্টা করছি নিজেকে ওইভাবে তৈরি করার জন্য এবং ওপেনার হিসেবে আমাদের অবদানটা গুরুত্বপ‚র্ণ। আমার কাছে হয়তো অনেক বড় রান আশা করা হয় না। তবে আমি যদি ছোট ছোট “ইম্প্যাক্ট” রাখতে পারি, এটাই দলের জন্য অনেক ভালো হবে। ওইভাবেই নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করছি এবং ভালো খেলার চেষ্টা করছি।’
মিরাজ বললেন, কঠিন পরীক্ষায় উতরে জয় ধরা দিয়েছে বলে ইতিবাচক আবহ ছড়িয়েছে দলে, ‘আমাদের একটা ম্যাচ জেতা দরকার ছিল। কালকে আমরা সেই ম্যাচ জিতেছি। তো দলের ভেতর খুব ভালো একটা আবহ ছিল। বিশেষ করে আমাদের কোচিং স্টাফ যারা ছিলেন, তারা আমাদের সবার প্রশংসা করছেন। আফিফ অনেক ভালো ব্যাট করেছে। আফিফকে করেছেন (প্রশংসা), সোহান ভাইকে করেছেন এবং যারা ছোট ছোট অবদান রেখেছে, তাদেরকেও করেছেন।’
একদিন বিরতি দিয়ে আরব আমিরাতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি আজই। নিজের চাওয়ার পাশাপাশি সামনে তাকিয়ে দলের লক্ষ্যের কথাও জানালেন মিরাজ, ‘দেখুন, এখানে আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি। বিশ্বকাপের ভালো প্রস্তুতির জন্যই এখানে এসেছি। সবশেষ দুই-তিন দিন এখানে অনুশীলন করেছি, ম্যাচ খেলেছি। আমাদের যে ছোট ছোট সমস্যা ছিল বা ভুল ছিল, সেই ভুলের পরিমাণ যেন কমিয়ে নিয়ে আসি। সেটাই আমরা চেষ্টা করছি এবং পরের ম্যাচে প্রয়োগের চেষ্টা করব।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন