অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, স্বাধীনতার পর ৫১ বছরের যাত্রায় বাংলাদেশ কখনোই দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবি’র ক্রমবর্ধমান অর্থায়ন দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে মোট বকেয়া ১১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্ষমতার সাথে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে চলেছে। গতকাল ম্যানিলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সদর দফতরে বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে এডিবি’র প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম ঋণের দেশের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ, মাত্র ৩৪ শতাংশ।
বৈঠকের শুরুতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এডিবি বাংলাদেশের বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করায় অর্থমন্ত্রী আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত অভিঘাত কোভিড-১৯ উদ্ভ‚ত সঙ্কটে দ্রæত সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে এডিবি প্রেসিডেন্টের সক্রিয় এবং গতিশীল নেতৃত্বের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য সঙ্কট পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোকে দ্রæত ভ্যাকসিন ও ব্যয় সহায়তা দিয়ে সাহায্য করেছে এডিবি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাংলাদেশ-এডিবি কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি (২০২১-২০২৫), বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ও লক্ষ্যগুলোর সাথে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে, যা আগামী পাঁচ বছরে আমাদের জন্য ১২-১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহয়তার যোগান থাকবে বলে আশা করা যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সক্ষমতার ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মান বাংলাদেশের সক্ষমতার একটি প্রতীক। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের বিশেষ প্রসংশা করেন। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত ও আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপ এবং টিকা কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রতি এডিবি’র বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এবারের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে সেগুলোও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে এডিবি শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের পাশে সবসময় এডিবি থাকবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশের সক্ষমতা ও অগ্রগতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল আর্থ-সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। সা¤প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্ব স¤প্রদায়ের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি এবং বর্তমান ভ‚-রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে, খাদ্য, জ্বালানি, সার, এবং আর্থিক সঙ্কট বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছে এবং সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের এডিবি থেকে বাজেট সহায়তার পাশাপাশি নীতি ভিত্তিক ঋণ (পিবিএল) প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী এডিবি’র বিশেষ সহযোগিতা কামনা করেন এবং বাংলাদেশও এডিবি সদর দফতরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
এদিকে এডিবি’র সদর দফতরে বার্ষিক সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল’র সঙ্গে দেশ ফিলিপাইনের অর্থমন্ত্রী/প্রতিনিধিদলের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার আহŸান জানান অর্থমন্ত্রী।
বৈঠকে ফিলিপাইন দক্ষিণ-প‚র্ব এশিয়ার প্রথম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম যারা ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে দ্রæত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এছাড়াও, যারা জাতিসংঘের সাধারণ সভায় স্বাধীন বাংলাদেশের দ্রæত স্বীকৃতির এবং জাতিসংঘের সদস্যপদ নিশ্চিত করার সমর্থনের ক্ষেত্রে প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি ছিল উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী ফিলিপাইনের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে টোকিও থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ফিলিপাইনের বন্ধুপ্রতীম জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ম্যানিলা হয়ে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ এবং ২০০৪ সালে ফিলিপাইন সফর করেন এবং ১৯৯৭ সালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফিদেল রামোস বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা এখনও পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ এখন মাত্র ১০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দুই দেশের মধ্যে অবিলম্বে সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলি হতে পারে ওষুধ, কৃষি পণ্য, হালকা প্রকৌশল, পাট এবং পাটজাত পণ্য ইত্যাদি। উভয় পক্ষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা, নার্সিং এবং আইটি ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করে লাভবান হতে পারে। অভিবাসী কর্মীদের সহযোগিতা, উচ্চশিক্ষা, সামুদ্রিক সহযোগিতা ও কৃষি সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যৌথ কমিশন প্রতিষ্ঠা, মিডিয়া সহযোগিতা, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ বেশ কিছু সমঝোতা চুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও অর্থবহ এবং সারগর্ভ করার জন্য এগুলো চ‚ড়ান্তকরণের প্রতি অর্থমন্ত্রী জোর প্রদান করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন